আঙ্গিনায় মাল্টা চাষে সফল মনির
- মোঃ হুমায়ূন কবীর, নাগরপুর (টাঙ্গাইল)
- ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১১:৩১
এক সময়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম মনির বাড়ির আঙ্গিনায় মাল্টা চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। স্বপ্ন পূরণের গল্প শুরু হয়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসার সুবাদে কৃষিবিদ উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ ছারেয়ার হোসাইনের পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতায়। মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন মনির। সংসারের চাকা ঘুরাতে পড়ালেখা বাদ দিয়ে ব্যবসায় বসতে হয়েছে। এ পেশায় জীবন চলেছে ১৫ বছর।
জীবনের ঘানিটানা মনির ক্ষুদ্র ব্যবসার মাধ্যমে নতুন জীবন শুরু করলেও সম্প্রতি মাল্টা চাষে হাসি ফুটেছে মুখে।
মনিরুল ইসলাম মনিরের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুরের সহবতপুর ইউনিয়নের ইরতা গ্রামে। প্রায় তিন বছর আগে পরিবারের পুষ্টির চাহিদা মেটানোর জন্য বাড়ির আঙ্গিনায় মাল্টা চাষ করেন। দুই বছর ধরে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে চলেছেন মাল্টা। এখন ব্যাপক লাভবান হয়েছেন। তিনি এ বছরও বাড়ির চাহিদা মিটিয়ে কয়েক হাজার টাকা আয় করছেন শুধু মাল্টা বিক্রি করেই এবং কম করে হলেও আরো ১০ হাজার টাকা আয় হবে বলেও জানান তিনি।
নতুন উদ্যোক্তা মনির যুবকদের উদ্যেশে বলেন, বেকার ঘরে বসে না থেকে ফল-ফুল ও সবজির বাগান করে বিপুল পরিমাণ আয় করা যায়। এ মাটিতে যেকোন ধরনের ফসলাদি ফলানো সম্ভব, কিন্তু এতে থাকতে হবে কঠোর প্রচেষ্টা। যেকোন বয়সের নারী-পুরুষও এগিয়ে আসতে পারেন এ পেশায়। বাণিজ্যিকভাবে না হোক বাড়ির চাহিদা মেটানোর জন্যও দারুণ ভূমিকা রাখতে পারবে মাল্টা চাষে। এ ছাড়াও যদি কেউ নতুন উদ্যোক্তা হতে চায় সে ক্ষেত্রে বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করারও আশ্বাস দেন তিনি।
মনির প্রায় ১০ শতাংশ বাড়ির আঙ্গিনায় বারি-১ জাতের মাল্টা চাষ করেছেন। ইতোমধ্যে বাড়ির আঙ্গিনায় বিদেশি ফল মাল্টা চাষ করে সফল হয়েছেন তিনি। এই প্রথম উপজেলায় বসতবাড়িতে ছোট বাগান আকারে মাল্টার চাষ হওয়াতে প্রতিদিন তার বাগানটি দেখতে দুর-দুরান্ত থেকে লোকজন আসেন। তার বাগানে ৩৫টি মাল্টা গাছ রয়েছে।
তিনি জানান, স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহযোগিতায় সাবেক ব্লক সুপারভাইজার উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ ছারোয়ার হোসাইনের পরামর্শে তিন বছর আগে বাড়ির আঙ্গিনায় ফেলে রাখা প্রায় ১০ শতাংশ জায়গায় মাল্টা গাছ লাগান। এক বছরের মধ্যেই গাছে ফুল ও ফল দেখা যায়। প্রথম বছর ফলও ভালো এবং স্বাদেও মিষ্টি ছিল। মাল্টা চাষ লাভজনক হওয়ায় কৃষি বিভাগ থেকে সহযোগিতা পাওয়ায় এবার অন্যান্য জমিতে মাল্টা বাগান করার ইচ্ছা রয়েছে তার। তবে মাল্টা নতুন চাষ করায় কেমন হবে- এ নিয়ে শঙ্কিত না হয়ে তিনি নিয়মিত পরিচর্যা করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছেন বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রুবেল আহম্মেদ বলেন, ওই চাষী মাল্টা চাষে আগ্রহী। তার বাড়ির আঙ্গিনায় মাল্টা গাছ নিয়মিত দেখাশোনা করাসহ শীত মৌসুমে পানির অভাবে গাছগুলো নষ্ট হতে পারে বিধায় উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণের মাধ্যমে ড্রিপ ইরিগেশনের সেচের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। আশা করছি ওই চাষীর আঙ্গিনাতে মাল্টা চাষে সফলতা দেখে দিন দিন উদ্যোক্তা বাড়বে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ মতিন বিশ্বাস বলেন, মনিরুল একজন মডেল চাষী। বাড়ির আঙ্গিনায় মাল্টা চাষ করে তিনি তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। মাল্টা চাষেও তার সফলতা দেখা যাচ্ছে।
মাল্টা চাষ বিষয়ে তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে প্রায় সব মৌসুমী জলবায়ু মাল্টা চাষের জন্য উপযোগী ও ফলনের জন্য অনুকূল। অতিপুষ্টি ও ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ ফল মাল্টা। সাধারণত জুন থেকে জুলাই মাস মাল্টা গাছ রোপণের উপযুক্ত সময়। তবে পানি সেচের ব্যবস্থা থাকলে সারা বছর রোপণ করা যায়।’
তিনি আরো বলেন, যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে ‘প্রথম বছর প্রতি গাছ থেকে ২০-৫০টি, দ্বিতীয় বছর ১০০-১৫০ ও তৃতীয় বছর তারও বেশি সংগ্রহ করা যাবে। ধীরে ধীরে কৃষকরা এ ফল চাষে আগ্রহী হবেন বলে আশা করছি। নতুন উদ্যোক্তাদের চাষের জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা