০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪২৩১, ৬ শাবান ১৪৪৬
`

জামায়াত নেতাদের নিষিদ্ধ করতে গিয়ে শামীম ওসমানই আজ নিষিদ্ধ

- ছবি : নয়া দিগন্ত

নারায়ণগঞ্জের মানুষ শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) জামায়াতে ইসলামের গণজোয়ার দেখার অপেক্ষায় রয়েছে। প্রায় দেড় যুগের বেশি সময়ের পর প্রকাশ্যে বিশাল জনসমাবেশের আয়োজন করে দলটি।

শুক্রবার সকাল ৯টায় নারায়ণগঞ্জ শহরের ওসমানী স্টেডিয়ামে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত জনসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। ইতোমধ্যে সব ধরনের আয়োজন সম্পন্ন করেছে দলটি। সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে জনসমাবেশ সফল করার জন্য ইউনিট থেকে শুরু করে জেলা পর্যায়ে একাধিক সভা করেছে জামায়াত। এছাড়া বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে মতবিনিময় করেন তারা। এছাড়া সমাবেশস্থল ইতোমধ্যে পরিদর্শন করেছেন জামায়াতের নেতৃবৃন্দ।

দলীয় একটি সূত্রে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জ থেকেই জনসমাবেশ শুরু করেছে জামায়াত।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) নারায়ণগঞ্জ মহানগর জামায়াতের আমির ও জনসভা বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল জব্বার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘৭ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টায় নগরীর ওসমানী পৌর স্টেডিয়ামে জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তবে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এই জনসভার আয়োজন করা হলেও এখনই কোনো প্রার্থী ঘোষণা করা হবে না।‘

আব্দুল জব্বার বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে অনেকগুলো সমস্যার পাশাপাশি অঢেল সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সমস্যাগুলোর সমাধান করে এবং সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগানো গেলে আমরা একটি আদর্শিক, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির নারায়ণগঞ্জ হিসেবে রূপান্তরিত করতে পারবো। সেই প্রত্যাশাকে নারায়ণগঞ্জবাসীর উদ্দেশ্যে তুলে ধরতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, নারায়ণগঞ্জ মহানগরী ও জেলা শাখার উদ্যোগে এক বিশাল জনসভা ওসমানী পৌর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে।‘

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের নারায়ণগঞ্জ সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের অন্যতম এলাকা হিসেবে চিহ্নিত ছিল। ছাত্র-জনতার ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই নতুন বিজয়ের প্রত্যাশা নিয়ে সবাই মিলে ভাঙা রাষ্ট্রকে মেরামতের মাধ্যমে প্রত্যাশিত বসবাসযোগ্য নারায়ণগঞ্জ গড়ে তুলতে চাই। যারা ফ্যাসিজমের পুনরাবৃত্তি ঘটাবে বা পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিজম ফিরে নিয়ে আসার অপচেষ্টা করবে তাদেরকে কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। ন্যূনতম সংস্কারের মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি উঠেছে।

আব্দুল জব্বার আরো বলেন, ‘আমরাও স্পষ্ট বলতে চাই বিশ্বাসযোগ্য এবং অন্তর্ভুক্তি নির্বাচনের জন্য পরিবেশ তৈরি করতে হবে।‘

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন বলেন, ‘জনসভা থেকে নারায়ণগঞ্জের আসনগুলোর জন্য কোনো দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হবে না। তবে জামায়াতে ইসলামী সারা বাংলাদেশে ৩০০ আসনে প্রার্থীদের নিয়ে কাজ করছে।‘

উল্লেখ্য, ২০০০ সালের ১৬ এপ্রিল সরকারি তোলারাম কলেজে জাহানারা ইমাম নামের একটি ভবন নির্মাণের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে কলেজ প্রাঙ্গণে মুক্তমঞ্চের সমাবেশ থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি করা হয়। ওই দিন সমাবেশ শেষে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে নারায়ণগঞ্জে গোলাম আযম, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদকে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে সাইনবোর্ড স্থাপন করে শামীম ওসমান। ওই সমাবেশের তিনদিন পর মুন্সিগঞ্জে একটি কর্মসূচি ছিল মতিউর রহমান নিজামীর। কিন্তু সেই অনুষ্ঠানে যেতে পারেননি নিজামী।

এছাড়া ওই বছরেই নারায়ণগঞ্জ শহরের ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকায় প্রতীকী বিচারে সাঈদী, গোলাম আযম ও নিজামীর ফাঁসি দেয়া হয় প্রতীকীভাবেই। এ নিয়ে একাধিকবার শামীম ওসমান বলেছেন, ‘প্রতিটি ক্রান্তি সময়ে নারায়ণগঞ্জ থেকেই ঘণ্টা বাজিয়েছি। জাহানারা ইমাম ভবন করে ঘণ্টা বাজিয়েছিলাম। গোলাম আযমকে নারায়ণগঞ্জের মাঠে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলাম। আমি জামায়াত ও গোলাম আযমকে নিষিদ্ধ করেছিলাম। জামায়াতের আমির গোলাম আযমকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা, জিয়াউর রহমানের গাড়ি আটকে দেয়া, খালেদা জিয়ার লংমার্চ আটকে দেয়ার কারণেই আমাকে গডফাদার উপাধি দেয়া হয়। এসব কারণে আমি গডফাদার হলাম। জামায়াত-বিএনপি আর কিছু মিডিয়া আমাকে গডফাদার হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়।‘

স্থানীয়রা বলেছেন, নারায়ণগঞ্জে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে গিয়ে আজ শামীম ওসমানই নিষিদ্ধ হয়ে গেলেন গত ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর শামীম ওসমানও পরিবার পরিজন নিয়ে পালিয়ে যায়।

দীর্ঘ ১৭ বছর হামলা মামলায় জর্জরিত হয়ে রাজপথে কোনঠাসা অবস্থায় ছিল জামায়াত। নারায়ণগঞ্জে ২০১৩-১৪ সালের আন্দোলনের পর থেকে হামলা মামলার কারণে আওয়ামী লীগের শাসনামলের বাকি সময়টুকু আন্ডারগ্রাউন্ডেই থাকতে হয়েছে জামায়াতকে। এ সময় নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন স্থানীয় ও রাজনৈতিক ইস্যুতে সরব হওয়ার চেষ্টা করলেও প্রশাসনের তৎপরতার কারণে রাজপথে ততটা সক্রিয় দেখা যায়নি জামায়াতকে। নারায়ণগঞ্জ জেলা জামায়াতের শীর্ষ নেতারা আত্মগোপনে থেকেই দল পরিচালনা করে গেছেন। জামায়াতকে সাংগঠনিকভাবে টিকিয়ে রাখাই ওই সময় দলটির নেতাদের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের সাথে নির্বাচনে জোটবদ্ধ হয়ে নামে জামায়াত। একতরফা সেই নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জে জামায়াতে ইসলামীকে প্রচার প্রচারনায় নামতেই দেয়া হয়নি।

২০২২ সালে সরকার পতনের আন্দোলন চাঙ্গা হয়ে উঠলে চাঙ্গা হয়ে ওঠে জামায়াত। নারায়ণগঞ্জে তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত জামায়াত নেতারা তখন থেকেই দলকে সুসংগঠিত করতে কাজ শুরু করেন।

২০২৩ সালের ১০ জুন ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার ইনিস্টিউটে জনসভা ডাকে জামায়াত। বিগত দশকে রাজধানীতে জামায়াতের সেটিই ছিল প্রথম জনসভা। প্রশাসন ও তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারকে তাক লাগিয়ে দিয়ে সেই সমাবেশের লক্ষাধিক লোকের সমাজলগম ঘটে। ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা হিসেবে সেই সমাবেশ সফল করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে জামায়াত। মিছিল নিয়ে না এসে কৌশলগত কারণে পৃথকভাবে ঢাকায় প্রবেশ করে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর জামায়াতে ইসলামীর হাজার হাজার নেতাকর্মী।

৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দৃশ্যপটে চলে আসেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা। জামায়াতের কেন্দ্রীয় শূরা কমিটির সদস্য মাওলানা মাইনুদ্দিন ও মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির আব্দুর জব্বারসহ নারায়ণগঞ্জ জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের প্রশাসনের প্রতিটি মিটিংয়ে অংশ নিতে দেখা গেছে। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জে নিয়মিত সভা সমাবেশ ও দলীয় কর্মসূচি চালিয়ে আসছে জামায়াত।

আগামী নির্বাচনে বিএনপির সাথে জোটবদ্ধ নয় বরং আলাদা নির্বাচন করবে জামায়াত এমনটাই এখন সর্বত্র আলোচিত। নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনেই প্রার্থী দিতে চায় দলটি। এমন পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জে জামায়াত এই বিশাল শোডাউনের মধ্য দিয়ে নিজেদের শক্তির জানান দিতে চাইছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement