০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮ মাঘ ১৪৩১, ১ শাবান ১৪৪৬
`

কোনো অনুদানই আমার মায়ের সমান নয় : শহীদ শাহিনুরের মেয়ে

শহীদ শাহিনুর বেগম - ছবি - বাসস

দাম্পত্য কলহ ও আর্থিক সঙ্কটের কারণে গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় পাড়ি জমান শাহিনুর বেগম (৫২)। তার স্বামীর বাড়ি কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার বড় সাপমারা (মুগারচর) গ্রামে।

এক যুগ আগে স্বামী মো: হাফিজ ভূঁইয়া দ্বিতীয় বিয়ে করার পর ভরণপোষণ বন্ধ করে দেন। তখন অন্যের বাড়িতে কাজকর্ম করে নিজের পাঁচ সন্তানকে নিয়ে কোনোমতে দিন কাটাতেন শাহিনুর। মূলত খাওয়া পরার অভাবে দিশেহারা হয়ে সন্তানদের নিয়ে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শনির আখড়ার বিপরীত পাশে গোবিন্দপুর জাপানি বাড়ির একটি বস্তিতে উঠেন।

জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে শহীদ হন শাহিনুর বেগম।

বড় মেয়ে হাফেজা (৩০) জানান, সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে নারী হয়েও মাছ বেচতেন তার মা। যাত্রাবাড়ি আড়ৎ থেকে মাছ কিনে তা কাজলা বাজারে খুচরা বিক্রি করতেন।

তিনি জানান, প্রতিদিনের মতো ২২ জুলাই জীবিকার তাগিদে সকাল ৮টায় পাইকারিতে মাছ কেনার জন্য যাত্রাবাড়ি যাচ্ছিলেন। তখন কাজলা পৌঁছাতেই পথচারীদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ শুরু করে পুলিশ। এর মধ্যে কমপক্ষে পাঁচ থেকে ছয়জন গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এদের মধ্যে শাহিনুরও ছিলেন। ঘটনাস্থলে কাতরাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু কেউ এগিয়ে যাওয়ার সাহস পাচ্ছিল না। পুলিশ চলে গেলে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ভ্যান গাড়িতে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যান। এ সময় তার রক্তে পুরো রাস্তাজুড়ে ছোপ ছোপ দাগ পড়ে যায়। ঢাকা মেডিক্যালে নেয়ার পরও সহজে চিকিৎসা পাচ্ছিলেন না। প্রায় দুই ঘণ্টা পর শাহিনুর বেগমের চিকিৎসা শুরু হয়। তবে শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো যায়নি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৯ আগস্ট তিনি মারা যান।

সম্প্রতি ঢাকার শনির আখড়ার গোবিন্দপুরে নারী শহীদ শাহিনুরের বাসায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ছোট্ট দু’টি রুম নিয়ে কোনোমতে গাদাগাদি করে বসবাস করছেন তার সন্তানরা। পরিবেশ একেবারেই ঘিঞ্জি। সন্তানরা বড় হওয়া পর্যন্ত নিজের উপার্জন দিয়ে সংসার চালাতেন। অবশ্য সন্তানরা বড় হলে অর্থ উপার্জনে তারাও মায়ের সাথে যুক্ত হন।

এরই মধ্যে তিন মেয়ে হাফেজা (৩০), মেজ মেয়ে জেসমিন (২৮) ও তাছলিমাকে (২৫) বিয়ে দিয়েছেন। তবে মেয়েদের স্বামীরাও আর্থিকভাবে তেমন সচ্ছল নন। বড় মেয়ে হাফেজা তার সন্তানদের নিয়ে মা শাহিনুর বেগমের বাসায় থাকেন। সাথে রয়েছেন দুই ভাই শরীফুল ইসলাম (২৩) ও রবিউল (১৮)। মায়ের সাথে ফুটপাতে ছিন্নমূল ব্যবসা করতেন বড় মেয়ে হাফেজা (৩০)। আর রায়েরবাগ বাস স্ট্যান্ডে পিঠা বিক্রি করেন মেজ মেয়ে জেসমিন (২৮) ও সবার ছোট ভাই রবিউল (১৮)। অপরদিকে শাহিনুর বেগমের বড় ছেলে শরীফুল ইসলাম (২৩) জীবিকার তাগিদে সম্প্রতি সৌদি আরবে প্রবাসী হয়েছেন।

শাহিনুরের বড় মেয়ে হাফেজা বলেন, আমার মায়ের সাথে বিচ্ছেদ না হলেও বাবা দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে গ্রামে থাকছেন।

গত ১২ বছর ধরে বাবার কাছ থেকে কোনো ধরনের আর্থিক সহায়তা পাওয়া যায়নি। অবশ্য তিনিও আর্থিকভাবে তেমন শক্তিশালী নন। তাই মা ঢাকায় এসে মাছ বিক্রি শুরু করেন। প্রথমে তার উপার্জিত টাকা দিয়েই সংসার চলতো। পরবর্তী সময়ে তিনিসহ অন্যান্য ভাই-বোনেরাও মায়ের সাথে কাজ করতেন। তার মৃত্যুর পর তারা নিজেরা এখন অর্থ সঙ্কটে ভুগছেন।

হাফেজা আরো বলেন, মা থাকতেই আমার ভাই শরীফুল ইসলামকে সৌদি আরবে পাঠানোর চেষ্টা করছিলেন। এক্ষেত্রে অনেকটা অগ্রগতিও হয়েছিল। সম্প্রতি শরীফ সৌদি আরব গেলেও তা দেখে পারেননি মা শহিনুর বেগম।

তিনি বলেন, আমার মা এতো তাড়াতাড়ি আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন ভাবতেও পারিনি। শুনেছি আমার মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় স্থানীয় বিএনপির একজন নেতার পক্ষ থেকে যাত্রাবাড়ি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। কিন্তু মামলার আসামি কারা বিস্তারিত আমাদের জানা নেই।

তিনি আরো জানান, তার মায়ের মৃত্যুর বিষয়ে মেঘনা উপজেলা বিএনপি ও জামায়াতসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ খোঁজ-খবর নিয়েছেন। জানাজায় এলাকার সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করেছেন। অনুদান হিসেবে কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুই লাখ ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে পাঁচ লাখ টাকা পেয়েছেন।

শাহিনুরের মেজ মেয়ে জেসমিন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, যতই অনুদান দেয়া হউক না কেন আমার মাকে কি আর ফিরে পাবো? কোনো অনুদানই আমার মায়ের সমান নয়। তিনি নিজে অনেক কষ্ট করে আমাদের লালনপালন করেছেন। তিনি তার মায়ের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

মেঘনা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি রমিজ লন্ডনী বলেন, তরা শাহিনুর বেগমের পরিবারের বিষয়ে সবসময়ই খোঁজ খবর রাখছেন।

ভবিষ্যতেও সবসময় পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন তিনি।

মেঘনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হ্যাপী দাস জানান, শহীদ শাহিনুরের পরিবারের সাথে যোগাযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে তার সন্তানদের হাতে দুই লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে আরো কোনো নির্দেশনা পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।

সূত্র : বাসস


আরো সংবাদ



premium cement
ঈশ্বরগঞ্জে আইসক্রিম কারখানায় আগুন নির্বাচন ছাড়া অন্য বিষয়ে সরকারের আগ্রহ সন্দেহজনক : গয়েশ্বর দেশে ফিরলেন খালেদা জিয়ার ৪ চিকিৎসক যৌথবাহিনীর অভিযানে যুবদল নেতার মৃত্যু : জরুরি তদন্তের নির্দেশ সরকারের ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা : পঞ্চগড়ে দালাল ও শিশুসহ তিন বাংলাদেশী আটক চৌগাছায় পেঁয়াজ চাষে লোকসান, উঠছেনা উৎপাদন খরচ যে কারণে বাংলাদেশকে উন্নয়ন সহযোগিতা বন্ধ করছে সুইস সরকার হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশা পড়তে পারে বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে, ছাত্ররা ক্যাম্পাসে : রিজভী যুবদল নেতার মৃত্যু : ক্যাম্প কমান্ডার প্রত্যাহার, উচ্চপদস্থ তদন্ত কমিটি গঠন ‘দুর্বল তদন্ত ও অপেশাদার প্রসিকিউশন ন্যায়বিচারের অন্যতম অন্তরায়’

সকল