শখের অক্ষর শিল্পকে পেশা বানিয়ে জীবন বদলে গেছে ইসমাইল হুসাইনের
- মুহাম্মদুল্লাহ, সখীপুর, (টাঙ্গাইল)
- ১৩ মে ২০২৪, ১৩:১৬
রাজধানীর ধানমন্ডির-১৯ নম্বরে সংসার পেতেছেন ইসমাইল হুসাইন। তার ছোট বাসার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আঁকাআঁকির বিভিন্ন আকৃতির ফ্রেম ও রঙ তুলি। আছে রঙের ছোপ ছোপ দাগ। এসব প্রস্তুত করা হয়েছে আরবি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় ক্যালিগ্রাফি আঁকার জন্য। এর মধ্যে কোনোটি গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য প্রস্তুত, আবার কোনোটিতে মাত্র শুরু করা হয়েছে আঁকার কাজ।
ইসমাইল জানান, তার নেশা ও পেশা ক্যালিগ্রাফি বা অক্ষর শিল্প।
জানা গেছে, ইসমাইল হুসাইন রাজধানীর ফরিদাবাদ মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস শেষ করেছেন। শৈশব থেকেই তার আঁকাআঁকি ভীষণ পছন্দ। ১২ বছর বয়সে যখন মাদরাসায় হিফজ পড়েন, তখন থেকেই অবসর সময়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যাংকের ক্যালেন্ডার সংগ্রহ করতেন এবং তাতে যে আরবি ক্যালিগ্রাফি থাকতো সেগুলো দেখে নিজে ক্যালিগ্রাফি চর্চা করতেন।
আরো জানা গেছে, ২০১৪ সালের শেষ দিকে আর্ট অ্যান্ড ডিজাইন হাউস ‘গালা’তে যাতায়াতের সূত্রে পরিচয় হয় দেশের বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফার মাহবুব মুর্শিদের সাথে। সুযোগ পেলেই তার ক্যালিগ্রাফি আঁকা দেখার জন্য ছুটে যেতেন ইসমাইল। এরপর ২০১৯ সালে পড়াশোনা শেষে ভর্তি হয়ে যান মাহবুব মুর্শিদের কোর্সে।
ইসমাইল জানান, মাহবুব মুর্শিদের কোর্সই তাকে পুরোপুরি ক্যালিগ্রাফির পথে নিয়ে আসে। এখন তার আঁকা ক্যালিগ্রাফি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রদর্শিত হচ্ছে।
২০২১ সালে নিউ ইয়র্ক ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিং প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনীতে ইসমাইলের আঁকা ক্যালিগ্রাফি জায়গা করে নিয়েছে। এছাড়াও এর আগে ২০১৮ সালে টুকি-টাকি আর্ট অ্যান্ড ক্রাফট অ্যাক্সিবিশন, ২০১৯ সালে টুকি-টাকি আর্ট ও ক্রাফট প্রদর্শনী, ২০২০ সালে ওআইসি ইয়্যুথ ক্যাপিটাল আন্তর্জাতিক ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ডে অফ আর্ট ক্যালিগ্রাফি ও ফটোগ্রাফি প্রদর্শনী-২০২০ এবং ঢাকা ওআইসি ইয়্যুথ ক্যাপিটাল ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনীতে ইসমাইলের আঁকা ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শিত হয়। এমনকি ২০২০-২১ বঙ্গবন্ধু ইয়্যুথ আর্ট কম্পিটিশনে টপ টেনে জায়গা পান তিনি।
ক্যালিগ্রাফি একটা সম্ভাবনাময় শিল্প উল্লেখ করে ইসমাইল বলেন, ‘আমাদের দেশে আরবি ক্যালিগ্রাফি অন্য দেশের মতো এখনো তার নিজস্ব অবস্থান তৈরি করতে না পারলেও ধীরে ধীরে এই শিল্পের কদর বাড়ছে।’
এ দিকে, ইসমাইল হুসাইন ক্যালিগ্রাফির পাশাপাশি বিশেষ দক্ষতা দেখাচ্ছেন ওশান আর্টেও। যাকে রেজিন আর্টও বলা হয়। রেজিন এক ধরনের ক্যামিক্যাল। যা আর্টে ব্যবহার করা হয় স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ সৌন্দর্য আনার জন্য। এটা তরল থাকে। শুকিয়ে গেলে শক্ত কাঁচের মতো হয়ে যায়। সমুদ্রের আর্টে বাস্তব সৌন্দর্য নিয়ে আসে এই ক্যামিক্যাল। ইদানীং এ ধরনের কাজই বেশি করা হচ্ছে বলে জানান ইসমাইল। শুরুতে পছন্দ না করলেও এ কাজে তার আগ্রহ ও সাফল্য দেখে মেনে নিয়েছে পরিবার। ইসমাইলের আর্ট করা ক্যালিগ্রাফির প্রথম ক্রেতা ছিলেন তারই সহপাঠী। যা মাত্র ১৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এরপরে নিজের শখের কাজগুলো ফেসবুকে ‘ওয়াও আর্ট’ নামে একটি পেইজ খুলে অনলাইনে বিক্রির প্রতি মনোযোগী হন। ইন্ডিয়া, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়াতেও তার ক্যালিগ্রাফি বিক্রি হয়েছে।
ইসমাইল জানান, বর্তমানে অনলাইনে গড়ে মাসে প্রায় লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে তার কাজ। স্বপ্ন দেখছেন নিজস্ব একটি আর্ট গ্যালারি করার। যেখানে মানুষ তার ক্যালিগ্রাফি বা অক্ষরশিল্প দেখতে যাবে। পছন্দ হলে কিনবে। এছাড়া সেখানে ক্যালিগ্রাফি শেখারও ব্যবস্থা রাখতে চান তিনি।
ইসমাইল বলেন, ‘ক্যালিগ্রাফিতে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন মানুষের ভালোবাসা ও অনুপ্রেরণা। কেউ আমার কাজ দেখে বা চেনে এ কারণে নয়, সবাই আমার কাজ দেখে আমাকে ভালোবাসছে এতেই আমার তৃপ্তি।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা