১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

ছাত্র আন্দোলনে নিহত সজিবের পরিবারের কেউ খোঁজ নেননি

ছাত্র আন্দোলনে নিহত সজিবের পরিবারের কেউ খোঁজ নেননি - ছবি : নয়া দিগন্ত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত সজিবের পরিবারের খোঁজ-খবর নেননি কেউ। বাবা আসবে এমন অপেক্ষায় প্রতিদিন পথ চেয়ে থাকে সজিবের তিন বছরের ছেলে আব্দুর রহমান।

কেউ দরজায় কড়া নাড়লেই মাকে বলে বাবা আসছে, দরজা খুলে দাও। মা দরজা খুলতেই বাবাকে না দেখে মন খারাপ করে থাকে সে। মাকে বলে, বাবা কোথায় গেছে? এ সময় অসহায় সজিবের স্ত্রী সন্তানদেরকে বিভিন্ন কৌশলে শান্তনা দিয়ে যান।

আব্দুর রহমানের বাবা সজিব হাওলাদার জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে নিখোঁজ হন। পরে তার লাশ পাওয়া যায় নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে। নিহত হওয়ার পর থেকে এখনো সজিব হাওলাদারের অবুঝ সন্তান ও পরিবারের খোঁজ-খরব নেননি কেউ।

মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার চরকুমারিয়া ইউনিয়নের মাঝিকান্দি গ্রামে সজিবের পরিবারের সাথে কথা বলে এসব জানা যায়।

সজিবের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সজিব হাওলাদার নজরুল হাওলাদারের দ্বিতীয় স্ত্রী রেহানা বেগমের ঘরে জন্ম নেয়। জন্মের পরেই পারিবারিক কলহে রেহানা শিশু সজিবকে রেখে অন্যত্র চলে যান। এরপর নজরুল হাওলাদারের প্রথম স্ত্রী সেলিনা বেগম সজিবকে সন্তানের মতো লালন-পালন করে বড় করেন। পরে সজিবকে ভর্তি করান স্কুলে।

কিন্তু, পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনার পরে সজিব পালিয়ে ঢাকায় গিয়ে খাবার হোটেলে কাজ নেয়। সেখানেই বেড়ে ওঠা তার। ২০১৭ সালে চাঁদপুর জেলার হাইমচর ভৈরবী গ্রামের হযরত আলীর মেয়ে রাবেয়াকে বিয়ে করেন। বিয়ের পরে হোটেলের কাজ ছেড়ে যাত্রাবাড়ি এলাকায় ভ্রাম্যমাণ চা বিক্রির পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যবসা শুরু করেন। ইতোমধ্যে সজিব ও রাবেয়ার সংসার আলোকিত করে জন্ম নেয় আব্দুর রহমান (৩) ও আহাদ (১১ মাস) নামে দু’সন্তান। স্ত্রী, সন্তান ও দুধ মা সেলিনাকে নিয়ে বেশ ভালোই কাটছিল সজিবের সংসার।

সজিব ঢাকার ডেমরা থানার মিরপাড়া স্টাফ কলোনিতে মারিয়া কমিউনিটি সেন্টারের ছয় তলায় ভাড়া থাকতেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সরকার পতনের এক দফা দাবি তখন চূড়ান্ত রূপ নেয়। এ সময় সজিব আন্দোলনের সমর্থনে কাজের ফাঁকে কর্মসূচিতে যোগ দেন। চা বিক্রির ফাঁকে আন্দোলরত ছাত্র-জনতার মধ্যে পানি, চা ও বিস্কুট বিতরণ করেন সজিব। সজিবের বড় ভাই রানাও মিরপুরের একটি কলেজের ছাত্র হিসেবে প্রতিদিন আন্দোলনে যোগ দিতেন। ৫ আগস্ট বেলা ১১টা পর্যন্ত সজিবকে আন্দোলনকারীদের সহযোগিতা করতে দেখা যায়।

এরপর তিনি নিখোঁজ হলে অনেক খোঁজাখুঁজি করে কোনো সন্ধান পায়নি পরিবারের সদস্যরা। স্থানীয়দের সহযোগিতায় নিখোঁজের ১০ দিন পরে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে সজিবের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে সোনারগাঁও থানা পুলিশ। প্যান্টের পকেটে থাকা একটি মোবাইল থেকে সজিবের পরিবারকে খুঁজে বের করে পুলিশ। পরে তাকে শরীয়তপুরের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন করা হয়।

সজিবের পরিবারের দাবি, আন্দোলনের শেষ দিন সজিব পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার পর তাকে নদীতে ফেলে দেয়া হয়। এরপর থেকে অসহায় দু’সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতে মা রেহানা বেগমকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কিন্তু এখনো সরকার বা কোনো প্রতিষ্ঠান সজিবের পরিবারের খোঁজ নেননি।

সজিবের ভাই রানা হাওলাদার বলেন, আমিও আন্দোলনে ছিলাম। নিখোঁজের তিন দিন আগে মায়ের সাথে কথা হয়েছে বাড়িতে যাব। কিন্তু আর আসা হয়নি। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার পরে আমরা সজিবকে অনেক খোঁজাখুঁজি করে কোথাও পাইনি। নিখোঁজের ১০ দিন পরে নারায়ণগঞ্জে তার লাশ পেয়েছি। আমার ভাইয়ের ফুটফুটে সন্তান দু’টিকে নিয়ে হতাশায় ভুগছে পরিবার। কেউ আমাদের কোনো খবর নেননি। সরকার বা কোনো প্রতিষ্ঠান অবুঝ এই বাচ্চা দু’টির মুখের খাবার ও পড়াশোনার দায়িত্ব নিলে তাদের ভবিষ্যত অন্ধকার হবে না।

সজিবের স্ত্রী রাবেয়া বেগম বলেন, ‘বর্তমানে আমার মায়ের আয় থেকে দু’সন্তান নিয়ে কোনোরকম দিন পার করছি। আপনারা জানেন একজন চা বিক্রেতার কী পুঁজি থাকে। আমার পরিবারও গরিব। এখনো আমার মা প্রতিদিন কাজ না করলে না খেয়ে থাকতে হয়। ওদের যে বয়স তাতে রেখে তো কাজে যাওয়া সম্ভব হয় না। এখন ওদের খাবারসহ অন্য খরচ চালাতে পারি না। যদি সরকার বা কেউ আমার এতিম দু’টি বাচ্চার দায়িত্ব নিত তাহলে সজিবের স্বপ্ন পূরণ হতো। দেশের মানুষের স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে আমার স্বামী দু’সন্তানকে এতিম করেছে। আমি চাই এতিম দু’টি বাচ্চার দায়িত্ব নিয়ে আমার স্বামীর স্বপ্ন পূরণ করে দেবে দেশের সরকার ও মানুষ। এছাড়া আর কোনো চাওয়া নেই।’

সজিবের মা সেলিনা বেগম বলেন, ‘আমার সজিব ১০ থেকে ১৫ দিন পর পর আমাকে দেখতে আসত। আমার খরচ দিতো, খবর নিতো। আমার ফুটফুটে দু’টি নাতি। অনেক স্বপ্ন ছিল আমার বাবার। কিন্তু বাবা এখন আমার কবরে শুয়ে আছে। কে দেখবে আমার নাতিদের, কে নিবে আমার খবর? কার কাছে বলব আমি দুঃখের কথা? আমার সব শেষ হয়ে গেলো। আমি দাবি জানাই, সরকার বা কেউ আমার নাতি ও বউয়ের দায়িত্ব নিবে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কেউ উঁকি দিয়েও খবর নিলো না। আামরা গরিব মানুষ, কেউ কি আসবে আমাদের খবর নিতে? কেউ কি সজিবের সন্তানদের কোলে নিয়ে আদর করার দায়িত্ব নিবে?’

চরকুমারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আয়েশা বেগম বলেন, ‘সজিব হাওলাদার অত্যন্ত গরিব পরিবারের সন্তান। ছোট বেলায় সে মাকে হারিয়েছে। ঢাকায় চা বিক্রি করে সংসার চালাত। তার দু’টি সন্তান আছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সজিব ঢাকায় নিহত হয়। তাকে গত মাসে শরীয়তপুরের গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে।’


আরো সংবাদ



premium cement
ব্যাংকিং সেক্টর রিফর্মে বাংলাদেশকে সহায়তা করবে বিশ্বব্যাংক : অর্থ উপদেষ্টা ঢাবি ও জাবিতে গণপিটুনিতে হত্যা প্রসঙ্গে যা বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পাকুন্দিয়ায় মাদরাসাছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় ছাত্রীর মাকে মারধর সুশীলতার আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছে বিপ্লবের মূল্যবোধ বেক্সিমকো গ্রুপের সম্পত্তি দেখভালে রিসিভার নিয়োগের আদেশ সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দেয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বললেন মির্জা ফখরুল খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন : ডা. জাহিদ মহাদেবপুরে স্বামীর লাঠির আঘাতে স্ত্রীর মৃত্যুর অভিযোগ এক বছরের মধ্যে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ছাড়ো : ইসরাইলকে জাতিসঙ্ঘ হাত-পা-মুখ বাঁধা অবস্থায় বালুচর থেকে আহত স্কুলছাত্র উদ্ধার ঢাবি ও জাবিতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ছাত্রশিবিরের নিন্দা ও প্রতিবাদ

সকল