০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ২ রবিউস সানি ১৪৪৬
`
বিস্ফোরক তথ্য জানালেন জেলা প্রশাসক

ফরিদপুরে পর্দাকাণ্ডের হাসপাতালে একের পর এক অগ্নিকাণ্ড! কারা জড়িত?

ফরিদপুরে পর্দাকাণ্ডের হাসপাতালে একের পর এক অগ্নিকাণ্ড! কারা জড়িত? - ছবি : নয়া দিগন্ত

৩৭ লাখ টাকার পর্দা কেলেঙ্কারিতে দেশব্যাপী হৈচৈ ফেলে দেয়া ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ (বিএসএমএমসি) হাসপাতালের স্টোররুমসহ বিভিন্ন কক্ষে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের প্রত্যেকটিই মানবসৃষ্ট। এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পেছনে নাশকতার কোনো কারণ থাকতে পারে না।

দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান এই বিএসএমএমসি হাসপাতাল নিয়ে এবার এমনই বিস্ফোরক তথ্য জানালেন খোদ ডিসি। আর রহস্য আরো ঘনীভূত হলো যখন তিনি বললেন, ৫৪ দিনের ব্যবধানে সংঘটিত তিনটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার একটিতেও থানায় কোনো জিডি বা মামলা করা হয়নি।

সম্প্রতি হাসপাতালটিকে রাসেল ভাইপার সাপে কাটা একজন রোগীর বিষয়ে তথ্য সংগ্রহে যেয়ে লাঞ্ছিত হন ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির ফরিদপুর প্রতিনিধির ক্যামেরাপারসন নয়ন। এর প্রতিবাদ জানাতে শনিবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেয় ফরিদপুর প্রেসক্লাব। এ সময় জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার এ তথ্য জানান সাংবাদিকদের।

গত ১৬ মে হাসপাতালের স্টোররুমে আগুন লাগে। সকাল পৌনে ৯টার দিকে হাসপাতালটির নতুন ভবনের দ্বিতীয় তলার পশ্চিম পাশে অবস্থিত ভাণ্ডারকক্ষে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। কক্ষটি গ্রিল ও থাই গ্লাস দিয়ে সুরক্ষিত। অগ্নিকাণ্ডের সময় তিন হাজার ৬০০ বর্গফুটের ওই কক্ষটি বাইরে থেকে তালাবদ্ধ ছিল। আগুনে ওই কক্ষে থাকা যন্ত্রপাতি, ওষুধ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পুড়ে যায়। পরে ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা গিয়ে আগুন নেভান। তার আগে গত ২২ মার্চ প্রথম দফায় হাসপাতালের মর্গে আগুন লাগে। মর্গে লাশ ছিল এবং মর্গটির মূল ফটক বাইরে থেকে বন্ধ ছিল। কক্ষটিতে কোনো বৈদ্যুতিক সংযোগ ছিল না। এর নয় দিন পর দ্বিতীয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে হাসপাতালের নয় তলা (নতুন ভবন) ভবনের ষষ্ঠ তলায়।

এসব অগ্নিকাণ্ডের পর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকীকে প্রধান করে সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি, ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের প্রতিনিধি, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, স্বাস্থ্য ও প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী ও ফরিদপুর দমকল বাহিনীর সহকারী পরিচালক।

তদন্ত কমিটির অনুসন্ধানে এসব অগ্নিকাণ্ড মানবসৃষ্ট বলে প্রতিয়মান হয়। জেলা প্রশাসক বলেন, ওই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট কেবিনেটে পাঠানো হয়েছে। কেবিনেট বা মন্ত্রণালয় এগুলো যাচাই-বাছাই করে আরো বিশদ তদন্তের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে টিম আসবে বলে আশা করছি। হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি করতে হলে বিশেষ করে ইন্টার্নি চিকিৎসকদের ব্যবহার আরো ভালো হওয়া উচিত বলে মনে করেন জেলা প্রশাসক।

ফরিদপুর শহরের পশ্চিম খাবাসপুর মহল্লায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পূর্ব পাশে ১৯৯১ সালে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ স্থাপিত হয়। ২০১২-১৩ অর্থবছরে শয্যা বাড়িয়ে ৫০০ তে উন্নীত করা হয়। এরপর ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাম পরিবর্তন করে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ফরিদপুর’ নামকরণ করে সরকার। ২০২৩ সালের ১৭ মে জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপনে এই হাসপাতালকে ৫০০ শয্যা থেকে এক হাজার শয্যায় উন্নীত করা হয়।

ফরিদপুরের বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও আশপাশের জেলা মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, নড়াইল, মাগুরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া ও রাজবাড়ীর রোগীরা নিয়মিত চিকিৎসা নিতে আসেন এখানে। প্রতিদিন গড়ে এক হাজারের বেশি রোগী ভর্তি ও দুটি বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে দুই হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসা নেন। হাসপাতালটিতে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে মূল্যবান এমআরআই মেশিন, সিটি স্ক্যান মেশিন, এন্ডোস্কপি, কোলনোস্কপি, এনজিওগ্রামের মতো মেশিন স্থাপন করা হলেও এসব অকেজো পড়ে আছে। এমনকি সামান্য এক্সরে মেশিনটিও এক্সর রিল না থাকার অজুহাতে অধিকাংশ সময় অকেজো করে রাখা হয়। এতে দিনে দিনে ফুলেফেঁপে উঠছে প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবসা।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, বিএসএমএমসি হাসপাতাল পরিচালনার ক্ষেত্রে বিরাট সমন্বয়হীনতা রয়েছে। এবিষয়টিও আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। এখানে সেবার মান বৃদ্ধির জন্য যারা ডাক্তার আছেন দ্বায়িত্বরত তাদের আচরণ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌছানোর জন্য যদি প্রশিক্ষণসহ অন্য কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন হয় সেটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিবে। আমি স্বাস্থ্য সচিব স্যারের সাথে কথা বলে এই হাসপাতালটি পরিদর্শনের অনুরোধ জানাব। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন আমাদের মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়। আমি স্যারকেও অনুরোধ করব তিনি যেনো দ্রুত একটি সভা করে এই হাসপাতালে যতো অনিয়ম বা সেবা বঞ্চিতের বিষয় আছে সেগুলো দূর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।


আরো সংবাদ



premium cement
ভালুকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ছেলের মৃত্যু, বাঁচাতে গিয়ে মা আহত হাতিয়ায় জামায়াতে ইসলামীর ব্যবসায়ী সমাবেশ সুইডিশ, নরওয়ে ও ডেনিশ রাষ্ট্রদূতের সাথে বিএনপির বৈঠক সিলেটে ১২ লাখ টাকার ভারতীয় ক্রিম আটক রংপুরে ১০ দফা দাবিতে ঘণ্টাব্যাপী শিক্ষার্থীদের রেললাইন অবরোধ ছাত্র-জনতার ওপর প্রাণঘাতী গুলি ব্যবহার করা হয়নি : র‌্যাব বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় গ্রাহক জেল হাজতে শেরপুর-ময়মনসিংহে বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে স্ত্রীসহ এনএসআইয়ের সাবেক ডিজির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রহমানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা পূর্বাঞ্চলে বন্যায় ক্ষতি ১৪ হাজার কোটি টাকা : সিপিডি

সকল