মঙ্গলবাড়িয়ায় গাছে গাছে ঝুলছে রঙিন লিচু
- ক.ম. মুহিবুল্লাহ বচ্চন, পাকুন্দিয়া (কিশোরগঞ্জ)
- ২২ মে ২০১৯, ১৩:৫০, আপডেট: ২২ মে ২০১৯, ১৩:৫৭
মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু বৈশিষ্টের কারণে অন্য এলাকার লিচুর চেয়ে একটু আলাদা। এ লিচু মুখে দিলেই গোলাপী ঘ্রাণ আর মিষ্টি রসে মন-প্রাণ ভরে যায়।
দেশব্যাপী খ্যাত মঙ্গলবাড়িয়া লিচুতে এখন মেতে উঠেছে পুরো গ্রাম। মঙ্গলবাড়িয়ার প্রতিটি বাড়ির বসতভিটায় বা আঙ্গিনায় গাছে গাছে লাল লিচুতে রঙিন হয়ে গেছে পুরো গ্রাম। পুরো গ্রামজুড়ে এখন গাছ ভর্তি লিচু। থোকায় থোকায় বাহারি লিচু সবার মন কাড়ছে। সেই সাথে লিচুর মৌ মৌ গন্ধ আর ছোট ছোট পাখিদের কিচির-মিচির শব্দে এলাকা মুখরিত। এবার সুস্বাদু ফল লিচুর ফলন গত বছরের চেয়ে কিছুটা ভালো হলেও কালবৈশাখী ঝড়ে লিচুর আংশিক ক্ষতি হয়েছে বলে চাষীরা জানিয়েছেন।
এখন মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে চলছে পুরোদমে লিচু বেচা-কেনা। কিন্তু পবিত্র রমজান মাস হওয়ায় লিচুর ক্রেতার সংখ্যা কম হওয়ায় তুলনামূলক ভাবে দামও একটু কম। তবে রোজার শেষ দিকে ক্রেতা বৃদ্ধির সাথে সাথে লিচুর দাম বাড়বে বলে মনে করেন চাষীরা। এবারও গাছে মুকুল আসার আগেই ব্যাপারীরা অনেক লিচু গাছ আগাম কিনে নিয়ে গেছেন। চোরের উপদ্রব ও পাখির হাত থেকে রক্ষার জন্য চাষীরা সারা রাত সজাগ থেকে বাগান পাহাড়া দিয়ে যাচ্ছেন।
মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের লিচু অন্য এলাকার লিচুর চেয়ে একটু আলাদা হওয়ায় এই গ্রামের আত্মীয়-স্বজনসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন আসায় গ্রামটিতে এখন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামটি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার পূর্ব দিকে অবস্থিত। অনেকেই লিচুর গ্রাম হিসেবে চিনে মঙ্গলবাড়িয়াকে। এ গ্রামের লিচু সুস্বাদু ও আগাম জাতের হওয়ায় চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। প্রতিটি লিচুই গোলাপী রঙের, শাঁস মোটা ও রসে ভরপুর। খেতে ভারি মজা। গন্ধও অতুলনীয়।
মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের লিচু চাষী মো: ছফির উদ্দিন লিমন জানান, এ বছর লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে এবং লিচুর আকার অতীতের তুলনায় বেশ ভালো হয়েছে। কিন্তু রমজান মাসের কারণে ক্রেতা কম থাকায় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দরে লিচু বিক্রি করতে হয়েছে। যা রমজান না থাকলে ৫ শ’ থেকে ৬ শ’ টাকা দরে লিচু বিক্রি করা যেত।
কুমারপুর গ্রামের লিচু চাষী মো: নজরুল ইসলাম জানান, কালবৈশাখী ও ঝড়ের কারণে এ বছর লিচু ফলনের খুব একটা ক্ষতি হয়নি। গাছে লিচু পাকা শুরু হওয়ার সাথে সাথে লিচু বিক্রিও শুরু হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পুরো দমে গাছ থেকে লিচু পাড়ার কাজ শুরু হবে।
তিনি আরো জানান, গত বছর ১০০ লিচুর দাম ছিল ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা পর্যন্ত। এবার লিচুর দাম কিছুটা কম।
প্রতিবছরেই লিচু গাছে মুকুল আসার সাথে সাথে মধু আহরণকারীরা অস্থায়ী ভাবে মধু চাষ করে থাকেন। এ বছর লিচুর ফুল থেকে মৌমাছি দ্বারা ৩২০ কেজি মধু সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রতি কেজি মধু ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। গত বছর প্রায় ৮০০ কেজি মধু সংগ্রহ করা হয়েছিল। এ বছর অতিবৃষ্টি ও কালবৈশাখী ঝড়ের কারণে মধু আহরণে বিঘ্ন ঘটেছে।
এই গ্রামে কিছু ব্যবসায়ীরা লিচু গাছগুলোতে কলমের মাধ্যমে লিচুর চারা তৈরী করে বিক্রি করে থাকেন। প্রতিটি চারা সাইজ অনুপাতে ৮০০ থেকে ২০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে। লিচুর চারা ক্রয় করে আশপাশের গ্রাম গুলোতে মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের মতই ব্যাপক ভাবে লিচুর চাষাবাদ শুরু হয়েছে। যা নারান্দী, কুমারপুর, উত্তরপাড়া, হোসেন্দী গ্রাম পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় শতাধিক বছর আগে বৃটিশ শাসনামলে জনৈক ব্যক্তি চীন থেকে কিছু লিচুর চারা এনে মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে রোপণ করেন। সেই থেকে ‘মঙ্গলবাড়িয়া জাত’ নামেই পরিচিত এ গ্রামের লিচু। পর্যায়ক্রমে এ গ্রামে সম্প্রসারিত হতে থাকে লিচু চাষ। বর্তমানে মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় কমপক্ষে ৮/১০টি করে লিচু গাছ আছে। পাইকাররা প্রতি বছর এখান থেকে লিচু কিনে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় রফতানি করে থাকে।
অন্যান্য এলাকার লিচুর চেয়ে মঙ্গলবাড়িয়ার লিচুর স্বাদ আলাদা হওয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকার লোকজন এসে ভিড় জমায় লিচু কেনার জন্য। এমনকি প্রবাসীরাও মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু নিয়ে যায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। গাছে মুকুল আসার আগেই গাছের মালিককে অগ্রিম টাকা দিয়ে লিচু গাছ কিনে নিয়ে যায় স্থানীয় ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ব্যাপারীরা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা