নার্সারি ভাগ্য বদলে দিলো আলামিনের
- জাহাঙ্গীর আলম, হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ)
- ০৬ জুলাই ২০২৪, ১০:৫৮, আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৪, ১১:০৮
ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি নার্সারি করার স্বপ্ন দেখতেন মো: আলামিন। সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন তিনি, যা তার ভাগ্য বদলে দিয়েছে।
আলামিনের বাড়ি উপজেলার জিনারী ইউনিয়নের বীর হাজীপুর গ্রামে।
২০১৬ সালে মাত্র ১০ শতাংশ জমিতে ২৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে নিজের নামেই প্রতিষ্ঠা করেন ‘আলামিন নার্সারি’। এরপর আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ওই নার্সারির আয় দিয়েই নির্মাণ করেছেন সৌখিন বাড়ি, কিনছেন মোটরবাইক, দামী আসবাবপত্রসহ আরো অনেককিছু।
আলামিনের প্রতিবেশী মো: সামসুল হক জানান, ছোটবেলা থেকেই গাছের চারা রোপণের প্রচণ্ড নেশা ছিল তার। কোথাও কোনো গাছের চারা পেলে সেটি পরম যত্নে রোপণ করতেন বাড়ির আঙিনায়, রাস্তার ধারে কিংবা ক্ষেতের আইলে। প্রথমে ছোট পরিসরে শুরু করেন বিভিন্ন ফলদ গাছের চারা উৎপাদন নার্সারি। পরে বিভিন্ন স্থান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে গাছের চারা উৎপাদন, রোপণ ও পরিচর্যা পদ্ধতি আয়ত্ব করেন তিনি। এভাবে মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে ২০১৮ সালে উপজেলার বীর হাজিপুর এলাকায় দেড় একর জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা উৎপাদন করে বড় পরিসরে প্রতিষ্ঠিত করেন নার্সারির ব্যবসা। খুব অল্প সময়েই সব খরচাদি বাদে নার্সারি ব্যবসায় লাভের মুখ দেখতে পান তিনি। এরপর ধীরে ধীরে নার্সারিতে গাছের প্রজাতির সংখ্যা ও পরিধি বাড়াতে থাকেন আলামিন। ফলে তার নার্সারির সুনাম ছড়িয়ে পড়তে থাকে চারদিকে। তার নার্সারির প্রতিটি গাছের চারার গুনগত মান ভালো হওয়ায় দূর-দূরান্ত থেকেও গাছের চারা কিনতে আসছেন অনেকেই। বর্তমানে এটি ভ্রমনপিপাসুদের জন্য গ্রামীণ জনপদে ব্যাতিক্রমী বিনোদন কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছে। সেখানে কেউ আসছেন গাছের চারা কিনতে, আবার অনেকেই আসছেন দৃষ্টিনন্দন আলামিনের নার্সারিটি একনজরে ঘুরে দেখতে। এভাবে দিনে দিনে আলামিনের ওই শখের নার্সারি এখন সারা উপজেলায় বাণ্যিজ্যিক চারা উৎপাদন ও বিপণনের বৃহৎতম কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। আর ওই নার্সারির চারা বিক্রির আয় দিয়েই আলামিন নিজের ভাগ্য বদলের পাশাপাশি সবার মাঝে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
ওই নার্সারিতে এখন অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে। তার দেখা দেখি আশপাশের অনেক বেকার যুবক বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক ওই নার্সারি স্থাপনে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
মো: আলামিন জানান, তার নিজ হাতে গড়া নার্সারিতে ফলদ,বনজ ও ঔষধিসহ প্রায় ৪০ প্রজাতির গাছের চারার পাশাপাশি ভিয়েতনাম ও বার্মার উফসি জাতের নারিকেল এবং সুপারির চারা রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে ল্যাংড়া, আম্রপালি, সূর্যডিম, হাড়িভাঙ্গা, হিম সাগর, গুটি ফজলসহ প্রায় ৩০টি জাতের সুস্বাদু আমের চারা। রয়েছে থাই গোলাপ, রজনীগন্ধা, চায়না টগর, হাসনাহেনা, বকুল, কৃষ্ণচূড়াসহ প্রায় শতাধিক প্রজাতির সুগন্ধি ফুলের চারা। সেই সাথে নানা প্রজাতির ঔষধি গাছের চারাও রয়েছে তার নার্সারিতে।
স্থানীয় বৃক্ষপ্রেমী ও খ্যাতিমান চিকিৎসক অধ্যাপক ইয়াসিন আলী জানান, বিগত কয়েক বছর আগে অতিবৃষ্টিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে তার নার্সারির অনেক চারা নষ্ট হয়ে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন। কিন্তু তার লালিত স্বপ্ন কখনোই তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। স্বপ্নবিলাসী আলামিন বার বার এমন ক্ষতির মুখেও নার্সারি থেকে সরে যায়নি। শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও প্রতিবারই দৃঢ় মনোবল ও নতুন উদ্যমে অব্যাহত রেখেছেন ওই নার্সারি উন্নয়নের কাজ। আর এভাবেই কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি ঘুরিয়েছেন নিজের ভাগ্যের চাকা।
স্ত্রীসহ পরিবারের লোকজন জানান, লাভজনক হওয়ায় জীবিকার তাগিদে আলামিন নার্সারিকেই এখন প্রধান পেশা হিসেবেই বেছে নিয়েছেন। এটির আয় দিয়ে পরিবারের অভাব-অনটন দুর করে তিনি আজ স্বাবলম্বী ও সুপ্রতিষ্ঠিত।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ একেএম শাজাহান কবির জানান, অল্প দিনেই নার্সারিতে সফল আলামিন এখন সবার অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। তাই উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারাও তারসহ উপজেলার বিভিন্ন নার্সারি নিয়মিত পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন বৃক্ষমেলায় এসব নার্সারির বিভিন্ন জাতের নতুন গাছের চারার পরিচিতি তুলে ধরে বিক্রিতেও সার্বিক সহায়তা করছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা