আশুলিয়ায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত ৪ জনের লাশ উত্তোলন
- আমান উল্লাহ পাটওয়ারী, সাভার (ঢাকা)
- ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯:৪৩
সাভারের আশুলিয়ায় আদালতের নির্দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার পর থানার ভিতরে ভ্যানে রেখে আগুন দিয়ে পুরিয়ে দেয়া চারজনের লাশ উত্তোলন করা হয়েছে।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে সাভার উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি (আশুলিয়া রাজস্ব সার্কেল) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদিয়া আক্তারের নেতৃত্বে আশুলিয়া থানা পুলিশ শিল্পাঞ্চলের ভাদাইল পবনার টেক, বুড়িরবাজার আমবাগান কবরস্থান ও ইউনিক চাড়ালপাড়া এলাকার দরগারপার কবরস্থান থেকে লাশগুলো উত্তোলন করা হয়।
এর মধ্যে ভাদাইল পবনার টেক থেকে উত্তোলন করা হয়েছে আশরাফুল ইসলাম, ইউনিক চাড়ালপাড়া এলাকার দরগারপার কবরস্থান থেকে জাহিদুল ইসলাম সাগর (২৮), বুড়ির বাজার আমবাগান কবরস্থান থেকে আবুল হোসেন (৩৪) ও অজ্ঞাত পরিচয় আরেকজনের লাশ উত্তোলন করা হয়।
এদের মধ্যে নিহত আবুল হোসেন (৩৪) কুমিল্লা জেলার মুরাদ নগর থানার ফুলঘর গ্রামের মনির মিয়ার ছেলে এবং জাহিদুল ইসলাম সাগর (২৮) রংপুরের বদরগঞ্জ থানার হাটখোলা গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে।
লাশ উত্তোলনে নেতৃত্ব দেয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদিয়া আক্তার বলেন, ‘আজকে (শনিবার) সকাল থেকেই আদালতের নির্দেশে আমরা গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত চারজনের লাশ উত্তোলন করেছি। এর আগে নিহতের স্বজনেরা আদালতে মামলা দায়ের করলে আদালত লাশ উত্তোলনের নির্দেশ দেন। আমরা উত্তোলন করা লাশগুলোর সুরতহাল শেষে ডিএনএ টেস্ট ও ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়েছি।’
এদিকে, লাশ উত্তোলনের সময় কবস্থানের পাশেই নাবালক দুই সন্তান নিয়ে দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলছিলেন নিহত আবুল হোসেনের স্ত্রী লাকি আক্তার। তিনি বলেন, ‘আমরা স্বামী-স্ত্রী আগে তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করতাম। আমাদের দ্বিতীয় সন্তান হওয়ার পর আমি চাকরি ছেড়ে দিলেও আমার স্বামী ইপিজেডের শান্তা গার্মেন্টসে চাকরি করতো। পরে তার চাকরি চলে যাওয়া শেষে তিনি দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাতেন। আমার ছোট ছেলেটার ছয় মাস বয়স হওয়ার আগেই তার বাবা মারা গেল। এখন দুটি সন্তানকে আমি কিভাবে মানুষ করব।’
তিনি আরো বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট আমার স্বামী বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। এরপর তার লাশ থানা ভিতরে ভ্যানে রেখে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। আমার স্বামী লাশটি ফিরে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেও কাজ না হওয়ায় আদালতে মামলা দায়ের করায় আজকে আমার স্বামীর লাশ উত্তোলন করা হচ্ছে। আমি চাই আমার স্বামীর লাশটি আমাকে বুঝিয়ে দেয়া হোক এবং দুই ছেলেকে নিয়ে চলার জন্য সরকার একটা ব্যবস্থা করে দিক।’
এসময় নিহত আবুল হোসেনের বড় ছেলে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র জুনায়েদ (১১) বাবার লাশটি এক পলক দেখার জন্য বারবার উঁকিঝুকি মারতে থাকে। বর্তমানে তার ছোট ভাই সাফওয়ানের বয়স এক বছর।
নিহত আবুল হোসেনের প্রতিবেশী ও আহমেদ ল’ কলেজের শিক্ষার্থী মো: সাদেক বলেন, ‘আমি ও আবুল ভাই বাইপাইল নামাপাড়া এলাকার সাত্তার মন্ডলের বাড়িতে ভাড়া থাকতাম। গত ৫ আগস্ট আন্দোলন চলাকালে ১১টার দিকে সে বাসা থেকে বের হয়। এক পর্যায়ে আমরা মিছিল নিয়ে থানার কাছে গেছে পুলিশ গুলি করে। এসময় আমরা জান বাঁচাতে দৌড়ে পালাই। পরে জানতে পারি আন্দোলনে নিহত ছয়জনের লাশ থানার ভিতরে ভ্যানে রেখে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে।’
স্থানীয় ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী মো: মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘আগুনে পোড়ানো লাশের ভিডিও দেখে আমি অনেক কান্না করেছি। কার লাশ এভাবে পুড়ানো হলো প্রথমে জানা যায়নি। পরে চারটি লাশের সাথে আইডি কার্ড থাকায় পরিবারের লোকজন তাদের লাশগুলো শনাক্ত করে নিয়ে যায়। এরা সবাই ছাত্র ছিল। বাকি দুটি লাশের পরিচয় না পাওয়ায় ৬ তারিখ রাতে আমবাগান কবরস্থানে দাফন করা হয়।’
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের সুরতহাল এবং ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়েছিল। আজকে আদালতের নির্দেশে লাশগুলো কবর থেকে উত্তোলনের পর সুরতহাল করে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নির্ণয়সহ পরিচয় শনাক্তের জন্য চারজনের লাশ উত্তোলন করা হয়েছে।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা