কালাপাহাড়, দিনে খায় ১ হাজার টাকার খাবার
- এম মনিরুজ্জামান, রাজবাড়ী সংবাদদাতা
- ১৮ জুলাই ২০২০, ১৪:১৭, আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২০, ১৪:২২
গায়ের রঙ কালো, দেখতে পাহাড়ের মত। তাই গৃহকর্তা শখ করে তার নাম রেখেছেন কালাপাহাড়। এটি ১৭ শ’কেজি ওজনের একটি ষাঁড়। ২০১৫ সালে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার ইলিশকোল গ্রামে কাছেদ আলীর গাভীর গর্ভে কালাপাহাড়ের জন্ম হয়। কোনো প্রকার কৃত্রিম খাদ্য ছাড়াই প্রাকৃতিক খাবার দিয়ে ষাঁড়টিকে সযত্নে লালন পালন করেছেন খামারি। আসন্ন কোরবানীর ঈদে ন্যায্য মূল্য পেলে কালাপাহাড়কে বিক্রি করতে চান তিনি।
জন্মের পর থেকে প্রতিদিন ২৫ লিটার দুধ পান করতো কালাপাহাড়। মা গাভীর দুধ অত্যন্ত পাতলা হওয়ায় সেটি কিনতে চাইতেন না কেউ। ফলে কাছেদ আলী পুরো দুধই পান করতে দিতেন কালো পাহাড়কে। ১৪ মাসে সাড়ে ৩ থেকে ৪ টন দুধ পান করেছে কালাপাহাড়।
ষাঁড়টির ওজন ৪২ মণ অর্থাৎ দেড় টনের বেশি। ছয় দাঁতের কালাপাহাড়ের দৈর্ঘ্যে সাড়ে ৯ ফুট, উচ্চতা ৫ ফুট। প্রায় দৈত্য আকৃতির শাহীওয়াল জাতের ষাঁড়টি দিনে খায় এক মণ খাবার। এতে খামারির দৈনিক ব্যয় এক হাজার টাকা। আসন্ন কোরবানীর ঈদে ষাঁড়টিকে দশ লাখ টাকায় বিক্রি করতে চান তিনি। তবে জন্মের পর থেকে কালো পাহাড় যে দুধ ও খাবার খেয়েছে তাতে এমন তিনটি ষাঁড় বিক্রি করলেও ওই টাকা উঠবে না বলে জানান কাছেদ আলী।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেলো, উপজেলা প্রাণিসম্পদ চিকিৎসকদের পরামর্শে কালাপাহাড়কে খাবার হিসেবে দেয়া হচ্ছে ঘাস, ভুসি, ভুট্টার গুঁড়া, গমের গুঁড়া, কলাসহ বাড়িতে তৈরি খাবার।
খামারি কাছেদ আলী খান জানান, খামারে পালন করা একটি উন্নত জাতের শাহীওয়াল গাভীর পেটে জন্ম নেয় কালাপাহাড়। ছোটবেলা থেকে ষাঁড়টি তার মায়ের প্রতিদিন ২৫ লিটার দুধ খেত। একটানা দেড় বছর এভাবে দুধ খেয়েছে। পরে প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে চার বছর ধরে ষাঁড়টিকে বিশাল আকৃতির করা হয়। ষাঁড়টি প্রতিদিন এক হাজার টাকার প্রাকৃতিক খাবার খায় বলেও জানান তিনি।
গত কোরবানীর ঈদে ১১ লাখ টাকা দাম উঠেছিল কালাপাহাড়ের। এবার ন্যায্য মূল্য পেলে ষাঁড়টি বিক্রি করতে চান তিনি। করোনার প্রভাবে এবার গরুর দাম কম। তাই কালাপাহাড়ের দাম ১৪ লাখ টাকা পেলে বিক্রি করবেন তিনি। দেশের যেকোনও জায়গা যে কেউ ষাঁড়টি কিনলে নিজ দায়িত্বে সেখানেই পৌঁছে দেয়া হবে।
কালাপাহাড়কে দেখতে আসা মাগুরা জেলার রাসেল খান বলেন, ‘ফেসবুকে কালাপাহাড়ের ছবি দেখেই দেখতে চলে এসেছি। এত বড় ষাঁড় এর আগে কোনোদিন দেখিনি।’
কুষ্টিয়া জেলা থেকে আসা গরু ব্যবসায়ী জাহিদ হাসান বলেন, ‘কালাপাহাড় ষাঁড়টি বিশাল আকারের। ষাঁড়টি দেশি খাবার খেয়ে বড় হয়েছে। তাই গোশত ভালো মানের হবে।’
যদি কোন সৌখিন ব্যক্তি ষাঁড়টিকে কিনেন তাহলে প্রয়োজনে কোরবানীর ঈদ পর্যন্ত নিজ খরচে লালন পালন করে গন্তব্যস্থলে পৌছে দেয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন কাছেদ আলী।
শুধু বালিয়াকান্দিতেই নয় রাজবাড়ী জেলা বা দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে এতো বড় ষাঁড় দ্বিতীয়টি নেই বলে ধারণা করছেন কেউ কেউ।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও বালিয়াকান্দি উপজেলার অতিরিক্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সরকার আশ্রাফুল ইসলাম বলেন, ‘রাজবাড়ী জেলায় ছোট বড় খামার রয়েছে প্রায় ৫ শতাধিক। খামারগুলোতে দেশিসহ বিভিন্ন জাতের গরু রয়েছে। এদের মধ্যে কাছেদ খানের কালাপাহাড় গরুটি সবচেয়ে বড়। তিনি ষাঁড়টিকে সঠিক নিয়মে পালন করেছেন। আশা করি কোরবানির হাটে ন্যায্যমূল্য পাবেন।’
রাজবাড়ী জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ ফজলুল হক সরদার জানান, সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাবার খেয়েই ষাঁড়টি এত বড় হয়েছে। এটি রাজবাড়ী জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় ষাঁড় বলেও দাবি করেন তিনি। ষাঁড়টির মালিকের উপযুক্ত দাম পাওয়ার হক রয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা