০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ জিলহজ ১৪৪৫
`

করিমগঞ্জে বাড়ির সীমানা মাপামাপি নিয়ে ২ পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৪০

করিমগঞ্জে বাড়ির সীমানা মাপামাপি নিয়ে ২ পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৪০ - ছবি : নয়া দিগন্ত

কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলায় বাড়ির সীমানা মাপামাপি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। ভাঙচুর হয়েছে বেশ কয়েকটি বাড়িঘর। এতে আহত হয়েছে অন্তত ৪০ জন।

শনিবার (২৯ জুন) বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত উপজেলার গুণধর ইউনিয়নের উত্তর আশতকা মানিকপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে সংঘর্ষ থামে। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত ১২ জন। এদের মধ্যে দশজনের নাম পাওয়া গেছে।

একপক্ষের কয়েকজন আহত হলেন মরহুম ফালান মিয়ার ছেলে চান মিয়া (৫০), তার ছোট ভাই তারা মিয়া (৪৫), শাহেদ মিয়ার ছেলে গোলাপ (৫৫), গোলাপের ছেলে আনোয়ার (২৫) ও নুর ইসলামের ছেলে নবী হোসেন (২৮)।

আরেক পক্ষের কয়েকজন হলেন হারেছ মিয়ার ছেলে রফিকুল (৩০), তার ছোট ভাই হামিদুল (২৫), মোহাম্মদের ছেলে জিয়া রহমান (৩৫), হোসেন আলীর ছেলে ধনু (৩০) এবং একই পক্ষের গিয়াস উদ্দিন (৪৫)।

আহতদের মধ্যে অনেকেই করিমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কিশোরগঞ্জের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ও শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উত্তর আশতকা মানিকপুর গ্রামের আছির উদ্দিন মেম্বার বংশের ফালান মিয়ার ছেলে চান মিয়ার সাথে একশো-দশ ঘরিয়া বংশের হারেছ মিয়ার বাড়ির সীমানা নিয়ে বিরোধ ছিল।

শনিবার (২৯ জুন) দুপুরে বিষয়টি মীমাংসার জন্য গ্রামে একটি সালিশ-দরবার বসে। সিদ্ধান্ত হয় দুই পক্ষের বাড়ি মাপামাপি করে সীমানা বুঝিয়ে দেয়া হবে। এরমধ্যে দুই পক্ষের বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে সংঘর্ষ বেধে যায়। এতে দুই বংশের লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে যুক্ত হয়। সংঘর্ষ বড় আকার ধারণ করে। ঘটনার সময় দুই বংশের লোকজনই প্রথমে ইট পাটকেল ছোড়াছুড়ি, পরে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়ায়। ভাঙচুর করা হয় বাড়িঘর।

সংঘর্ষের খবর পেয়ে করিমগঞ্জ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে দুই পক্ষের অন্তত ৪০ জন আহাত হয়েছে। গুরুতর আহত হন অন্তত ১২ জন। এদেরকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।

গুণধর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার ও উত্তর আশতকা গ্রামের বাসিন্দা আবু জুনায়েদ বাচ্চু নয়া দিগন্তকে জানান, সংঘর্ষ ভয়াবহ আকার ধারণ করলে বিষয়টি তিনি চেয়ারম্যানকে জানান এবং পুলিশকে খবর দেন। এ ঘটনায় উত্তর আশতকা গ্রামে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একজন জানান, প্রথমে আছির উদ্দিন বংশের লোকজন একশো-দশ ঘরিয়াদের ওপর আক্রমণ করলে দশ ঘরিয়ারাও পাল্টা আক্রমণ চালান। গ্রামের ভেতরের রাস্তায় দুই বংশের লোকজন অবস্থান নিয়ে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল ও হলঙ্গা ছুড়তে থাকেন। দফায় দফায় এই সংঘর্ষ চলে ঘন্টা ব্যাপী। বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল ছোড়া হয়। দা বললাম নিয়ে ছোটাছুটি হয়। এ সময় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

গুণধর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সায়েম রাসেল ভূঁইয়া বলেন, ‘সংঘর্ষের খবর পেয়েই পরিষদের পক্ষ থেকে পুলিশকে খবর দেয়া হয়। সংঘর্ষের পর এলাকায় যাই আমি। দুই পক্ষের তিনজন তিনজন করে ছয়জনকে দায়িত্ব দিয়ে এসেছি যেন আর সংঘর্ষ না ঘটে। আহতদের খোঁজখবর নিচ্ছি। বিষয়টা যেন আর বাড়তে না পারে এ জন্য এলাকাবাসীকে নিয়ে আমরা বসব।’

করিমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, ‘সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যত দ্রুত সম্ভব পুলিশ পাঠানো হয়। আমি নিজেও ঘটনাস্থলে যাই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এই ঘটনায় কোনো পক্ষই এখনো লিখিত কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এলাকার পরিস্থিতি শান্ত আছে।’


আরো সংবাদ



premium cement