১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩০, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

গজারিয়ায় ছোট ভাইকে না পেয়ে বড় ভাইকে তুলে নিয়ে নির্যাতন

হাতে পিস্তল দিয়ে ভিডিও ধারণ
গজারিয়ায় ছোট ভাইকে না পেয়ে বড় ভাইকে তুলে নিয়ে নির্যাতন - ছবি : নয়া দিগন্ত

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার গুয়াগাছিয়ায় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ছোট ভাইকে না পেয়ে বড় ভাইকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে হাতে অস্ত্র দিয়ে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় এবং রড দিয়ে পিটিয়ে হাত পা ভেঙে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে নৌ-ডাকাত নয়ন বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে।

গুরুতর আহত অবস্থায় হামলায় শিকার শাহাদাত হোসেন (৩৬) নামের যুবককে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) রাত ১০টার পরে চাঁদপুরের মতলব লঞ্চঘাট এলাকা থেকে হাত পা ভাঙ্গা অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে আত্মীয়রা।

শাহাদাত হোসেন গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের গুয়াগাছিয়া গ্রামের মরহুম আবদুল মজিদ ছৈয়ালের ছেলে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, নয়ন বাহিনীর সদস্যদের সাথে শাহাদাতের ছোট ভাই উজ্জ্বলের বিভিন্ন কারণে বিরোধ চলছিল। এই ঘটনার জের ধরে বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বাহিনী প্রধান নয়ন, সেকেন্ড ইন কমান্ড পিয়াসসহ অন্তত ১৫-২০জন গুয়াগাছিয়া গ্রামে হোটেল ব্যবসায়ী উজ্জ্বল হোসেনের বাড়িতে অবস্থান নেয়। এ সময় তাকে না পেয়ে বড় ভাই শাহাদাত হোসেনকে তুলে নিয়ে যায় তারা। পরবর্তীতে রাত ১০টার দিকে চাঁদপুরের মতলব লঞ্চঘাট এলাকা থেকে হাত পা ভাঙ্গা অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়।

হামলার শিকার শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাড়িতে শুয়েছিলাম। এ সময় পার্শ্ববর্তী জামালপুর গ্রামের মাহমুদ আলীর ছেলে পিয়াস, তোফায়েল হোসেনের ছেলে শ্রাবণ ও খালেক মিয়ার ছেলে জামানসহ পাঁচজন বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে। আরো লোকজন বাইরে থেকে আমাদের বাড়ি ঘেরাও করে দাঁড়িয়ে ছিল। তারা আমার ছোট ভাই উজ্জ্বলকে না পেয়ে আমাকে তুলে নিয়ে ট্রলারে করে চাঁদপুরের বেলতলী লঞ্চ ঘাট এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে আমাকে এলোপাথাড়ি মারধর করতে থাকে তারা। এ সময় ওদুদ নামে একজন আমাকে পিস্তল ঠেকিয়ে বলে আমার ছোট ভাই উজ্জ্বলকে আমি তাদের হাতে তুলে দিতে বলে। তাদের কথায় রাজি হলে তারা আমাকে ছে ড়ে দিব বলে আশ্বাস দেয়। একপর্যায়ে তারা আমার হাতে দুটি পিস্তল দিয়ে ভিডিও করে স্বীকারোক্তি নেয় এবং একটি ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয় যে আমি তাদের এখানে ডাকাতি করতে এসেছি। পরবর্তীতে তারা আমাকে মারধর করে এখানে ফেলে রেখে চলে যায়। খবর পেয়ে আমার আত্মীয়-স্বজন আমাকে উদ্ধার করে গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।

আহত শাহাদাত হোসেনের ছোট ভাই উজ্জ্বল হোসেন বলেন, ‘আমার ভাইয়ের শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন তার এক হাত ও এক পা ভেঙে গেছে’।

বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা.আশরাফুল ইসলাম মৃধা বলেন, ‘গতকাল রাত পৌনে ১১টার দিকে আহত অবস্থায় শাহাদাতকে আমাদের হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে যেটা মনে হয়েছে তার বাম হাতটি ভেঙে গেছে। তার ডান পায়ের গোড়ালি ও ডান হাতেও আঘাত রয়েছে। আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে পঙ্গু হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছি।

গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: রাজিব খান বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে এখনো পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।’

উল্লেখ্য, গজারিয়া উপজেলার সামানাধীন গুয়াগাছিয়া গ্রাম-সংলগ্ন মেঘনা নদীতে চলাচলকারী নৌযান চালকদের কাছে রীতিমতো মূর্তিমান আতঙ্কের নাম নৌ-ডাকাত নয়ন বাহিনী। হত্যা, মাদক, চাঁদাবাজি, ডাকাতি ও অস্ত্রসহ বিভিন্ন অভিযোগে বাহিনী প্রধান নয়নের বিরুদ্ধে চল্লিশের অধিক মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে। চলতি বছরের ২০ মার্চ পুলিশের বিশেষ অভিযানে বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড পিয়াস আটক হলে বাহিনীর কার্যক্রমে কিছুটা ভাটা পড়ে। এ ঘটনায় কিছুদিন চুপচাপ থাকলেও সাম্প্রতিক পিয়াস জামিনে আসায় আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বাহিনীর সদস্যরা।


আরো সংবাদ



premium cement