পাকুন্দিয়ায় নিখোঁজের ৩২ বছর পর বাড়ি ফিরলেন মুর্শিদ
- পাকুন্দিয়া (কিশোরগঞ্জ) সংবাদদাতা
- ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০:২৩
বউয়ের সাথে অভিমান করে বাড়ি ছাড়েন। এরপর কেটে যায় বহু সময়। পার হয় দিন-মাস-বছর। এভাবে প্রায় ৩২ বছর অতিবাহিত হয়।
সম্প্রতি ফেসবুকের এক পোস্টের মাধ্যমে তাকে চিনতে পারেন বাড়ির লোকজন। অবশেষে প্রশাসনের সহায়তায় বাড়ি ফিরেন ওই ব্যক্তি।
এটি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার দক্ষিণ চরটেকী গ্রামের ঘটনা। বাড়ি ফেরা ওই ব্যক্তির নাম মো: মুর্শিদ মিয়া (৭০)। তিনি ওই গ্রামের মরহুম শাহিদ ব্যাপারির ছেলে।
রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পাকুন্দিয়া থানা প্রশাসনের সহযোগিতায় বাড়ির লোকজন তাকে নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলা থেকে উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে যান।
পাকুন্দিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: আসাদুজ্জামান টিটুর (পিপিএম-সেবা) এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে বিষয়টি জানাজানি হয়।
পাকুন্দিয়া থানার ওসি (তদন্ত) মো: মোবারক হোসেন বলেন, আমার বাড়ি নরসিংদী জেলার বেলার উপজেলার ধুকুন্দি গ্রামে। আমাদের গ্রামের সাহাজ উদ্দিন মাস্টারের বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকের কাজ করতেন মুর্শিদ মিয়া। গত কয়েক মাস ধরে কিছুটা বয়োবৃদ্ধ ও শারীরিকভাবে অসুস্থ্য হয়ে পড়েন মুর্শিদ। তার মধ্যে নিজের বাড়িতে ফেরার ইচ্ছে জাগে। সে তার বাড়ি পাকুন্দিয়া উপজেলায় জানালে আমি খোঁজখবর নিতে থাকি। একপর্যায়ে কিছুদিন আগে ধুকুন্দি গ্রামের একজন ফেসবুকে মুর্শিদ মিয়াকে নিয়ে পোস্ট করেন। এর কল্যাণে মুর্শিদ মিয়ার স্বজনরা তাকে চিনতে পারেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে রোববার (৮সেপ্টেম্বর) মুর্শিদের ভাতিজাসহ বেশ কয়েকজন সেখানে গিয়ে তাকে নিয়ে আসেন।
ওসি মোবারক হোসেন আরো জানান, সেখানে তিনি শ্রমিকের কাজ করতেন। তা থেকে জমানো চার লক্ষ ৫০ হাজার টাকা কিছুদিন আগে পাশের গ্রামের একটি মসজিদে দান করে মহানুভবতার পরিচয় দেন। বয়োবৃদ্ধ মুর্শিদ মিয়ার জন্য সকলে দোয়া করবেন। যেন জীবনের শেষ সময়টা ভালো কাটাতে পারেন।
স্বজন ও স্থানীয়রা জানান, প্রায় ৩২ বছর আগে বউয়ের সাথে পারিবারিক বিষয়ে অভিমান করেন মুর্শিদ মিয়া। এরপর অভিমানে বাড়ি ছাড়েন। বাড়ির লোকজন বহু খোঁজাখুজি করেও তার কোনো খোঁজ পায়নি। একপর্যায়ে বাড়ির লোকজন তাকে পাওয়ার আশা ছেড়ে দেন। ছেড়ে যান স্ত্রীও। এরপর কেটে যায় বহু দিন-মাস-বছর। সম্প্রতি নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলার এক ব্যক্তি ফেসবুকে মুর্শিদ নিয়াকে নিয়ে পোস্ট করেন। যা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে পোস্টটি নজরে পড়ে মুর্শিদের নিজ বাড়ি উপজেলার দক্ষিণ চরটেকী গ্রামের কয়েকজনের। পরে যোগাযোগ করা হয় পোস্ট দাতা ব্যক্তির সাথে। এভাবে প্রায় ৩২ বছর পর নিখোঁজ মুর্শিদ মিয়ার সন্ধান পান তার স্বজনরা। অবশেষে রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) মুর্শিদ মিয়ার ভাতিজা আবদুল হাকিমসহ কয়েকজন গিয়ে তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনেন।
ভাতিজা আবদুল হাকিম বলেন, দীর্ঘদিন পর চাচাকে ফিরে পেয়ে আমরা আনন্দিত। চাচার বউ-সন্তান কেউ নেই। রয়েছে অনেক জমাজমি। যা আমার বড় চাচা ভোগ করছেন। মুর্শিদ চাচা যাতে জীবনের শেষ সময়টা ভালো করে কাটাতে পারেন আমরা সেই চেষ্টা করছি।
পাকুন্দিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আসাদুজ্জামান টিটু (পিপিএম-সেবা) বলেন, ফেসবুকের কল্যাণে নিখোঁজের ৩২ বছর পর নিজ বাড়িতে ফিরে এসেছেন মুর্শিদ মিয়া। আজ রোববার দুপুরে তিনি বাড়ি ফিরেন।