১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

রিমান্ড শেষে মামুনুল হক সম্পর্কে যা বলল পুলিশ

রিমান্ড শেষে মামুনুল হক সম্পর্কে যা বলল পুলিশ - ছবি- সংগৃহীত

চলতি বছরের ২৮ মার্চ হরতালের সময় নারায়ণগঞ্জে নাশকতাকারীদের সাথে কেন্দ্রীয় হেফাজতের নেতারাও ছিলেন। ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদেরকে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর এতে সহযোগিতা করেছেন হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মামুনুল হক নিজেই। এমনটাই জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম।

রোববার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, ২৮ মার্চ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতারা হরতালের দিন নাশকতার সময় উপস্থিত ছিলেন। সেটা মামুনুল হক ভিডিও ফুটেজ দেখে উপস্থিত নেতাদের কার নাম কী, কে কোন পদে আছেন তা নিশ্চিত করেছেন। এ ছাড়া মামুনুল হক যে সোনারগাঁয়ে রয়েল রিসোর্ট যে নারীকে নিয়ে এসেছিলেন ওই নারীকে শরীয়ত বা রাষ্ট্রীয় কোনো আইনে বৈধভাবে বিয়ে করেছেন তার কোনো সঠিত তথ্য বা প্রমাণপত্র দেখাতে পারেনি। ওই নারীকে তিনি বিয়ে করেছেন বলে জানালেও বিয়ের কোনো কাবিননামা, স্বাক্ষী, দেনমোহার বা সাদা কাগজে কোনো প্রকার লিখিত দেখাতে পারেনি।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন- পিবিআই নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) জাহেদ পারভেজ চৌধুরী প্রমুখ।

পুলিশ সুপার জায়েদুল বলেন, জান্নাত আরা ঝর্ণা ধর্ষণের মামলায় মামুনুল হক নিজেই ফেসবুক লাইভে স্বীকার করেছিলেন যে তিনি বৈধভাবে বিয়ে করেননি। জিজ্ঞাসাবাদে আমরা সত্যতা ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। মামলাটি তদন্তাধীন আছে। আশা করি আদালতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই অভিযোগপত্র দাখিল করবো। মামলার বাদী ঝর্ণা রাষ্ট্রের কাছে ন্যায় বিচার চেয়েছেন। আশা করি তিনি ন্যায়বিচার পাবেন।

পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, তার স্থাবর অস্থাবর সম্পদ সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ হিসাব চেয়েছে। আশা করি সেখানে মামুনুল হক তার সম্পদের সঠিক বিবরণী দেবেন। আমরা যে তথ্য পেয়েছি সেখানে মামুনুল হকের ঢাকায় একাধিক বাড়ি আছে। তার মাদরাসাও রয়েছে। ওই মাদরাসায় নামে বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আসে। ওই অর্থ কিভাবে ব্যবহার হতো এর সঠিক আইনগত কোনো প্রক্রিয়া আমরা পাইনি। তিনি তার আয় ব্যয়ের সঠিক হিসাব দিতে পারেননি। তার বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে। প্রতিমাসে তিনি এক কোটি টাকা অনুদান পেতেন। আমরা প্রটিটি বিষয় খতিয়ে দেখছি। কারা এই অনুদান দিত, তদন্তের স্বার্থে নাম বলা যাচ্ছে না। মামুনুল হকের কাছে বিদেশ থেকেও অর্থ আসতো। তবে দেশী বিদেশী যেসব অর্থ আসতো তার বেশিরভাগই মামুনুল হক আত্মসাৎ করেছেন বলে আমাদের তদন্তে প্রতীয়মান হয়েছে।

বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার আরো বলেন, পাকিস্তান থেকেও উগ্রবাদে ব্যবহারের জন্য অর্থ আসতো বলে আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে জেনেছি। আমরা এ বিষয়েও তদন্ত করছি। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না। হয়তো আমরা ভবিষ্যতে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারবো। তার সাথে দেশী ও বিদেশী উগ্রপন্থীদের সম্পর্ক ছিল বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। তবে এ বিষয়ে আরো নিশ্চিত হতে তদন্ত চলমান রয়েছে। মামুনুল হক হেফাজতের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার উচ্চাভিলাসী ছিলেন। তিনি ধর্মীয় দোহাইয়ের অন্তরালে উগ্রবাদীদের নিয়ে দেশে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের চেষ্টায় লিপ্ত ছিলেন। তা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে। তারপরেও আমরা বিস্তারিত তদন্ত করে জানাবো।

তিনি আরো জানান, নাশকতার মামলাগুলোতেও মামুনুল হক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেছেন। ফেসবুক লাইভে তার উস্কানিমূলক বক্তব্যের কারণে যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তা তিনি স্বীকার করেছেন। ইতোমধ্যে আমরা তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছি। ভিডিও ফুটেজ থেকেও মামুনুল হক কয়েকজন নাশকতাকারীকে চিহ্নিত করেছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে পিবিআই নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম বলেন, গত ২৮ মার্চ হেফাজতের হরতালের আগে ২৫ মার্চ নারায়ণগঞ্জে এসেছিলেন মামুনুল হক। তিনি হেফাজতে ইসলামের জেলা শাখার সাবেক মহাসচিব মুফতী বশিরউল্লাহসহ অনেকের সাথে বৈঠক করেছেন। মূলত নাশকতার পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই মামুনুল হক নারায়ণগঞ্জে এসেছিলেন। পরে ৩১ মার্চও নারায়ণগঞ্জে এসেছিলেন মামুনুল হক। আমাদের কাছে জিজ্ঞাসাবাদেও এটা তারা স্বীকার করেছেন। তথ্য প্রযুক্তির সাথেও মিল পাওয়া গেছে। মামুনুল হক আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি না দিলেও তার সহযোগীরা আদালতে জবানবন্দিতে মামুনুল হক ও মুফতী বশিরউল্লাহসহ অনেকের নাম বলেছে। এ ছাড়া মামুনুল হক নিজেও আমাদের দেখানো ভিডিও ফুটেজ বেশ কিছু নাশকতাকারীকে চিহ্নিত করেছেন।

এর আগে নারায়ণগঞ্জের ছয়টি মামলায় ১৮ দিনের টানা রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ৫ জুন দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাউছার আলমের আদালতে তাকে হাজির করা হয়। পুলিশ কোনো মামলায় পুনরায় রিমান্ড আবেদন না করায় আদালত মামুনুল হককে এ দিন কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর আগে ১৮ মে কাশিমপুর কারাগার থেকে মামুনুল হককে রিমান্ডে আনা হয়।

প্রথম তিন দিন কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণার দায়েরকৃত ধর্ষণ মামলায় মামুনুল হককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে সোনারগাঁও, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পৃথক আরো পাঁচটি মামলায় পুলিশ, সিআইডি ও পিবিআই মামুনুল হককে জিজ্ঞাসাবাদ করে। ছয়টি মামলায় ছয়জন তদন্তকারী কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। তবে কোনো মামলায় মামুনুল হক আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেননি।

উল্লেখ্য এর আগে গত ১২ মে সোনারগাঁও থানায় দায়ের করা কথিত দ্বিতীয় স্ত্রীর ধর্ষণ ও সহিংসতার চারটিসহ পাঁচ মামলায় হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রতিটি মামলায় তিন দিন করে মোট ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।


আরো সংবাদ



premium cement