বেলুন মেকার দিয়ে চলছে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের কাজ
- হারুন আনসারী, ফরিদপুর
- ০৫ নভেম্বর ২০১৯, ২১:৩১
বেলুন উড়িয়ে মেঘের নিচে পাঠিয়ে আবহাওয়ার অবস্থা নির্ণয় করার জন্য উড়ানো হয় বৃহদাকার বেলুন। যারা এসব বেলুনে গ্যাস ভরে আকাশে উড়ান তাদের বলা হয় বেলুন মেকার। দেশের বিভাগীয় আবহাওয়া অফিসগুলোতেই সাধারণত এসব বেলুন উড়ানো হয়।
তবে ফরিদপুর আবহাওয়া দপ্তরটি বিভাগীয় কার্যালয় না হলেও এখানে দু’জন বেলুন মেকার রয়েছেন। বেলুন না উড়িয়েই যারা গত পাঁচ বছর যাবত বেতন নিচ্ছেন।
যদিও আবহাওয়া দপ্তরের দাবি, বেলুন না উড়ালেও তারা বসে বসে বেতন নিচ্ছেন না। এসব বেলুন মেকারগণই এখানে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের কাজ করছেন। কারণ এখানে আবহাওয়া পর্যবেক্ষকের পাঁচটি পদ থাকলেও সবক’টি পদই শূন্য।
জানা গেছে, ফরিদপুর আবহাওয়া দপ্তরের সিনিয়র ওয়েদার অবজারভার (জেষ্ঠ্য আবহাওয়া পর্যবেক্ষক) পদ রয়েছে ৩টি এবং আবহাওয়া সহকারী পদ রয়েছে ২টি। এসব পদগুলো শূন্য থাকায় বেলুন মেকারগণই এখানে আবহাওয়া পর্যবেক্ষকের কাজ করছেন।
জানা গেছে, আবহাওয়ার আগাম পূবার্ভাস দেওয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ফরিদপুর জেলা আবহাওয়া দপ্তরটি স্থাপন করা হয়। একসময় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভবনে এ দপ্তরের কাজ চলতো। পরবর্তীতে ১৯৮১ সালে শহরের চাঁদমারিতে এক একর ৫৪ শতাংশ জায়গার উপর প্রতিষ্ঠা করা হয় নিজস্ব কার্যালয়।
নিজস্ব জমিতে ভবন নির্মিত হলেও অদ্যাবধি এখানে প্রযুক্তির উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। গত ৩৮ বছরের পুরনো গুরুত্বপূর্ণ এই সরকারি দপ্তরটি এখনও চলছে মান্ধাতার আমলের এনালগ পদ্ধতিতে।
জানা গেছে, একজন পেশাগত সহকারী, ৩টি সিনিয়র ওয়েদার অবজারভার তথা জেষ্ঠ্য আবহাওয়া পর্যবেক্ষক এবং ২টি আবহাওয়া সহকারী পদ সহ ফরিদপুরের এই আবহাওয়া দপ্তরে পদ রয়েছে ৭টি।
এরমধ্যে বর্তমানে সিনিয়র ওয়েদার পর্যবেক্ষক ও আবহাওয়া সহকারী পদে কেউ কর্মরত নেই। সেখানে একজন পেশাগত সহকারীসহ কর্মরত আছেন মোট পাঁচজন। বেলুন না থাকলেও এখানে বেলুন ওড়ানোর জন্য রয়েছেন দু’জন বেলুন মেকার। যারা আবহাওয়া পর্যবেক্ষকের দ্বায়িত্ব পালন করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এখানে বায়ুর চাপ পরিমাপের জন্য ব্যারোমিটার, কতক্ষণ সূর্য ছিলো সেটি জানার জন্য সানশাইন রেকর্ডার, সূর্যের তীব্রতা মাপার জন্য পাইরোমিটার, শিশির পরিমাপের জন্য ডিউব্যালেন্স, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য থার্মোমিটার, উইন্ডশিল্ড পরিমাপের জন্য কাপ এনোমিমিটার, বাতাসের দিক নির্ণয়ের জন্য উইন্ড ব্যান্ড, বৃষ্টির পরিমাপ জানার জন্য সেলফ রেকর্ডিং রেইনগজসহ আনুষঙ্গিক আরো কিছু যন্ত্রপাতি রয়েছে। সবই পুরনো। এরমধ্যে বেশ কিছু যন্ত্রপাতি অচল হয়ে পড়েছিলো যেগুলো আবার মেরামত করে সচল করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন।
এখানকার জলবায়ু পর্যবেক্ষণ ও আবহাওয়ার সূচক সংগ্রহে ব্যবহৃত যন্ত্রগুলো অনেকদিনের পুরানো হয়ে পড়েছে। মাঝেমাঝেই সেগুলো অকেজো হয়ে পড়ে। তারপর আবার মেরামত করে ঠিক করা হয়। অনেকসময়েই এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহারোপযোগী থাকেনা।
জানা যায়, আবহাওয়া দফতরের কাজ হচ্ছে মূলতঃ আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানার জন্য জলবায়ুর তথ্য ও সূচক সংগ্রহ করা। আর কৃষিকাজের জন্য মাটি ও পানির তাপমাত্রাসহ আনুষঙ্গিক তথ্যাদি জানা হয় অটোমেটিক ওয়েদার স্টেশন থেকে। ফরিদপুরের এই আবহাওয়া দপ্তরেও একটি অটোমেটিক ওয়েদার স্টেশন রয়েছে। জেলা শহর ছাড়াও কয়েকটি উপজেলাতেও এই অটোমেটিক ওয়েদার স্টেশন গড়ে তোলা হয়েছে। তবে সেখানেও আধুনিক যন্ত্রপাতির সংকট রয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের দাবি, বারবার তারা আধুনিক যন্ত্রৎপাতি চেয়ে উর্ধ্বতন মহলে ধরণা দেয়ার পরে এসব ওয়েদার স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। যন্ত্রপাতিও চলে আসবে। ফরিদপুর একটি কৃষিভিত্তিক অঞ্চল হওয়ায় এখানে অটোমেটিক ওয়েদার স্টেশনেরও গুরুত্ব রয়েছে।
আবহাওয়া দপ্তর ও ওয়েদার স্টেশনের মাধ্যমে দিনরাতের আবহাওয়ার তথ্যসহ মাটি ও পানির তাপমাত্রার পরিমাপ জানা গেলেও মেঘের স্তরের (ক্লাউড লেয়ার) নিচের জলবায়ুর তথ্য জানা যায় না। এজন্য কয়েক হাজার মিটার উচ্চতায় বৃহদাকারের বেলুন উড়ানো হয়। যার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য সরাসরি কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের কাছে পৌঁছে যায়। দেশের বিভাগীয় আবহাওয়া দপ্তরগুলোতে এই বেলুন উড়ানো হলেও ফরিদপুরে এখনো এই বেলুন উড়েনি। কৃষিভিত্তিক ফরিদপুর অঞ্চলের জন্য এই বেলুন খুবই জরুরী বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এব্যাপারে ফরিদপুর আবহাওয়া দপ্তরের পেশাগত সহকারী সুরজুল আমীন বলেন, জেলা পর্যায়ের এই দপ্তর থেকে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হয় না। আমরা প্রতিদিন দু’বার আবহাওয়া সংক্রান্ত বিভিন্ন সূচকের তথ্য সংগ্রহ করে ঢাকায় প্রেরণ করি। এছাড়া ওয়েদার স্টেশন থেকেও তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
জনবল ও আধুনিক যন্ত্রপাতির সংকটের ব্যাপারে তিনি বলেন, যন্ত্রপাতি আধুনিক হলে অবশ্যই প্রাপ্ত তথ্যাদিও নিখুঁত হবে। এছাড়া এখান থেকে বেলুন উড়ানো গেলে অনেক উচ্চতা থেকে আবহাওয়ার তথ্যাদি সংগ্রহ সম্ভব হবে।
এব্যাপারে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি আবহাওয়া দপ্তরটিকে আধুনিকায়নের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করে বলেন, এই দপ্তরটিকে যাতে উন্নতমানের পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে রুপ দেওয়া যায় সেব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া জরুরী। ইতোমধ্যে সরকারের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট এব্যাপারে চিঠি লিখে জানানো হয়েছে। যাতে কৃষিভিত্তিক এই জনপদের মানুষ যাতে কৃষিকাজের উপযোগী ও ক্ষতিকর জরুরী আবহাওয়া বিষয়ক তথ্যাদি পেতে পারে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা