বন্ধুর সহায়তায় আপন বোনকে খুন করে টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট
- মোহাম্মদ আলী ঝিলন, গাজীপুর
- ০৫ এপ্রিল ২০২৪, ২২:২৫
গাজীপুরের কাপাসিয়ায় বন্ধুর সহায়তায় আপন বোনকে হত্যা করে ঘরের টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করেছে ছোট ভাই। এ ঘটনায় ওই দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
শুক্রবার গাজীপুর পিবিআই’র পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
গ্রেফতাররা হলেন গাজীপুরের কাপাসিয়া থানার কুলগঙ্গা এলাকার সিরাজ উদ্দীন বেপারীর ছেলে ও নিহতের ছোট ভাই কামরুজ্জামান রুবেল (৩৬) এবং তার বন্ধু শেরপুরের শ্রীবরদী থানার মামদা বাড়ি এলাকার আস্কর আলীর ছেলে মো: মিনাল ওরফে মিস্টার (২১)।
পিবিআই’র পুলিশ সুপার মাকছুদের রহমান জানান, গত মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) গাজীপুরের কাপাসিয়া থানার সিংহশ্রী ইউনিয়নের পূর্ব ভিটিপাড়া গ্রামের দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসী মোশারফ হোসেনের স্ত্রী শাহনাজ বেগম শিমুর (৩৯) হাত-পা ও মুখ বাঁধা লাশ স্বামীর বাড়ির নিজ কক্ষ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের বাবা সিরাজ উদ্দীন বেপারী বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন। নানা তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে নিহতের আপন ভাই কামরুজ্জামান রুবেলকে গাছা থানা এলাকা হতে বৃহষ্পতিবার বিকেলে গ্রেপ্তার করে পিবিআই’র গাজীপুরের সদস্যরা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে তার বোনকে হত্যার কথা স্বীকার করে। এসময় লুণ্ঠিত স্বর্ণ বিক্রির টাকা থেকে ৫৭ হাজার টাকা তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার বন্ধু মিষ্টারকে রাজধানীর উত্তরা এলাকা হতে শুক্রবার গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত একটি প্লাস, সুইচ গিয়ার চাকু ও চোরাই মোবাইল সেটের খন্ডিতাংশ স্থানীয় কবরস্থান ব্রীজের নীচে খাল থেকে উদ্ধার করে। শুক্রবার গেপ্তারকৃতদের আদালতে সোপর্দ করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা শাহনাজ বেগম শিমু হত্যাকান্ডে নিজেদেরকে জড়িয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। এরপ্রেক্ষিতে ঘটনার ঘটনার ৪দিনের মধ্যে চাঞ্চল্যকর গৃহবধূ শাহনাজ বেগম শিমু হত্যার রহস্য উন্মোচন হয়েছে।
তিনি আরো জানান, নিহত শাহনাজ বেগম শিমুর ছোটভাই কামরুজ্জামান রুবেল স্থানীয় একটি আবাসিক হোটেলে চাকুরি করতেন। প্রায় ৫ মাস আগে চাকুরি ছেড়ে দিলে তিনি অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েন। বিভিন্নজনের কাছ থেকে নেয়া ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় বোনের বাসা হতে স্বর্ণালংকার ও টাকা চুরি পরিকল্পনা করে রুবেল। ঘটনার দু’দিন আগে বন্ধু মিস্টারকে সঙ্গে নিয়ে চুরির ছক কষে তারা। ঘটনারদিন বিকেলে একটি ব্যাগের মধ্যে প্লাস, সুইচ গিয়ার চাকু, গামছা ও কাঁচি নিয়ে শ্রীপুর হয়ে রাত ৮টার দিকে বরামা ব্রিজ এলাকায় যায় দুই বন্ধু রুবেল ও মিস্টার। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে তারা শিমুর বাড়ির পাশের একটি আখ ক্ষেতে গিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত লুকিয়ে থাকে। রাত ১২ টার তারা শিমুর বাড়ির সীমানা প্রাচীর টপকে বাসার ছাদে উঠে টিন খুলে রান্না ঘরে প্রবেশ করে। পরে খোলা জানালা দিয়ে বাঁশের লাঠির মাধ্যমে শিমুর কক্ষের দরজার ছিটকিনি খুলে ঘরে ঢুকে তারা। টের পেয়ে শিমু ডাকচিৎকার শুরু করলে প্রথমে ভয় দেখায় ও পরে শিমুর মুখ চেপে ধরে। এতেও শান্ত না হওয়ায় তারা শিমুর মুখে গামছা গুঁজে দিয়ে চোখ ও মুখ বেঁধে ফেলে। এ সময় দড়ি দিয়ে পিঠমোড়া করে বোনের হাত ও দুই পা বেঁধে ফেলে রুবেল। ঘটনার সময় ধ্বস্তাধ্বস্তিতে বোনের নখের আঁচড়ে দুই হাতে জখম হয় রুবেল। পরে শিমুর ব্যবহৃত মোবাইল, আলমারি থেকে নগদ তিন হাজার টাকাসহ বিভিন্ন স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে বাড়ির পকেট গেইট দিয়ে পালিয়ে যায় দুই বন্ধু রুবেল ও মিস্টার। পরদিন লুণ্ঠিত ওই স্বর্ণালংকার দেড়লাখ টাকায় বিক্রি করে রুবেল। এদিন সে এ কাজে ব্যবহৃত প্লাস, চাকু ও মোবাইল সেট ভেঙ্গে ঝাজর ব্রীজের নীচে খালের পানিতে ফেলে দেয় বলে জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা জানিয়েছে। স্বর্ণ বিক্রির অবশিষ্ট টাকা ও স্বর্ণ উদ্ধারে অভিযান চলছে।