১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৭ মাঘ ১৪৩১, ১০ শাবান ১৪৪৬
`

গাজীপুরে আওয়ামী লীগের ১২৫ নেতা-কর্মী গ্রেফতার

- ছবি : নয়া দিগন্ত

গাজীপুরে অপারেশন ডেভিল হান্টের অভিযানে রোববার বিকেল পর্যন্ত ১২৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ ৮৫জনকে এবং গাজীপুর জেলা পুলিশ ৪০জনকে গ্রেফতার করেছে।

আটকদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও অঙ্গসংগঠণের নেতা-কর্মী ও সমর্থক। দেশজুড়ে চলমান অপারেশন ডেভিল হান্টের অংশ হিসেবে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

রোবাবর (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গাজীপুর জেলা পুলিশ এবং গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপির) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও মারধর ঘটনার পর গাজীপুর মহানগরীর ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের ধীরাশ্রম ও দাক্ষিণখান গ্রাম পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে। গাজীপুরসহ সারাদেশে অপারেশন ডেভিল হান্ট শুরুর খবরে আওয়ামী অধ্যুষিত ওই এলাকায় বয়স্ক নারীরা ছাড়া অন্য নারীরাও বাড়িঘর ত্যাগ করেছেন। এছাড়া পুরো জেলায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা গা ঢাকা দিয়েছেন।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) রিয়াজ উদ্দিন বলেন, গাজীপুর মহানগরের আটটি থানা এলাকা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত মোট ৮৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গ্রেফতারদের মধ্যে ৩৪ জনকে মহানগরীর ধীরাশ্রম এলাকায় সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হকের পৈতৃক বাড়িতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় শনিবার বিকেল পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়।

তিনি বলেন, অপারেশন ডেভিল হান্ট চলমান রয়েছে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাবসহ যৌথ বাহিনীর সদস্যরা অপারেশন ডেভিল হান্ট পরিচালনা করেছে।

এদিকে গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মো: যাবের সাদেক জানান, গাজীপুরে অপারেশন ডেভিল হান্টের আওতায় অভিযান চলমান রয়েছে। শনিবার থেকে শুরু হওয়া অপারেশন ডেভিল হান্টে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ৪০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জেলার পাঁচটি থানা (কালীগঞ্জ, কাপাসিয়া, জয়দেবপুর, শ্রীপুর ও কালিয়াকৈর) এলাকা হতে তাদের গ্রেফতার করা হয়। আটকরা ফ্যাসিস্ট সরকারের লোকজন। এ অভিযান জেলার সর্বত্র চলমান রয়েছে।

শ্রীপুর থানার ডিউটি অফিসার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সূজন কুমার পণ্ডিত জানান, শনিবার রাতে উপজেলা বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে শ্রীপুর উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতিসহ মোট ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন শ্রীপুর উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি নাজিম উদ্দিনের ছেলে মিলন আহমেদ (৪৫), কাওরাইদ ইউনিয়ন (৯ নম্বর ওয়ার্ড) আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মরহুম আলফাজ উদ্দিনের ছেলে হালিম উদ্দিন (৬০), আওয়ামী লীগকর্মী তেলিহাটি ইউনিয়নের টেংরা গ্রামের আয়নাল হকের ছেলে মেহেদী হাসান বাপ্পি (২৮), ৬ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের সাবেক ভাপতি টেংরা (দক্ষিণ পাড়া) গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে স্বপন শাজাহান (৩৮), উজিলাব গ্রামের আব্দুল মান্নান মোল্লার ছেলে আহমদ হোসেন মোল্লা, মাটিয়াগাড়া গ্রামের আব্দুর রশিদ সিদ্দিকের ছেলে মজিবুর রহমান, বরমী ইউনিয়নের দুর্লভপুর গ্রামের শহিদুল্লাহর ছেলে আওয়ামী লীগ কর্মী সজিব (২৭), ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক (২ নম্বর ওয়ার্ড) লাকচতল গ্রামের মরহুম হাফিজ উদ্দিনের ছেলে আবু ইউসুফ (২৪), গোসিংগা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ সভাপতি (৩ নম্বর ওয়ার্ড) বাউনী মরহুম হাফিজ উদ্দিনের ছেলে আব্দুল আল মামুন (৫৯), মাওনা ইউনিয়নের বেতজুরি গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে মোয়াজ্জেম হোসেন (৩৫)।

কাপাসিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন জানান, উপজেলা মোট ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে টোক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সেলিম হোসেন, রায়েদ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রুহুল আমীন, কাপাসিয়া উপজেলা যুবলীগের সদস্য শাহাদাত হোসেন, চেরাগ আলীর ছেলে ইউপি সদস্য সাহাব উদ্দিন।

জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হালিম জানান, সদর উপজেলা মোট নয়জন, কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াদ মাহমুদ জানান, উপজেলা মোট তিনজন এবং কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলাউদ্দিন জানান, উপজেলা মোট থানায় সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতি, সম্পাদকসহ বিভিন্ন দলীয় পদধারী নেতাও আছেন।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান বলেন, যারা জনগণকে ঘুমাতে দিবে না, দেশকে শান্তিতে থাকতে দিবে না বলে হুমকি দেয়, আমরা তাদেরকে চিহ্নিত করছি, অবশ্যই তাদেরকে আইনের আওতায় আনবো।

গাজীপুরে ছাত্রদের উপর হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত সদর থানায় দু’টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হয়েছে ধীরাশ্রম এলাকায় ছাত্রদের উপর হামলার ঘটনায় এবং অপরটি হয়েছে শহরের রাজবাড়ি সড়কে ছাত্রদেরকে গুলি করার ঘটনায়। আমরা আশা করছি, যারা জনগণকে অশান্ত করবে, যারা জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে তাদের প্রত্যেককে আমরা আইনের আওতায় আনবো।


আরো সংবাদ



premium cement