শোলাকিয়ায় ঈদ জামাত সকাল ১০টায়, ব্যাপক নিরাপত্তা
- কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
- ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ২১:৪৬
ঈদের জামাতের জন্য প্রস্তুত কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ। শোলাকিয়া ঈদগাহে এবার ১৯৭তম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১০টায় শুরু হবে এ ঈদ জামাত। জামাতে ইমামতি করবেন মাওলানা ফরীদ উদদীন মাসউদ। বিকল্প ইমাম হিসেবে থাকবেন বড় বাজার মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা শোয়াইব আব্দুর রউফ।
শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন,‘শোলাকিয়া ঈদগাহ পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজের জন্য এবার অত্যন্ত নিরাপদ। সকলকে আহ্বান জানাচ্ছি মাঠে আসেন, জামাতে নামাজ পড়েন এবং নিরাপদে নিশ্চিন্তে বাড়ি ফিরবেন। এজন্য যে ধরনের ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন তা নেয়া হয়েছে।'
রোববার (০৭ এপ্রিল) দুপুরে শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ এবং পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ শোলাকিয়া মাঠের প্রস্তুতি নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। পরে র্যাব-১৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম ও কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো: পারভেজ মিয়াও সাংবাদিকদের শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের প্রস্তুতি নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং দেন।
শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমাদের সার্বিক প্রস্তুতির কাজ চলমান রয়েছে। এখানে মুসুল্লিদের জন্য আমাদের মাঠের অভ্যন্তরে সুপেয় পানির ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া অজুর জন্যে বড় পরিসরে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তাদের জন্য ওয়াশরুমও স্থাপন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে যদি মুসল্লিদের চিকিৎসার প্রয়োজন হয় সেকারণে মাঠে মেডিক্যাল টিম রাখা হবে। ডাক্তার এখানে থাকবেন। আমাদের হাসপাতালগুলোও প্রস্তুত রয়েছে। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাগণও এখানে দায়িত্ব পালন করবেন। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এখানে থাকবেন। বরাবরের মতোই আমরা কতগুলো ওয়াচ-টাওয়ার নির্মাণ করেছি। ওয়াচ-টাওয়ার ও মাঠের আসপাশে পর্যাপ্ত পরিমাণে সিসিটিভি স্থাপন করা হয়েছে যেন নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয়। পর্যাপ্ত পরিমাণ পুলিশ, র্যাব, আনসারসহ আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া ৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হবে।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, ঈদের জামাতে অংশগ্রহণের জন্য মুসল্লিদের জন্য‘শোলাকিয়া এক্সপ্রেস' নামে দুটি স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে অংশগ্রহণের সুবিধার্থে ভৈরব-কিশোরগঞ্জ-ভৈরব ও ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ লাইনে‘শোলাকিয়া এক্সপ্রেস' নামে দুটি স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে। শোলাকিয়া এক্সপ্রেস-১ ভৈরব থেকে ছাড়বে সকাল ৬টায় কিশোরগঞ্জ পৌঁছাবে সকাল ৮টায়, আবার কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে যাবে দুপুর ১২টায় ভৈরব পৌঁছাবে বেলা ২টায়। শোলাকিয়া এক্সপ্রেস-২ ময়মনসিংহ থেকে ছাড়বে সকাল পৌনে ৬টায়, কিশোরগঞ্জ পৌঁছাবে সকাল সাড়ে ৮টায়, আবার কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে যাবে দুপুর ১২টায় এবং ময়মনসিংহে পৌঁছাবে বেলা ৩টায়। নিরাপত্তার বিষয়ে আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে। দেশবাসীকে আহ্বান জানাচ্ছি আপনারা সবাই আসুন, আসুন সবাই মিলে দেশের সবচেয়ে বড় একটা ঈদের জামাতে নামাজ আদায় করি।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, অন্য যেকোনো বছরের চেয়ে এবারের শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজের জন্য অত্যন্ত নিরাপদ। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলার সম্ভাবনা নেই। সকলকে আহ্বান জানাচ্ছি মাঠে আসেন, জামাতে নামাজ পড়েন এবং নিরাপদে নিশ্চিন্তে বাড়ি ফিরবেন। এজন্য যে ধরনের ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন জেলা পুলিশ সম্পূর্ণ ব্যবস্থা নিবে। ইতোমধ্যে মাঠের যে সুইপিং, নিরাপত্তা সুইপিং ইতোমধ্যে আমরা করেছি। আবার ঠিক ঈদের পূর্বেই সুইপিং করবো। সুইপিং করে মাঠের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করবো। এর বাইরেও ড্রোন ক্যামেরার মাধ্যমে পুরো এলাকার ফুটেজগুলি আমরা সংগ্রহ করবো। নিরাপত্তার ব্যাপারে কোনো ধরনের ব্যত্যয় বা সন্দেহ পরিলক্ষিত হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এছাড়া প্রত্যেকটি গেইটে আমাদের আর্চওয়ে থাকবে। আর্চওয়ের মধ্য দিয়ে এই নিরাপত্তা বলয় পার হয়ে মাঠে প্রবেশ করতে হবে এবং প্রত্যেককে সার্চ করার জন্য মেটাল ডিটেক্টর থাকবে।
পুলিশ সুপার আরো বলেন, পুরো মাঠে যেদিক দিয়েই মুসল্লি প্রবেশ করবেন সেই গেটগুলিতে পর্যাপ্ত সংখ্যক নিরাপত্তা ফোর্স দ্বারা চেকপোস্ট ডিউটি করা হবে। যেন কোনো রকম দুষ্কৃতকারী বা দুর্ঘটনা ঘটানোর অভিপ্রাযয়ে যারা এখানে আসবেন তারা বাধাগ্রস্ত হউক এবং সেখানেই গ্রেফতার হবে। এর বাইরেও আশেপাশে যে সমস্ত স্থাপনা রয়েছে প্রত্যেকটা স্থাপনাতে পুলিশ ডিউটিতে থাকবে। ইতোমধ্যে পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন সেখানে কাজ করছে। আশেপাশের যে হোটেল রেস্টুরেন্টগুলি রয়েছে সেগুলোকেও নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে এবং সার্চ অব্যাহত রাখা হয়েছে৷ কোনো বিষয় নজরে আসলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিব। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ থাকবে। যেন সম্মানিত মুসুল্লিরা অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে ও স্বাচ্ছন্দ্যে মাঠে প্রবেশ করতে পারেন৷ প্রত্যেক মুসুল্লিদের গতিবিধি বাইনোকুলার দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হবে৷ এছাড়া কোনো ধরনের নাশকতার আশঙ্কা নাই। ২০১৬ সালে যে ঘটনা ঘটেছিল তা মাথায় রেখেই আমরা নিরাপত্তা পরিকল্পনা করে থাকি।
র্যাব-১৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম বলেন, র্যাব কতৃক বিশদ নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। আমাদের যে নিরাপত্তা পরিকল্পনা সেটি মূলত চার স্তরের নিরাপত্তা পরিকল্পনা। এই মাঠে আসা যাওয়ার গেটগুলো রয়েছে সেখানে আমাদের র্যাব সদস্যরা মোতায়েন থাকবে। ওয়াচ-টাওয়ারে স্বয়ংক্রিয় স্নাইপার রাইফেল থাকবে যেন যেকোনো ধরনের নাশকতা প্রতির করতে পারেন। বেশকিছু পেট্রোল কার থাকবে যেগুলো শহরের বিভিন্ন এলাকায় টহল দিবে যেন মুসুল্লিরা নির্বিঘ্নে মাঠে আসিতে পারেন ও নামাজ শেষে বাড়ি ফিরিতে পারেন। ভৈরব ও কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে র্যাব মোতায়েন থাকবে কারণ ট্রেনে করে দূর দূরান্ত থেকে মুসুল্লিরা নামাজ আদায় করতে আসেন। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া ট্রেনেও র্যাব সদস্যরা থাকবে যেন ছিনতাইকারী ও পকেটমারেরা কোনো ধরনের অপরাধ না করতে পারে।
কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো: পারভেজ মিয়া বলেন, ঈদ জামাতকে ঘিরে প্রস্তুতি শেষ করতে পেরেছি। সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ, দাগকাটা, রঙ করা, মাইকিং, সাউন্ড সিস্টেমের ব্যবস্থা সম্পন্ন করা হয়েছে। যে রাস্তাগুলো মেরামতের বাকি ছিলো তা মেরামত করা হয়েছে। আমরা পুরোপুরিভাবে ঈদের জামাতের জন্য প্রস্তুত।
প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মহুয়া মমতাজ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রুবেল মাহমুদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাক সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোহাম্মদ নূরে আলম, র্যাব-১৪ সিপিসি-২ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানি অধিনায়ক স্কোয়াড্রন লিডার মো. আশরাফুল কবির, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আল আমিন হোসাইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মনতোষ, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ঈদগাহ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো: আবু রাসেল, সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাকিবুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা প্রমুখ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা