‘একসাথে কাজ না করলে ২০ বছরেও যানজট মুক্ত হবে না’

একসাথে কাজ না করলে ২০ বছরেও যানজট মুক্ত হবে না মন্তব্য করে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেছেন, ‘সবার একটা ক্ষোভ যে, আমরা যানজটমুক্ত করতে পারছি না। আপনারা যেভাবে আমাদের আশ্বস্ত করছেন তাতে আমরা বলতে চাই, শহর যানজটমুক্ত করতে পারবো।

তিনি বলেন, ‘এই যানজটে অনেকগুলো ইস্যু আছে। অনেক ডিপার্টমেন্ট জড়িত আছে। আমরা কিন্তু একটা লিমিটেড জায়গা নিয়ে কাজ করি। আমাদের একটা ফরম্যাটের মধ্যে কাজ করতে হয়। আমরা চাইলেই কিছু নতুনভাবে চাপিয়ে দিতে পারি না। যেহেতু এখানে অনেকগুলো ডিপার্টমেন্ট জড়িত আছে, সুতরাং তাদের সবাইকে নিয়ে যানজট নিরসন সম্ভব।’

বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নারায়ণগঞ্জে যানজট নিরসনে সামাজিক, রাজনৈতিক ও নাগরিক সংগঠনের নেতাদের নিয়ে এক বৈঠকে তিনি একথা বলেন।

এ সময় সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ছাত্র সংগঠনের নেতারা নারায়ণগঞ্জে যানজট সৃষ্টির বিভিন্ন কারণ জেলা প্রশাসকের কাছে তুলে ধরেন এবং সেসব সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ প্রস্তাব করেন।

ডিসি বলেন, ‘এমন মিটিং অনেক হয়েছে। ২০ বছর ধরে হচ্ছে কিন্তু কোনো যানজট মুক্ত হচ্ছে না। আরো ২০ বছর হলেও যানজট মুক্ত হবে না, যদি আমরা সবাই একত্রে কাজ না করি। আমি এখানে জয়েন করার পর নারায়ণগঞ্জের যে সমস্যাগুলো শুনেছি, তার মধ্যে প্রথমেই মনে হয়েছে যানজট।’

তিনি বলেন, ‘এখানে ইজিবাইক অন্যতম সমস্যা। যদি এই ইজিবাইকগুলোকে মূল পয়েন্টগুলো থেকে ঘুরিয়ে দিতে পারি এবং ইজিবাইকগুলোকে যদি রোড অনুযায়ী কালার নম্বর করে দিতে পারি তাহলে একটা ভালো ফলাফল পেতে পারি।’

তিনি আরো বলেন, ‘আগামী সাত দিনের মধ্যে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ইজিবাইকগুলোতে রঙ করতে হবে। তাহলে লাইসেন্সের ইজিবাইকগুলো আলাদা করা যাবে। যদিও আপনারা বলছেন, শহরে ১৮ হাজার ইজিবাইক আর সিটি করপোরেশন বলছে আট হাজার ইজিবাইকে লাইসেন্স দেয়া হয়েছে।’

বাস মালিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘চাষাঢ়া মোড়ে যাত্রী উঠানোর নামে প্রতিযোগিতা করে। এতে দুর্ঘটনারও শিকার হয়। যাত্রী কেন রাস্তা থেকে উঠাতে হবে? বাসস্ট্যান্ড থেকে যাত্রী উঠাতে হবে, নাহলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে প্রশাসন। রাত দশটার পরে শহরে ট্রাক ঢুকবে।’

এ সময় তিনি মীর জুমলা সড়ক ও শায়েস্তা খাঁ সড়ক দু’দিনের মধ্যে মুক্ত করতে সিটি করপোরেশনকে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার নির্দেশনা দেন ডিসি। একইসাথে রাস্তা ও ড্রেনের কাজ দ্রুত শেষ করার কথা বলেন।

নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, ‘কেউ অপরাধ করলে তাকে পুলিশ বৈধভাবে আটক বা জরিমানা করলে ‘পেছন থেকে বাধা’ না দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার। তবে, কোনো পুলিশ সদস্য চাঁদাবাজি বা অবৈধ কোনো কার্যক্রমের সাথে জড়িত হলে তাকে ‘জেলা থেকে আউট করে দেয়া হবে’ বলেও জানান তিনি।’

এসপি বলেন, ‘আমার পুলিশ যদি বৈধ কাজ করে, বৈধভাবে কাউকে আটক করে, অন্যায় করার জন্য যদি তাকে জরিমানা করে সে কাজে ‘পেছন থেকে কেউ বাধা দিবেন না’ এই কথা আমাকে দিতে হবে। পুলিশকে সাপোর্ট করতে হবে। আপনারা সাথে থাকেন, আপনাদের প্রতিনিধি সাথে থাকুক তাহলে কাজ করা সহজ হবে।’

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাকিব আল রাব্বির সঞ্চালনায় এই সময় আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: আলমগীর হুসাইন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সচিব নূর কুতুবুল আলম, সেনাবাহিনীর পক্ষে ক্যাপ্টেন মাহফুজ, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি, মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমেদ, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু, নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট এ বি সিদ্দিক, নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি আরিফ আলম দিপু, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, ইসলামী আন্দোলনের জেলা সভাপতি মাওলানা দীন ইসলাম, মহানগর শাখার সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ, গণঅধিকার পরিষদ মহানগরের সাধারণ সম্পাদক রাহুল আরেফিন প্রমুখ।