২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ভাঙ্গায় যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে হাতুড়ি পেটা করল স্বামী

ভাঙ্গায় যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে হাতুড়ি পেটা করল স্বামী - ছবি : প্রতীকী

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের ছলিলদিয়া গ্রামে যৌতুকের টাকা না পেয়ে স্ত্রীকে হাতুড়ি দিয়ে নির্মমভাবে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ওই গৃহবধূ গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি ভাঙ্গা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালে উপজেলার লোহারদিয়া গ্রামের নুরু হাওলাদারের মেয়ে হোসনে আরা বেগমের সাথে পাশের ছলিলদিয়া গ্রামের সামাদ মল্লিকের ছেলে বাবুল মল্লিকের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই স্বামী বিভিন্নভাবে তাকে অত্যাচার করতে থাকেন।

হোসনে আরা বেগম অভিযোগ করে বলেন, বিয়ের পর থেকেই বিভিন্ন অযুহাতে স্বামী বাবুল মল্লিক যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকেন। টাকা দিতে না পারলেই তার ওপর অত্যাচার করা হতো। ইতোমধ্যে কয়েকবার বাবার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা এনে দিলেও তার মন গলেনি। বিভিন্নভাবে অত্যাচার করলেও স্বামীর বাড়িতে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করেন তিনি। দীর্ঘ এ দাম্পত্য জীবনে জন্ম নেয় তাদের তিন সন্তান। নিরব (১২), লিপন (৮) ও খাদিজা (৪)।

ওই গৃহবধূ জানান, স্বামী ভালো হবে এ আশা আর সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে শ্বশুর বাড়ির শত অত্যাচার সত্ত্বেও অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকেন তিনি। কিন্তু স্বামী, শাশুড়ি মিলে অমানসিক নির্যাতন অনবরত করতে থাকে।

তিনি জানান, এর আগে গলায় ফাঁস দিয়ে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার চেষ্টাও চালানো হয়। ওই ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। সম্প্রতি ওয়ারিশ সূত্রে পৈতৃক জমিতে রেল অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের কিছু টাকা পেয়েছেন হোসনে আরা। ওই টাকাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে তার জন্য। প্রতিদিনই ওই টাকার জন্য অত্যাচার করেন স্বামী। টাকা না পেয়ে তার ওপর চালান অমানসিক নির্যাতন। হাতুড়ি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পিটিয়ে অচেতন অবস্থায় ফেলে রেখে যান। পরে তাকে প্রতিবেশীদের সহায়তায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। বর্তমানে অসহায় অবস্থায় তিন সন্তান নিয়ে মানবেতরভাবে তার ঠাই হয়েছে বাবার বাড়িতে। শিশু নিরব তার মায়ের ওপর বাবার অত্যাচারের বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁদে দেয় এ প্রতিবেদকের সামনে।

হোসনে আরার ভাই মালয়েশিয়া প্রবাসী মো: সোহেল হাওলাদার বলেন, ‘বোনটিকে বিয়ের পর থেকেই স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন অব্যাহতভাবে অত্যাচার নির্যাতন চালিয়ে আসছে। যৌতুকের দাবি ছাড়াও একাধিকবার হামলা চালিয়ে আমাদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা কেড়ে নিয়েছেন তিনি। আমাদের সামনেই হামলা ও মারধর করে তিন লাখ টাকা ছিনিয়ে নেন। তিনি একজন (বাবুল মল্লিক) উচ্ছৃঙ্খল ও বেয়াড়া প্রকৃতির। যেকোনো সময় অঘটন ঘটাতে পারে আশঙ্কায় আমরা আতঙ্কে থাকি।’

চাচা কালাম হাওলাদার বলেন, ‘বিয়ের পর থেকেই হোসনে আরাকে অত্যাচার নির্যাতন করে আসছে। এ নিয়ে এলাকায় একাধিকবার সালিশি বৈঠক হয়েছে। কিন্তু তিনি কোনো কিছুর তোয়াক্কা করেছেন না।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘অভিযোগের পর আমি মেয়েটির বাড়িতে গিয়ে খোঁজ-খবর নিয়েছি। দুই পরিবারের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। পারিবারিকভাকে মীমাংসার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। এ দিকে হামলার ঘটনায় ওই গৃহবধূ ভাঙ্গা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।

এ ব্যাপারে ভাঙ্গা থানার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আমিনুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিদর্শন করেছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement