গাজীপুরে গণশুনানিতে তোপের মুখে বিআরটি কর্মকর্তারা
- শেখ আজিজুল হক, গাজীপুর মহানগর
- ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৫:০২
গাজীপুরে গণশুনানি অনুষ্ঠানে তোপের মুখে পড়েছেন বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কর্মকর্তারা। বাস্তবতা-বিবর্জিত ও ভুল নকশা প্রণয়নে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়ারও দাবি উঠে গণশুনানিতে। স্মার্ট বাংলাদেশের পরিবর্তে এই প্রকল্প আদি যুগে নিয়ে যাবে বলেও গণশুনানিতে অভিযোগ উঠে। অপরদিকে কয়েক দফা সময় ও ব্যয় বাড়ানো হলেও বিগত ১২ বছরেও প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত না হওয়ায় এবং এ প্রকল্পের কারণে জনভোগান্তি বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকে।
বুধবার গাজীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভাওয়াল সম্মেলনকক্ষে ঢাকা বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) কোম্পানি লিমিটেডের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে এয়ারপোর্ট-গাজীপুর রুটে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) ব্যবস্থা-সংক্রান্ত মতবিনিময়ের উদ্দেশ্যে উক্ত ‘গণশুনানি ও অংশীজন সভা’র আয়োজন করে বিআরটি কর্তৃপক্ষ। গণশুনানিতে প্রধান অতিথি ছিলেন সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) এ কে এম শামীম আক্তার। গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোঃ সফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিআরটি প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মোঃ মনিরুজ্জামান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, বিআরটি’র প্রকল্প পরিচালক মোঃ ইলিয়াস আহমদ, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) মোঃ আলমগীর হোসেনসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।
গণশুনানি অনুষ্ঠানে বিআরটি প্রকল্পের গুরুতর ১০টি ভুল তুলে ধরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র ও বর্তমান মেয়রের প্রধান উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম। প্রকল্পের গাজীপুর শিববাড়ি অংশে সড়কের ওপর বাস টার্মিনাল নির্মাণকে উদ্ভট মন্তব্য করে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পাশে দু'বিঘা জমি অধিগ্রহণ করে এটি করা যেত। এখন সড়কের ওপর টার্নিমাল করায় উভয়পাশে জ্যাম ও ভোগান্তি আরো বাড়বে।
তিনি বলেন, বিআরটি লেন বাদে মহাসড়কে জায়গা বাকি থাকে প্রায় ১৬ ফিট। এই সরু জায়গা দিয়ে গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তা হয়ে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের গাড়ি স্বাভাবিক গতিতে চলাচল অসম্ভব। তিনি আরো বলেন, বিআরটি প্রকল্পভুক্ত ১১৩টি সংযোগ সড়ক (৫৬ কি.মি) উন্নয়নের কথা থাকলেও প্রকল্পের শুরুতে মাত্র ৫৬টি সড়কের কাজ হয়েছে। যা ইতিমধ্যেই আবার সংস্কারের সময়ও হয়েছে। বিআরটি স্টেশনের সিঁড়ি ফুটপাত রুদ্ধ করায় এবং সিঁড়িগুলো খাড়াভাবে ৩৯ ফিট উঁচু হওয়ায় জনগণের ভোগান্তি আরো বাড়বে।
বিআরটি-প্রদর্শিত চিত্রের সাথে বাস্তবতার অমিল, প্রকল্পের ডিজাইনে মাঝখানে বিআরটি লেন, উভয়পাশে সাধারণ লেন রাখা হলেও ফুটপাত, ওভারব্রিজ ও ড্রেনেজ সিস্টেমে অসঙ্গতিসহ প্রকল্পের বিভিন্ন ভুল-ত্রুটি তুলে ধরে জাহাঙ্গীর আলম বিআরটি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন, আপনারা এত বড় ভুল করলেন কেন? যারা ডিজাইন পরিকল্পনা করেছেন, তারা নিজেদের জন্য করেছেন নাকি জনগণের জন্য করেছেন?
তিনি বিআরটি প্রকল্পের ভুল ডিজাইন ও পরিকল্পনা প্রণয়নের সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার জন্যও গাজীপুর জেলা প্রশাসককে অনুরোধ জানান।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এক সময় রাস্তাঘাট এত উন্নত ছিল না, তখনো আমরা আধা ঘণ্টা বা ৪০ মিনিটে রাজধানীতে যেতে পারতাম। এখন বিআরটি প্রকল্পের মাধ্যমে আমাদেরকে ৪০ মিনিটে বিমানবন্দরে নিবে। তাহলে বিআরটি কি আমাদেরকে আদি যুগে ফিরিয়ে নিচ্ছে? এসময় গাজীপুরের একজন সিনিয়র সাংবাদিক বলেন, বিআরটি লেনে ৩৫ থেকে ৪০ মিনিটে গাজীপুর থেকে বিমান বন্দরে যাওয়া যাবে বলা হচ্ছে। গাজীপুর থেকে বিমান বন্দর পর্যন্ত ২০.৫০ কি.মি সড়কে মোট ২৫টি বিআরটি স্টেশন অর্থাৎ গড়ে প্রতি ০.৮২ কি. কিলোমিটারে একটি করে স্টেশন। প্রতি স্টেশনে দু'মিনিট বাস বিরতি নিলে সময় লাগে ৫০ মিনিট। অর্থাৎ বিরতিতেই যাচ্ছে ৫০ মিনিট তাহলে ৩৫ বা ৪০ মিনিটে বিআরটি বিমানবন্দরে নিভে কিভাবে?
এসময় বিআরটি প্রকল্পের ভুল ডিজাইনের কারণে জনগণের ভোগান্তি লাঘবে সাভার-আশুলিয়া-কড্ডা-জয়দেবপুর ও বিমানবন্দর স্টেশন থেকে রেলপথের দু'পাশ দিয়ে বাইপাস সড়ক নির্মাণের প্রস্তাব করেন জিসিসির উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম। রাস্তার দু'পাশে প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ করে ওভার ব্রিজ, ইউটার্ন রোড সংস্কারেরও দাবি করেন তিনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা