আলোচিত ৭ খুনের ১০ বছর : ন্যায় বিচারের অপেক্ষায় স্বজনরা
- নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
- ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩:১২
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের জঘন্যতম দিন আজ। এরই মধ্যে পার হয়ে গেছে এক দশক। নিহতের স্বজনরা অপেক্ষা করছে ন্যায় বিচার পাওয়ার। তবে সেই ন্যায় বিচার কবে পাবে তা কেউ বলতে পারে না।
নারায়ণগঞ্জে ৭ খুনের অন্যতম নিহত তাজুলের বাবা আবুল খায়ের তার মনের আকুতি প্রকাশ করে বলেন, ‘এখন আর কাঁদতে পারি না। কাঁদতে কাঁদতে চোখের জলে শুকিয়ে যাচ্ছে। আর কত অপেক্ষা করবো আমরা।’
তিনি আরো বলেন, ‘বিচার পাবো কি না তা আদৌ জানি না। তবে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তিন বছর দ্রুত গতিতে মামলার বিচার কাজ এগিয়ে গেছে। কিন্তু আপিল বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে কেন মামলাটি ঝুলে আছে, তা বুঝতে পারছি না।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় ১০ বছরেও নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত সাত খুন মামলার রায় কার্যকর হয়নি। ২০১৪ সালের এ দিনে সাতজনকে অপহরণ করে খুন করা হয়। এর তিন দিন পর একে একে তাদের লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভেসে ওঠে। এই ঘটনায় নিম্ন আদালতে ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ডসহ আরো নয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়। পরে উচ্চ আদালতে ১৫ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে অন্যান্য আসামির বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়। তবে দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ বছর ধরে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে মামলাটি শুনানির অপেক্ষায় আটকে আছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহতের স্বজনেরা।
বাদীপক্ষের আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন খান জানান ‘সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে মামলাটি ঝুলে আছে। অথচ নিম্ন আদালত খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে রায় দিয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই খুনের সাথে র্যাব কর্মকর্তাসহ প্রভাশালী কাউন্সিলর জড়িত। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার যাতে না হয় ওই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে সেই চেষ্টা চালিয়ে আসছে। আমরা চাই মামলার রায় বহাল রেখে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করা হোক। পাশাপাশি মামলার রায় কার্যকর করা হোক।’
জানা গেছে, সাত খুনের মামলায় ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নুর হোসেন, র্যাব-১১-এর চাকরিচ্যুত সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন ও লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম মাসুদ রানাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং নয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজার আদেশ দেন। পরে উচ্চ আদালতে আপিল করা হয়।
আরো জানা গেছে, ২০১৮ সালে ২২ আগস্ট ১৫ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে অন্যান্য আসামির বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন উচ্চ আদালত। প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর ধরে মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। নিম্ন আদালত থেকে হাইকোর্টের দেয়া রায় সন্তোষজনক হয়েছে বলে জানিয়েছেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা।
তবে আপিল বিভাগেও এ রায় বহাল থাকবে বলে প্রত্যাশা করছেন নিহতের স্বজনেরা। সেইসাথে সাজার রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানান তারা।
বিচার দাবি করে নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেন, ‘১০ বছর ধরে বিচারের অপেক্ষায় আছি। আসামিপক্ষের লোকজন এখনো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছে। উপার্জনক্ষম সাতজন মানুষকে হারিয়ে পরিবারগুলো নিঃস্ব হয়ে গেছে। এখন সরকারের কাছে শুধু ন্যায়বিচার দাবি করছি।’
নিহত জাহাঙ্গীরের স্ত্রী নুপুর বেগম বলেন, ‘১০ বছর ধরে বিচারের আশায় বুক বেঁধে আছি। কিন্তু বিচারের তো পাচ্ছি না। বিচার চাইতে চাইতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) মনিরুজ্জামান বুলবুল বলেন, ‘সাত খুন মামলা সারাদেশে বহুল আলোচিত। মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে চলমান রয়েছে। প্রত্যাশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে রায় ঘোষণা করা হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আদালতে মামলায় হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলাম, তার সহযোগী মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, বন্ধু সিরাজুল ইসলাম লিটন, মনিরুজ্জামান স্বপনের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার এবং তার ব্যক্তিগত গাড়িচালক ইব্রাহিমসহ সাতজন অপহৃত হন। অপহরণের তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল নজরুল ইসলামসহ ছয়জন ও ১ মে সিরাজুল ইসলাম লিটনের লাশ শীতলক্ষ্যা নদীর বন্দরের শান্তির চর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ও নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল ফতুল্লা থানায় আলাদা দু’টি মামলা করেন।