০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১,
`

ধামরাইয়ে লেবু চাষে করে স্বাবলম্বী মীর হোসেন

লেবুচাষী মীর হোসেন - ছবি : নয়া দিগন্ত

ঢাকার ধামরাইয়ে স্বল্প পুঁজি নিয়ে লেবু চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে বেকারত্ব দূর করেছেন অনেক যুবক ও সাধারণ কৃষক। সরকারীভাবে একটু সহযোগীতা পেলে বিদেশে লেবু রফতানি করে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব বলে জানালেন লেবুচাষী মীর হোসেন।

কৃষিবিভাগের তথ্যানুসারে, এ বছর ধামরাই উপজেলার বালিয়া, যাদবপুর, গাংগুটিয়া, আমতা, বাইশকান্দা, সোমভাগ, সানোড়া, কুশুরাসহ মোট ১১টি ইউনিয়নে প্রায় ৬২০ হেক্টর জমিতে লেবু চাষ করা হয়েছে। এলাকার অনেক বেকার যুবকসহ বিভিন্ন পেশার লোকজন ব্যক্তিগত ও বানিজ্যিকভাবে, কেউ কেউ নিজের জমি চাষের পাশাপাশি অন্যের জমি ইজারা নিয়েও স্বল্প পুঁজিতে লেবুচাষ করেছে। একবার লেবুর চারা লাগিয়ে কমপক্ষে ৫/৬ বছর ফসল পাওযা যায়।

বাজারে লেবুর চাহিদা থাকায় ও ভাল দাম পাওয়ায় দিন দিন ধামরাইতে লেবু চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গাছে লেবু ধরা শুরু করলে বছরে প্রায় ১২ বার লেবু সংগ্রহ করা যায়।

এ প্রসঙ্গে উপজেলার কুশুরা ইউনিয়নের পাড়াগ্রাম গ্রামের বাসিন্দা লেবুচাষী মীর হোসেন (৪২) জানান, তার ছয় বিঘা জমি রয়েছে। এ জমিতে আগে ধানসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ করতেন। ধান চাষে প্রতি বিঘায় খরচ বাদে বছরে পাঁচ হাজার টাকা মুনাফা থাকতো না। আবার অতিবৃষ্টি, খড়ার কারণে ফসল নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা তো থাকতোই।

ধান চাষে লাভবান না হওয়ার ফলে তিনি লেবু চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েন। প্রথমে নিজের জমিতেই লেবু চাষ শুরু করেন। পরের বছর নিজের লেবু ক্ষেতে কলম তৈরি শুরু করে অন্য জমিতে তা রোপন করেন। বর্তমানে তিনি নিজের জমি বাদে অন্যের জমি বার্ষিক ইজারা নিয়েও লেবু চাষ করছেন। লেবু চাষে উৎপাদন খরচ একেবারেই কম, অন্যদিকে বর্ষার পানিতেও তেমন নষ্ট হয় না। আবার রোগ বালাইও কম থাকায় তার খরচ বাদ দিয়ে প্রতি বছরে এক বিঘা জমি থেকে মুনাফা হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। চাহিদা আরো বেশি হলে বছরে আয়ও বেড়ে যায় অনেক।

জানা যায়, বর্তমানে করোনভাইরাসসহ বিভিন্ন রোগের কারণে লেবুর দাম অনেক বেশি। আগের চেয়ে এ বছর তিন থেকে চার গুণ দাম বেশি পাচ্ছে কৃষকরা। বর্তমানে এক হাজার লেবুর দাম সাত থেকে আট হাজার টাকা। এখন একটু দাম কমে গেছে। কিন্তু রমযানের শুরুতে লেবুর বেশ চাহিদা ছিল। তখন জমি থেকে লেবু তুলে শেষ করতে পারতাম না। এক হালি লেবু আমরা ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করেছি। ঢাকা শহরের বড় বড় ব্যাপারীরা চলে আসে ধামরাইতে। কোনো কৃষককে আর লেবু নিয়ে বাজারেও যেতে হয় না।

মীর হোসেন আরো বলেন, তিনি প্রায় ১৮ একর জমিতে বর্তমানে লেবু চাষ করছে। তিনি প্রায় ১৫ বছর ধরে লেবু চাষ করে চলেছে। তার লেবু চাষ করে বছরে বেশ ভালই আয় করে থাকে।

তিনি এ বছর ৩০ লাখ টাকা দিয়ে অন্যের জমি ইজারা নিয়েছেন। আর পরিচর্যা খরচ হিসেবে আরো ১০ লাখ টাকা খরচ হবে। তারপরও বড় কোনো ঝামেলা না হলে খরচ বাদে সাত থেকে দশ লাখ টাকা লাভ হবে বলে আশা করছেন।

তিনি আরো বলেন, যদি আমরা সরকারীভাবে প্রশিক্ষণ ও ব্যাংক ঋণের সুবিধা পাই তবে আরো ভালো করে চাষ করতে পারব এবং আমাদের লেবু এক সময় বিদেশেও রফতানি করা যাবে।

বর্তমানে লেবু চাষ করে ধামরাইয়ের অনেকেরই ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। তাই লেবু চাষের দিকে অনেকেই এগিয়ে আসতে শুরু করেছে এবং অন্য ফসলের চাষ বাদ দিয়ে লেবু চাষের দিকে আগ্রহ তৈরি হচ্ছে। যেহেতু এই ফসল চাষে ক্ষতির কোনো সম্ভাবনা নাই।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুল হাসান বলেন, এ বছর ধামরাইতে প্রায় ৭৫০ হেক্টর জমিতে লেবু চাষ করা হচ্ছে। যার উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা প্রায় আট হাজার মেট্রিক টন। ধামরাইতে যদি সরকারীভাবে লেবু বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা থাকত তবে কৃষকরা বেশি লাভবান হতো।


আরো সংবাদ



premium cement