২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

দৌলতদিয়ায় প্রশাসনের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো পতিতার জানাযা

জানাযার দৃশ্য - ছবি : নয়া দিগন্ত

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশের উদ্যোগে দৌলতদিয়া পতিতাপল্লীর এক পতিতার জানাযার নামাজ ও দোয়ার অনুষ্ঠান হয়েছে। ২ ফেব্রুয়ারি এ পল্লীর বাসিন্দা হামিদা বেগমের মৃত্যুর পর তার জানাযার মাধ্যমে প্রথম এ ধরনের কার্যক্রম চালু হলো। এতদিন এসব পতিতার মৃত্যুর পর তাদের লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়া বা মাটিচাপা দেয়া হতো।

পরে বৃহস্পতিবার বাদ আসর পতিতাপল্লীর পাশে পতিতাদের জন্য নির্মিত কবরস্থান এলাকায় হামিদা বেগমের তিন সন্তান ও পল্লীর কয়েকজনের সহযোগিতায় মিলাদ, দোয়া ও খাবারের আয়োজন করা হয়। দোয়ার অনুষ্ঠান সার্বিক তত্ত্বাবধায়ন করেন গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি আশিকুর রহমান পিপিএম। তবে জানাযা ও দোয়ার অনুষ্ঠান পরিচালনাকারী দুই ইমাম সামাজিকভাবে প্রচণ্ড চাপে রয়েছেন বলে জানা গেছে।

গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ায় দেশের বৃহত্তম পতিতাপল্লীর অবস্থান। জানা যায়, এখানে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে প্রায় পাঁচ হাজার পতিতার বসবাস। এখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে কারো মৃত্যু হলে পদ্মা নদীতে লাশ ডুবিয়ে দেয়া হতো। কয়েক বছর আগে তাদের জন্য পল্লীর পাশে কবরস্থান তৈরি করা হয়। তবে মৃত ব্যক্তিকে সেখানে জানাযা-কাফন ছাড়াই দেয়া হতো মাটিচাপা।

গত ২ ফেব্রুয়ারি আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে পতিতাপল্লীর বাসিন্দাদের সাথে গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশের মতবিনিময় সভা চলাকালে হামিদা বেগমের (৬৫) মৃত্যুর খবর আসে। এ সময় পল্লীর বাসিন্দারা পুলিশের কাছে নিহত হামিদা বেগমের জানাযাসহ দাফনের দাবি তোলেন। গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি আশিকুর রহমান তাদের দাবির প্রেক্ষিতে নিহত ওই নারীর জানাযা, দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করেন।

ওই নারীর জানাযায় ওসি ছাড়াও অংশ নেন দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মন্ডল, স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল জলিল ফকীর প্রমুখ।

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল জলিল ফকীর জানান, অতীতে দৌলতদিয়া পতিতাপল্লীর বাসিন্দা কেউ মারা গেলে জানাযা ও দোয়ার অনুষ্ঠান করা হতো না। আসল কথা হলো কোনো হুজুর জানাযা নামাজ পড়াতে রাজিই হতেন না। তাই বাধ্য হয়ে মৃত ব্যক্তিকে মাটিচাপা দেয়া হতো। গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসির উদ্যোগ নেয়ায় আজ এটা সম্ভব হয়েছে।

গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি আশিকুর রহমান বলেন, মৃত হামিদা বেগমের জানাযার নামাজ ও দোয়ার অনুষ্ঠানের জন্য হুজুরদের রাজি করাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। তবুও আমি তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। এখানকার জানাযা পড়ালে নাকি বাইরের সমাজে তাদের সমস্যায় পড়তে হয়। মানুষের পাপ-পূণ্যের বিচার করার মালিক আল্লাহ। আমরা সে বিচার করতে পারি না। এখন থেকে দৌলতদিয়া পতিতাপল্লীর প্রতিটি বাসিন্দার জন্য জানাযাসহ দাফন নিশ্চিত করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement