পেটের দায়ে কাজে আসছি
- আমান উল্লাহ পাটওয়ারী, সাভার (ঢাকা)
- ০১ মে ২০২৪, ১০:৫৫, আপডেট: ০১ মে ২০২৪, ১১:১৮
বাড়িওয়ালার বাসাভাড়া দিব। মুদি দোকানদারের টাকা দিত হবে । চাল কিনতে হবে । আমাকে কাজে নিবে কে? একটা কাজ চাই। পেটর দায় কাজ করি। কাজে না আসলে আমাদের খাওয়া দিবে কে।
কথাগুলো বলছেন মহান মে দিবস বুধবার সকাল সাভার বাসস্ট্যান্ডর সাভার সিটি স্টার আর মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের সামনে মানুষ কেনাবেচার হাটে নারী শ্রমিক নুরজাহান (৩৫)।
তিনি মাটি কাটার কাজ করেন। আসছন নওগাঁ জেলা থেকে। বর্তমানে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন সাভার সদর ইউনিয়নর চাঁপাইন গ্রামে।
তিনি জানান, আজ (বুধবার) মে দিবস। সরকারি বন্ধের দিন। আমরা তা নিয়ে কোনো কিছু ভাবি না। আমরা কাজের মানুষ। আমাদের কাজ করে খেতে হবে। প্রতিদিন বাসস্ট্যান্ডের সাভার সিটি স্টার আর মাশরুম গেইটে তাদের ভীড় করতে দেখা যায়।
খোলা আকাশের নিচে বৃষ্টিতে বিজতে হয়, রোদে পুড়তে হয়। শুধু নুরজাহান নয় ,শতশত-নারী-পুরুষ দিনমজুর প্রতিদিন কাজের আশায় কাকডাকা ভোরে উম্মুক্ত শ্রমবাজারে জড়ো হন। এক দিনের জন্য কেনাবেচা হয় শ্রমিকের এ দিনমজুর বাজারে । বিভিন্ন ঠিকাদার এ বাজার থেকে এক দিনের জন্য দিনমজুর কিনে সাভারের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে থাকে। আবার অনেক ফ্ল্যাট মালিকেরা মানুষ কেনাবেচার হাট থেকে দামধর ঠিক করে দিনমজুরদের নিয়ে যায়। দিন শেষে যা টাকা পান তা দিয়ে সংসার চলে এ দিনমজুরদের।
মহান মে দিবস উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি সব অফিস-আদালত, কলকারখানা ছুটি। আর দিনমজুর নারী-পুরুষ নিম্ন আয়ের এ শ্রমিকরা প্রতি দিনের মতো মহান মে দিবসও শ্রম বিক্রির জন্য জড়ো হয়েছে উম্মুক্ত আকাশের নিচে। তাদের কেউ মে দিবস সম্পর্কে জানেন, আবার অনেকে কিছুই জানেন না।
সরজমিনে তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মাটি কাটার শ্রমিকদের সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। তাদের মজুরির মূল্য পুরুষ ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা আর নারী শ্রমিকদর ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। আর জুগালি পুরুষ ৬৫০ টাকা আর নারী ৪৫০ টাকা।
তবে অনেক সময় ঠিকাদাররা মানুষ কেনার হাট থেকে তাদের কম দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করে দেন।
বুধবার সকালে বাসস্ট্যান্ডর ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে ঢাকা লেনের পশ্চিম পাশে নতুন ফুটওভার ব্রিজের দু’পাশে সাভার সিটি স্টার আর মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের সামনে দেখা যায়, হাতে টুকরি, কাঁধে কোদাল, দুপুরের খাবারের একটি ঠলে নিয়ে, আবার অনেকে খালি হাতে দাঁড়িয়ে আছেন শতশত দিনমজুর।
তাদের মধ্যে একজন ৬০ বছরের মো: খলিলুর রহমান। তিনি আসছেন ঢাকা জেলার ধামরাই উপজলার আড়ালিয়া থেকে। আজ মে দিবস। এ দিবস সম্পর্ক খলিলুর রহমান কিছুই জানেন না।
তিনি জানান ‘কামলার কোনো মে দিবস নাই। তিনি ক্ষেতে ধান কাটার জন্য সাভারে আসছেন। তাদের মজুরি ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা।’
তিনি আরো জানান ‘আমাদর কাজ করে খেতে হয়। দাম এটাই, চাহিদা অনুযায়ী কম-বেশি হয়।’
খলিলুর রহমান নয়া দিগন্তকে আরো বলেন ‘আমার বয়স বেশি বলে অনেকে আমাকে কাজে নিতে চায় না। যখন আমাকে কাজ নেয়া হয় তখন আমার কাজের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে পরবর্তীতে আবার নিতে আসে। আমি কাজে ফাঁকি দেই না। আমি অনেক আন্তরিকতার সাথে কাজ করি।
কাজের সন্ধ্যানে নওগাঁ থেকে আসছেন যুবক মারসালিন (২০)। তিনি জানান ‘তিনি এখনো বিয়ে করেননি। মা-বাবাকে খাওয়াতে কাজের সন্ধ্যানে ঢাকায় আসছেন। কাজ সহজে পাওয়া যায় না। কোনো দিন কাজ পেলেও দালালকে তার একটি অংশ দিতে হয়। আবার যে কন্ট্রাক্টর আমাদের বিভিন্ন জায়গায় মালিকের কাজে পাঠান, কন্ট্রাক্টর হাজিরার টাকার একটা অংশ নিয়ে যায়।
তিনি আর বলেন, তবে কোনো মালিক আমাদের হাজিরার টাকা কাটেন না। এভাবেই চলছে আমাদের জীবন। তবে মালিকরা অনেক আন্তরিক এবং ভালো।
সরজমিনে আরো দেখা যায়, মানুষ কেনার হাটে কোনো লোক সকালে গেলেই নারী-পুরুষ শ্রমিকরা দাঁড়িয়ে আসেন ওই ব্যক্তির কাছে। তাদের ধারণা, তাদের কাজে নেয়ার জন্য, কেনার জন্য আসছেন। যদি শুনেন তারা এমনিতেই আসছেন শ্রমিক নিবেন না তখন তারা মন খারাপ করেন।
দিনমজুর শ্রমিকরা জানান, প্রতি জায়গায় আমাদের দুঃখ-কষ্ট পোহাত হয়। ভোর থেকে সকাল ১০টা, কোনো দিন বেলা ১১টা পর্যন্ত আমরা এখানে কাজের জন্য অপেক্ষা করি। কখন আমাদের কাজে যাওয়ার ডাক পড়বে। এভাবেই চলছে আমাদের জীবন। সবাই বলছে এখন নাকি অনেক গরম। কি গরম আর কি শীত, আমাদর রোদে শুকাতে হয় আর বৃষ্টিতে ভিজতে হয়।