আদালতের নির্দেশে দেড় মাস পরে সমাধি থেকে লাশ উত্তোলন
- ফরিদপুর প্রতিনিধি
- ২৫ জুন ২০২৪, ১৫:২২
ফরিদপুরের সালথায় সমাহিত করার দেড় মাস পরে আদালতের নির্দেশে নয়ন বিশ্বাস (১৬) নামে এক স্কুলছাত্রের লাশ উত্তোলন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে সালথা উপজেলার মাঠ সালথা গ্রামের সমাধি থেকে তার লাশটি উত্তোলন করা হয়। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সালথা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনিছুর রহমান বালি ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর শামীম হাসান উপস্থিত ছিলেন।
নিহত নয়ন বিশ্বাস ওই গ্রামের ধনঞ্জয় বিশ্বাস ও লক্ষ্মী রানী দাশের ছেলে।
নয়নের বাবা ধনঞ্জয় বিশ্বাস জানান, গত ৯ মে তার ছোট ভাই পরিমল বিশ্বাসের মেয়ের জামাই জেলা সদরের কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের পারচর গ্রামের বাসিন্দা আশিষ মণ্ডলের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন তিনি জানতে পারেন, ওই গ্রামে একটি পুকুরে গোসল করতে নেমে পানিতে ডুবে নয়ন মারা গেছে। পরে তার লাশটি এনে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী সমাধি দেয়া হয়।
ধনঞ্জয় বিশ্বাসের অভিযোগ, তাদের মাঝে জমি সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে ছোট ভাই পরিমল বিশ্বাসের সাথে। এর জেরে পরিকল্পিতভাবে তার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে।
এ ঘটনার এক মাস পর গত ২ জুন পরিমল বিশ্বাস ও তার ছেলে প্রশনজিত বিশ্বাস, মেয়ে জামাই আশিষ মণ্ডল এবং পারচর গ্রামের সুমন বিশ্বাসকে আসামি করে নয়নের মা আদালতে একটি হত্যা মামলা করেন। এরপর আদালতের নির্দেশে গত ৭ জুন কোতয়ালী থানায় এ মামলার এফআইআর করা হয়। পরে রহস্য উদঘাটন ও ময়নাতদন্তের করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতামত গ্রহণের জন্য আদালতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর শামীম হাসান। এরপর আদালত সমাধি থেকে লাশ উত্তোলনের আদেশ দেন।
এ দিকে, মৃত ছেলের লাশ উত্তোলন দেখে আহাজারি করতে করতে বারবার মূর্ছা যান মা লক্ষ্মী রানী দাস। এ সময় তার পাশে বাবাকে স্তব্ধ হয়ে বসে থাকতে দেখা যায়।
নয়নের মা লক্ষ্মী রানী দাস বলেন, ‘আমার দেবর তার মেয়ের বাড়িতে অনুষ্ঠানের কথা বলে নিয়ে যেতে চায়। তখন আমি নিষেধ করেছিলাম। তারপরও আমার ছেলেকে পরিমলের ছেলে কৌশলে নিয়ে যায়। পরের দিন গোসল করার নামে তাকে পারচর গ্রামের একটি লিচু বাগানের পাশে নির্জন জায়গায় নিয়ে যায়। এ সময় তারা আমার ছেলেকে মারধর করে এবং পানিতে চুবিয়ে মেরে ফেলেছে। কিন্তু আমাদের জানিয়েছিল, পানিতে ডুবে মারা গেছে। ওরা হাসপাতালেও নেয়নি। এরপর খবর পেয়ে আমার স্বামী ওর লাশটি নিয়ে আসে। তখন আমরা শোকাহত থাকায় কিছু বুঝতে পারিনি। লাশটি বাড়িতে এনে দেখি, ওর মুখে ও গলায় আঘাত রয়েছে। তখন আমরা মামলা করতে চাইলে হুমকি-ধমকি দেয়া হয় এবং বাধা সৃষ্টি করে। এরপর আমি আদালতে মামলা করেছি।’
তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে আরো বলেন, ‘আমি এই হত্যার বিচার চাই, ওগো ফাঁসি চাই। না হলে, ওরা আমার আরেক ছেলেকেও মেরে ফেলবে।’
এ বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর শামীম হাসান বলেন, ‘প্রথমে তার বাবার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশটি হস্তান্তর করা হয়েছিল। এরপর তার মা বিজ্ঞ আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মঙ্গলবার আদালতের আদেশে লাশটি উত্তোলন করা হয়েছে এবং ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিক্যাল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে।
ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান এই তদন্ত কর্মকর্তা।