১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

মানুষের সুবিধাভোগের জন্যেই সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া হয়েছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মানুষের সুবিধাভোগের জন্যেই সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া হয়েছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা - ছবি : নয়া দিগন্ত

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল অব: মো: জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, স্বাধারণ মানুষের সুবিধাভোগের জন্যেই সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪০তম বিসিএস (আনসার) ক্যাডার কর্মকর্তা ও ২৫তম ব্যাচ (পুরুষ) রিক্রুট সিপাহিদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, যেসকল পুলিশ সদস্য এখনো পর্যন্ত কাজে যোগদান করেননি লুকিয়ে রয়েছেন, তাদের আর যোগদান করতে দেয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তারা নিশ্চয়ই কোনো অপকর্মে জড়িত এ কারণে তারা কর্মে যোগদান করছে না।

তিনি আরো বলেন, এখনো কাজে যোগ দেয়নি এমন পুলিশের সংখ্যা খুবই নগণ্য। আমরা তাদের ব্যাপারে তথ্য অনুসন্ধান করছি। আপনারাও তাদের সম্পর্কে কোনো তথ্য থাকলে আমাদের জানাতে পারেন।

এছাড়াও তিনি বলেন, সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, সাধারণ মানুষের সুবিধাভোগের জন্যেই-এর সুফল দেশের জনগণই ভোগ করবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে সালাম গ্রহণ করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো: জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। এ সময় তার সাথে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন, আনসার ও গ্রাম প্রতরিক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ, বাহিনীর অতিরিক্ত মহাপরিচালক, আনসার ও ভিডিপি একাডেমির ভারপ্রাপ্ত কমান্ড্যান্ট, উপ মহাপরিচালকবৃন্দ, বাহিনীর পরিচালকবৃন্দসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধে আনসার বাহিনীর গৌরবদীপ্ত ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন এবং একইসাথে তিনি জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে স্বৈরাচার সরকার পতনে শহীদ সকল ছাত্র-জনতাকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন।

এ সময় তিনি বলেন,‘স্বৈরাচার সরকার পতনের পর যখন ট্রাফিক, বিমানবন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শূন্য হয়ে গিয়েছিল, তখন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জননিরাপত্তা বিধানে এগিয়ে এসেছে। বিশেষ করে আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নের সদস্যরা ডিএমপির থানাগুলোর অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে এবং হযরত শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লুট হওয়া অস্ত্রসমূহ উদ্ধারে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যগণ ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। জাতির জরুরি সময়ে এই বাহিনীর সাহসী অবদানের জন্য সকল পর্যায়ের সদস্যদের আমি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা সঙ্কটের সময়ে ভিডিপি সদস্যরা গ্রামে গ্রামে মন্দির, গির্জা পাহারা দিয়ে সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির যে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তার জন্য বিশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ছয়জন বিসিএস কর্মকর্তা ও ৯০৮ জন রিক্রুট সিপাহী সমাপনী কুচকাওয়াজের মাধ্যমে তাদের জন্য নির্ধারিত মৌলিক প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করলেন।

বিসিএস কর্মকর্তারা দীর্ঘ ১২ মাস মৌলিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন এবং একইসাথে মাস্টার্স অব হিউম্যান সিকিউরিটি (এমএইচএস) কোর্স সম্পন্ন করেছেন। অপরদিকে রিক্রুট সিপাহিরা ছয় মাসের মৌলিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী দেশের সর্ববৃহৎ, সুশৃঙ্খল ও জনসম্পৃক্ত বাহিনী। ১৯৪৮ সালে আনসার বাহিনী প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা রেখে আসছে। বাংলাদেশ সৃষ্টির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট থেকে শুরু করে স্বাধীনতার পরবর্তীতে দেশের প্রতিটি জরুরী মুহূর্তে এ বাহিনীর সদস্যগণ গভীর দেশপ্রেম নিয়ে এগিয়ে এসেছে এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ সামগ্রিক উন্নয়নে সবসময়ই কর্মদক্ষতা এবং সফলতার পরিচয় দিয়েছে। এরমধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৬টি ব্যাটালিয়নের ছয় হাজার ২৪৪ জন সদস্য দুর্গম এলাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ‘অপারেশন উত্তরণ’ এ কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া ৬০০ জন হিল আনসার ও সাত হাজার ৮৮৭ জন হিল ভিডিপি সদস্য পার্বত্য এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে অবদান রাখছেন। সেখানে দায়িত্ব পালনকালে সন্ত্রাসীদের সাথে সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত এ বাহিনীর ১৯ জন সদস্য শহীদ হয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement