২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৩ শাবান ১৪৪৬
`

শাড়িতে চুমকি পাথরের নকশা করে স্বাবলম্বী রহিমা

শাড়িতে চুমকি পাথরের নকশা করে নারী ও শিশুরা - ছবি : নয়া দিগন্ত

বড় স্বপ্ন ও আশা নিয়ে হাতে মেহেদি পড়ে বধু বেশে স্বামীর ঘরে গিয়েছিলেন রহিমা। গিয়েই দেখেন, দিনমজুর স্বামীর অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। যেদিন স্বামী কাজে যান, সেদিন উনুনে হাড়ি পাতিল বসে আর না হলে সারাদিন উপোস থাকতে হয়। এর মাঝেই রহিমার কোলজুড়ে আসে কন্যা সন্তান। বেড়ে যায় চাহিদা। সংসারে সবার মুখে আহার ও ভরণ-পোষণ দিতে হিমশিম খায় স্বামী দ্বীন ইসলাম। অভাবের তাড়নায় হতাশায় কালো ছাপ পড়ে তার মুখে। স্বামীর দিকে ফিরে তাকাতে পারেন না রহিমা। তাই একদিন ছুটে যান পাশের বাড়ির ভাবীর কাছে। সেখান থেকে সুঁই, সুতা আর চুমকি পাথর দিয়ে শাড়িতে নকশার কাজ শিখে আসেন। পরদিন মহাজনের কাছ থেকে এক রঙের শাড়ি নিয়ে এসে শুরু করেন নকশা আঁকা। এরপর থেকে আর পেছনের দিকে তাকাতে হয়নি তাকে। এখন সে শাড়ি কারখানার ম্যানেজার। তার মাসিক মজুরি ১২ হাজার টাকা। ওই কারখানায় তার মতো আরো ৭০ জন নারী শাড়িতে কাজ করেন। তাদের কাজের তদারকি ও দেখাশোনা দায়িত্ব তার উপর।

এই নকশির কাজ করে পৌরসভায় তিন শতক জমি কিনে বাসা তৈরি করেছেন রহিমা। এখন সংসার অভাব নেই। স্বামীর রোজগার ও তার উপার্জিত অর্থ দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যেই চলছে সংসার। মেয়েকেও পড়াচ্ছেন ভালো স্কুলে।

রহিমার বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার দ্বীপেশ্বর গ্রামে। হোসেনপুর উপজেলায় ৩০টি গ্রামে রহিমার মতো সালেহা, আছিয়া, সেলিনা সহ সহস্রাধিক নারী ও শিশুরা শাড়িতে কাজ করে ভাগ্য পরিবর্তন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এখন তাদের কারো সংসারে অভাব নেই।

সরেজমিনে উপজেলার শাহেদল, কুড়িমারা, রহিমপুর, আশুতিয়া, দ্বীপেশ্বরসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি বাড়িতে পুরোদমে শাড়িতে পুতি ও সুতা দিয়ে বিভিন্ন নকশার বাহারি রঙের শাড়িতে কাজে ব্যস্ত রয়েছেন নারী ও শিশুরা। এসব শাড়িগুলো ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শাড়ি ব্যবসায়ী ও মহাজনদের নিকট থেকে এক রঙের ডিজাইন আঁকা অবস্থায় নামমাত্র মজুরির চুক্তিতে নিয়ে আসেন তারা। এরপর শাড়িতে দরিদ্র পরিবারের নারী ও শিশুরা মিলে শাড়ির ডিজাইন মতো সুতা ও পুতি দিয়ে নকশা প্রস্তুত করে থাকেন। যেইসব শাড়িতে ডিজাইন থাকে বেশি সেসব শাড়িতে নকশা তৈরিতে দুই থেকে তিন দিন সময় লাগে। একেকটা শাড়ির ডিজাইন ও প্যাটার্ন ভিত্তিক মজুরি ভিন্ন হয়ে থাকে। বেশি ডিজাইনকৃত শাড়িতে নকশার মজুরি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা শাড়ি ব্যবসায়ীগণ নকশার কারিগরকে দিয়ে থাকেন। ওইসব শাড়িগুলো রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন নামিদামি মার্কেটে বিক্রি হয়।

শাড়িগুলো খুচরা বিক্রেতারা ৮ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে থাকে।

নকশা কারিগর রহিমা জানান, সংসারের দিনমজুর স্বামীর পক্ষে ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ ও খাবার জোগাড় করা কষ্টসাধ্য ছিল। ফলে বাড়তি কিছু উপার্জনের জন্য শাড়ির নকশাতে কাজ করে আজ স্বাবলম্বী হতে পেরেছি।
শাহেদল গ্রামের শাড়িতে নকশা কর্মী সালেহা বলেন, পারিবারিক অস্বচ্ছলতার দরুণ শাড়িতে কাজ করে স্বাচ্ছন্দ্যে ভালোভাবে সংসার চালাতে পারছি।

কুড়িমারা গ্রামের নকশা কর্মী বিলকিস বলেন, অভাবের তাড়নায় শাড়ির কাজ করছি। তবে মহাজনরা যদি আরো বেশি মজুরি দিত, তাহলে ভালোভাবেই সংসার চালাতে পারতাম। এজন্য তারা সুঁই, সুতার কারিগরদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা দাবি জানান।

এ ব্যাপারে ঢাকার শাড়ির ব্যবসায়ী আবদুল কালামসহ অনেকে জানান, পুতি-সুতার মূল্য বেশি, পরিবহন খরচ ও আনুসাঙ্গিক ব্যয় বাদে তাদের খুব বেশি লাভ থাকে না। তাই সুঁই সুতার কারিগরদের পারিশ্রমিক বাড়ানো আপাতত সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন তারা।


আরো সংবাদ



premium cement
অন্তবর্তী সরকার লক্ষ্য থেকে ‘কিছুটা হলেও বিচ্যুত হচ্ছে’ : তারেক রহমান রংপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩, আহত ১০ জুলাই বিপ্লব : কোন দিকে যাচ্ছে জেন জেড রাখাল রাহাকে গ্রেফতার ও র‍্যাব সদস্য আলেপের শাস্তির দাবিতে হাটহাজারীতে বিক্ষোভ সমাবেশ সাভারে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ ৭ চিকিৎসা খাতের সংস্কার ও পদোন্নতি কমলগঞ্জে সেন্ডেল ও ভাঙা প্যাডেলের সূত্র ধরে ঘাতকদের আটক করলো পুলিশ কুমিল্লা আদালতে বাদীকে পিটিয়ে আহত করল আসামিরা রাজবাড়ী জেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি আবদুল জব্বার গ্রেফতার ২২ দিনে রেমিট্যান্স এলো ১৯২ কোটি ডলার গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য দ্রুততম সময়ে নির্বাচন দিন : নজরুল ইসলাম খান

সকল