১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

কুলিয়ারচরে ‘জশনে জুলুস’ মিছিল থেকে মসজিদে হামলা, নিহত ১

প্রতিবাদে মাজার ও দোকানপাট ভাংচুর
হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত মসজিদ, বাড়ি এবং (ইনসেটে) নিহত মীর আরিফ মিলন - ছবি : নয়া দিগন্ত

ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে আয়োজিত জশনে জুলুস মিছিলকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর। এ নিয়ে দ্বন্দ্বে মসজিদে হামলা এবং একজনকে হত্যার পর এর প্রতিবাদে মাজার, দোকানপাট ও কয়েকজনের বাড়িতে হামলা করা হয়েছে।

নিহত ব্যক্তি মো: মীর আরিফ মিলন (৫২) উপজেলার ছয়সূতী গ্রামের মৃত মীর জাবু মিয়ার ছেলে। তিনি স্থানীয় ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির সদস্য ছিলেন।

সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টার দিকে ছয়সূতী বাসস্ট্যান্ড কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে হামলা ফিরাতে গিয়ে হামলার শিকার হয়ে গুরুতর আহত হন মিলন। পরে স্থানীয়রা তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ভাগলপুর জহুরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার ভাই আলফাজ মিয়া ও ছোট বোন আছমা আক্তার।

মসজিদে হামলার ঘটনার পর স্থানীয় প্রতাপনাথ বাজার সংলগ্ন সৈয়দ আবু মোহাম্মদ মঞ্জুরুল হামিদ (রহ.) মাজার ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে মাজারভক্ত মো: রইছ মিয়া ও মো: সেলিম মিয়াকে মারধর করে একদল লোক। এসময় তারা প্রতাপনাথ বাজারের বেশ কয়েকটি দোকান ভাংচুর ও লুটপাট করে এবং দোকানদার মো: রিয়াজ উদ্দিন, বাবু মিয়া, রুপবানু ও কাঞ্চন মিয়াকে মারধর করে।

জানা যায়, পূর্বনির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী সোমবার সকাল ১০টার দিকে সৈয়দ আবু মোহাম্মদ মঞ্জুরুল হামিদের (রহ.) ছয়সূতী গাউছিয়া দরবার শরীফ থেকে ১২ই রবিউল আউয়াল ঈদে মিল্লাদুন্নবীর জশনে জুলুসের মিছিল বের করে মাধবদী হয়ে ছয়সূতী বাসস্ট্যান্ডের দিকে আসার পথে পুলিশ ও সেনাবাহিনী তাদের বাধা দেয়। এসময় জশনে জুলুসের কিছু লোক পুলিশ ও সেনাবাহিনীর বাধা অতিক্রম করে ছয়সূতী বাসস্ট্যান্ড কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে আক্রমণ করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে মসজিদ ভাংচুর করে। এসময় বাধা দিতে গেলে হামলাকারীরা মো: মীর আরিফ মিলনের উপর হামলা করে। এসময় ইটপাটকেলের আঘাতে ছয়সূতী খাদেমুল ইসলাম হোসাইনিয়া হাফিজিয়া মাদরাসার দুই ছাত্র আহত হয়।

ঘটনারপর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ বিকেলে এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত এলাকায় অসংখ্য সেনাবাহিনীর সদস্য ও পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

এদিকে, বেলা ২টার দিকে ছয়সূতী খাদেমুল ইসলাম হোসাইনিয়া হাফিজিয়া মাদরাসা চত্বরে উপজেলা ইমাম উলামা পরিষদের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জামিয়া নূরুল উলুম কুলিয়ারচর মাদরাসার প্রধান মোহাদ্দেস মুফতি মাওলানা নাসির উদ্দিন রহমানী লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘ইমাম উলামা পরিষদ কুলিয়ারচর প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও সীরাত সম্মেলন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয়। অপরদিকে ভণ্ড-বেদাতিরা জশনে জুলুসের নামে আমাদের অনুষ্ঠান মসজিদ সংলগ্ন রাস্তায় মিছিল করতে চায়। এমতাবস্থায় ইউএনও ও কুলিয়ারচর থানার ওসি সাহেব আমাদেরকে নিশ্চিত করেন যে, কোনো অবস্থাতে জশনে জুলুস নিয়ে আমাদের মসজিদ সংলগ্ন রাস্তায় আসতে দিবে না। সেইসাথে তাদেরকে বিকল্প রোডম্যাপ দেয়া হয় এবং আমাদের সকালের কর্মসূচি স্থগিত করার নির্দেশ দেন।

আমরা ওসি সাহেবের কথায় সম্মেলন স্থগিত করি। কিন্তু উগ্রপন্থী বেদাতিরা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে মসজিদের সামনে এসে মসজিদকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে আমাদের মসজিদে ব্যাপক ভাংচুর করে। ইট-পাটকেলের আঘাতে আমাদের মাদরাসার দুইজন ছাত্র আহত হয়। তাদেরকে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছ। বাধা দিতে গেলে মসজিদের মুসল্লী আমাদের মিলন ভাইকে নির্মমভাবে মারধর করে হত্যা করে তারা।

আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এর সাথে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।’

এসময় তারা আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ছয়সূতী বাসস্ট্যান্ডে প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিল করার ঘোষণা দেন এবং ‘কুখ্যাত ভণ্ড বেদাতি’ বক্তা গিয়াস উদ্দীন তাহেরীকে ছয়সূতীর মাটিতে তথা কিশোরগঞ্জ জেলায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।

এসময় উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা কুলিয়ারচর ইমাম উলামা পরিষদের সদস্যদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে লংমার্চ টু ছয়সূতী ঘোষণা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বাজিতপুর উপজেলা ইমাম উলামা পরিষদের সভাপতি সায়কুল হাদিস আব্দুল আহাদ সাবের, বেতিয়ারকান্দি মাদরাসার ভাইস প্রিন্সিপাল মুফতি ওবায়দুল্লাহ আনোয়ার, উপজেলা ইমাম উলামা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোহাদ্দেস মাওলানা আসাদুল্লাহ, ছয়সূতী খাদেমুল ইসলাম হোসাইনিয়া হাফিজিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল হাফেজ মো: হানিফ, উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সদস্য আব্দুল হাসিব, ফয়সাল আহমেদ রাজিব, ফয়সাল আহমেদ তুহিন, ফাহিম, মাজেদুল ইসলাম সিফাত ও আহমেদ সিফাত প্রমুখ।

সংবাদ পেয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বিপিএম (সেবা), মেজর নূর ইমতিয়াজ মাহমুদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এডমিন) মো: মোস্তাক সরকার, কুলিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাবিহা ফাতেমাতুজ-জোহরা, ভৈরব সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো: দেলোয়ার হোসেন খান ও কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: সারোয়ার জাহান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাবিহা ফাতেমাতুজ-জোহরা ও কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: সারোয়ার জাহান বলেন, এ ঘটনা সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজায় আসলে কী হয়েছিল? মেয়াদবিহীন ইন্টারনেট প্যাকেজ চালু করুন : তথ্য উপদেষ্টা বহিরাগতমুক্ত ক্যাম্পাস গড়তে ঢাবিতে নামবে ‘মোবাইল কোর্ট’ পাকিস্তান-বাংলাদেশ সম্পর্কোন্নয়ন প্রচেষ্টায় নজর ভারতের এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে রিট নাটোরে গৃহবধূকে গণধর্ষণের অভিযোগে যুবদল নেতাসহ গ্রেফতার ৬ বহিরাগতমুক্ত ক্যাম্পাস গড়তে ঢাবিতে নামবে ‘মোবাইল কোর্ট’ ভিসা সমস্যার সমাধানে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা মার্চেন্ট শিপিং ফেডারেশনের শহীদ পরিবার পাচ্ছে ৫ লাখ, আহতরা সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা রাজশাহীতে শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হলেন অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম

সকল