২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

ইসলামী ব্যাংকে বৈষম্যের মুলোৎপাটনের দাবি পেশাদার ব্যাংকারদের

ইসলামী ব্যাংকে বৈষম্যের মুলোৎপাটনের দাবি পেশাদার ব্যাংকারদের - ফাইল ছবি

ফ্যাসিস্ট সরকারের ছত্রছায়ায় এস আলম ইসলামী ব্যাংকে কতৃত্ব প্রতিষ্ঠার পর অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। অনেককে অন্যায়ভাবে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

একইসাথে দলীয় বিবেচনায় নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের রাতারাতি পদোন্নতি দিয়ে ব্যাংককে একটি লুটেরা শ্রেণি তৈরি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

ফ্যাসিস্ট সরকারের রেখে যাওয়া ওইসব বৈষম্যের মুলোৎপাটনের দাবি অন্যায়ভাবে পদোন্নতি বঞ্চিত পেশাদার ব্যাংকারদের।

বগত ২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি হোটেল রেডিসনে আনুষ্ঠানিকভাবে ইসলামি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয় দেশের ব্যাংকিং জগতের ত্রাস এস আলম। যদিও ২০১৬ সালেই তিনি এ ব্যাংককে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। ওই বছর ব্যাংকটিতে নিজস্ব লোক নিয়োগ দিয়ে একটি মদতপুষ্ট গোষ্ঠী তৈরি করেন এবং রাতারাতি তাদের পদোন্নতি দিয়ে ব্যাংকলুট নির্বিঘ্ন করেন।

যোগ্য ও মেধাবীদের প্রতি অন্যায় বৈষম্য করে ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে ইচ্ছেমতো হাজার হাজার কর্মী নিয়োগ দিয়েছেন। তাদের প্রায় সবাইকে ২০১৬ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত নয় বছরে তিন থেকে চারটি বা ততোধিক স্পেশাল পদোন্নতি দিয়ে প্রধান কার্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পদায়ণ করা হয়েছে। যাতে নির্বিঘ্নে লুটতরাজ ও টাকা পাচার করা যায়।

অন্যদিকে অসংখ্য মেধাবী, যোগ্য ও দেশপ্রেমিক ব্যাংকারদের প্রতি অন্যায় বৈষম্য করে পদোন্নতি থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত করা হয়েছে অথবা কাউকে বড়জোর একটি পদোন্নতি দিয়েছে। এভাবে এস আলম দেশের সেরা ব্যাংকটিকে লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছিল। ফলে ব্যাংকটি দেশের সেরা ও পৃথিবীর হাজার ব্যাংকের মধ্যে অন্যতম ব্যাংকের গৌরব হারাতে বসেছিল।

গত ৫ আগস্টের বিজয়ের পর বৈষম্যের শিকার ব্যাংকারগণ নয়া ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কাছে সার্বিক অবস্থা বিবেচনাপূর্বক বৈষম্য নিরসনের যৌক্তিক দাবি তুলে ধরেন। এদিকে তাদের সাথে তাল মিলিয়ে এস আলমের সুবিধাভোগী দুইটির অধিক পদোন্নতিপ্রাপ্তরা নিজেদের মুখোস পাল্টে বর্তমান কর্তৃপক্ষকে বিভ্রান্ত করে আবারো পদোন্নতি ভাগিয়ে নিয়েছেন। এতে কর্তৃপক্ষও বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন। বৈষম্যের শিকার ব্যাংকারদের পাঁচটি দাবি ছিল। কিন্তু পতিত স্বৈরশাসকের সুবিধাভোগীদের দৌরাত্ম্যে শুধু পদোন্নতির ক্ষেত্রে বৈষম্য নিরসন প্রাধান্য পায়। তাদের অন্যতম দাবি ছিল, ব্যাংকিং ডিপ্লোমা ডিগ্রি নিয়ে। চলতি বছর জানুয়ারির আগে কখনই পদোন্নতির ক্ষেত্রে এই ডিগ্রি বাধ্যতামূলক ছিল না। কিন্তু দেশপ্রেমিক, আমানতদারী ও পেশাদার ব্যাংকারদের উচ্চতর পদে পদায়ন ঠেকাতে গত ১ জানুয়ারি থেকে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ব্যাংকিং ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জনকে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সার্কুলারে বাধ্যতামূলক করা হয়। ব্যাংকলুটেরা দ্বারা প্রভাবিত হয়েই বিতর্কিত ওই সার্কুলার জারি করা হয় বলে পেশাদার ব্যাংকারদের অভিমত। তাদের দাবি, বিতর্কিত ওই সার্কুলার ও নানা বৈষম্যের কারণেই লুটেরাদের অসৎ উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক শুধু লুটেরাদের অন্যায় হুকুম তামিল করেছে। পেশাদার ব্যাংকাররা ডিপ্লোমা ডিগ্রির পক্ষে থাকলেও তারা পদোন্নতির ক্ষেত্রে এই ডিগ্রি অর্জনে বাধ্যবাধকতার পক্ষে নন।

বৈষম্যের শিকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি, ২০১৬-২৪ সালে নয় বছরে সম্পূর্ণরূপে পদোন্নতি বঞ্চিতগণ শতভাগ এবং একটিমাত্র পদোন্নতি প্রাপ্তগণ নববইভাগ বৈষম্যের শিকার। তাদের এ বৈষম্য লাঘবে প্রথমে একটি প্রমোশন এবং ডিপ্লোমা ও অন্য যোগ্যতা বিবেচনায় অধিকতর যোগ্যদের আরেকটিসহ মোট দুটি প্রমোশন দেয়া হোক। যারা দুটি প্রমোশন পেয়েছেন, তাদেরও বৈষম্যের শিকার ধরে ডিপ্লোমা ও অন্য যোগ্যতা বিবেচনায় একটি প্রমোশন দেয়া হোক। যারা লুটেরাদের আশির্বাদে দুয়ের অধিক প্রমোশন পেয়েছেন তাদের ডিমোশন দেয়া হোক। আর দেশের মেধাবী ছাত্রজনতার প্রতি বৈষম্য করে বিনা পরীক্ষায় অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছাঁটাই বা যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হোক। বিগত স্বৈরশাসকের সময় ইসলামী ব্যাংকে বৈষম্যের বিষয়টি দিবালোকের মতো পরিষ্কার ছিল। লুটেরাদের ভয়ে ভীত না হয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের রেখে যাওয়া ওই সব বৈষম্যের মুলোৎপাটনের দাবি পেশাদার ব্যাংকারদের। এ ব্যাপারে তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বরাবর আবেদনও করেছেন। এ বিষয়ে ব্যাংকিং রেগুলেশন অ্যান্ড পলিসি ডিপার্টমেন্টের পরিচালক মুহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকীর বক্তব্য জানার জন্য চেষ্টা করা হলে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।


আরো সংবাদ



premium cement