আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হলো বিশ্ব ইজতেমা
- মো: আজিজুল হক, গাজীপুর মহানগর
- ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯:৪৭
ভারতের মাওলানা ইবরাহিম দেওলা সাহেবের আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমা। বয়ানের অনুবাদ করছেন কাকরাইলের মুরুব্বি মাওলানা জুবায়ের সাহেব।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) শূরাপন্থী তাবলিগ জামাতের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব আম বয়ানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে এবারের বিশ্ব ইজতেমা। শুক্রবার ফজরের পর বয়ান করবেন পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হক। এরপর সকাল ১০টার দিকে বিভিন্ন খিত্তায় খিত্তায় তালিমের আমল হবে। দুপুরবেলা অনুষ্ঠিত হবে দেশের বৃহত্তম জুমার নামাজ। এতে ইমামতি করবেন মাওলানা জুবায়ের সাহেব।
তিনি আরো জানান, এবারের ইজতেমা শূরায়ী নেজামের অধীনে দুই ধাপে অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ধাপ শুক্রবার ৩১ জানুয়ারি ও আগামী ১ ও ২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এরপর দ্বিতীয় ধাপে বিশ্ব ইজতেমা আগামী ৩, ৪ ও ৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে।
এবার বিশ্ব ইজতেমা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য পুরো বাংলাদেশকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। কোন ধাপে কোন অঞ্চল অংশগ্রহণ করবে তা ইতোমধ্যে জেলা দায়িত্বশীলদেরকে জানানো হয়েছে।
প্রথম ধাপে অংশগ্রহণ করছেন গাজীপুর, টঙ্গী, ধামরাই, গাইবান্ধা, মিরপুর, কাকরাইল, নাটোর, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, দোহার, ডেমরা, কাকরাইল, নড়াইল, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, নবাবগঞ্জ, নীলফামারি, দিনাজপুর, রংপুর, বগুরা, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, ভোলা, চুয়াডাংগা, কুষ্টিয়া, যশোর, মাগুরা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, নেত্রকোনা, শেরপুর, ফরিদপুর, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, ফেনী, লক্ষিপুর, চাদপুর, বি.বাড়িয়া, খুলনা, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, ঝিনাইদহ, চাপাই নবাবগঞ্জ, পিরোজপুর, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, রাজবাড়ী জেলার মুসল্লিরা। এই ধাপে ঢাকার একাংশসহ মোট ৪১টি জেলা অংশগ্রহণ করছে।
দ্বিতীয় ধাপে অংশগ্রহণ করছেন যাত্রাবাড়ী, কেরানীগঞ্জ, মোহাম্মাদপুর, মুন্সিগঞ্জ, জামালপুর, মানিকগঞ্জ, জয়পুরহাট, সিলেট, সিরাজগঞ্জ, মেহেরপুর, টাংগাইল, পাবনা, নরসিংদী, সাভার, কিশোরগঞ্জ, কক্সবাজার, নোয়াখালী, গোপালগঞ্জ, ঝালকাঠি, বরগুনা, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, খাগড়াছড়ি, রাংগামাটি, নওগাঁ, বান্দরবন জেলার মুসল্লিরা। এই ধাপে ঢাকার একাংশসহ ২২টি জেলা অংশগ্রহণ করছেন।
গত মঙ্গলবার বিকেল থেকেই প্রথম ধাপে ইজতেমায় অংশগ্রহণের জন্য বিভিন্ন খিত্তা ও পয়েন্টের জিম্মাদারগন এসে নিজ নিজ দায়িত্ব গ্রহণ করেন। গতকাল সকাল থেকেই দেশী-বিদেশী মেহমান ও সাধারণ মুসল্লীরা ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেন।
দুই ধাপে ইজতেমা ইজতেমা করার কারণ হিসেবে শূরায়ী নেজামের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, তাবলীগের মেহনত একটি দ্বীনের অন্যতম মেহনত এবং দ্বীনের ধারক বাহক হচ্ছেন হজরত ওলামায়ে কেরাম। ধর্ম প্রাণ মুসল্লি ভাইয়েরা উলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে থেকেই তাবলীগের মেহনত করতে চান। এই সংখ্যাটা এত ব্যাপক যে টঙ্গী মাঠের ১৬০ একর জায়গায় তাদের অবস্থান করাটা খুবেই কষ্টদায়ক হয়ে যায়। গত কয়েক বছর শূরায়ী নেজামের অধীনে যে সকল ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়েছে, আপনারা জেনে থাকবেন আমাদের সাথীরা স্থায়ী টয়লেটের ছাদগুলোর উপরে, আশেপাশে ছোট ছোট মাঠগুলোর ভেতরে এবং রাস্তায় ধূলাবালির ভেতর আমাদের সাথীরা কষ্ট করে অবস্থান করেছেন। এবার দুই ধাপে ইজতেমা হওয়ার কারণে তাদের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হবে।
তিনি আরো জানান, পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকেও যথেষ্ট আন্তরিকতার সাথে ইজতেমা আয়োজনে সহযোগিতা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন ওয়াচ টাওয়ার তৈরি করেছে এবং সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সিভিল ড্রেসে বিভিন্ন খিত্তায় খিত্তায় উনারা অবস্থান করবেন।
ব্যাপক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা
জিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ, অপরাধ) এন এম নাসির উদ্দিন জানান, এবার সাত সহস্রাধিক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ইজতেমা ময়দানে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন। তাদেরকে তাবলীগ জামাতের পক্ষ থেকে দশ সহস্রাধিক স্বেচ্ছাসেবক সহযোগিতা করবেন। পুরো ময়দান ও আশপাশে ৩৩৫টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। ড্রোন ও হেলিকপ্টার নজরদারি করবে ইজতেমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। ২০টি চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে সন্দেহভাজনদের পর্যবেক্ষণে। ওয়াচ টাওয়ার থেকে বাইনোকুলারে নজরদারি করবে নিরাপত্তা বাহিনী। নৌ পুলিশের স্পিডবোট টহল থাকবে তুরাগ নদে। সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন প্রতিটি খিত্তায়।
সাদপন্থীদের ইজতেমা নিয়ে অনিশ্চিয়তা
এদিকে সরকারি সিদ্ধান্তে আগামী ১৪, ১৫ ও ১৬ জানুয়ারি সা’দপন্থীদের বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের কথা ছিল। কিন্তু গত জোড় ইজতেমায় টঙ্গীর ময়দানে সঙ্ঘটিত হত্যাকাণ্ডের মামলায় তাদের শীর্ষ দায়িত্বশীলরা আসামী হওয়ায় এবং ইজতেমা নিয়ে সরকারের সাথে নানা টানাপোড়েনে তাদের আসন্ন ইজতেমা নিয়ে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে।
নিজামুদ্দিনের মিডিয়া সমন্বয়ক আবু সাঈম বলেন, ‘এবার ইজতেমা করার পর পরবর্তীতে টঙ্গীর ময়দানে আমরা আর বিশ্ব ইজতেমা করতে পারবো না সরকারের পক্ষ থেকে এমন লিখিত আন্ডারটেকেন দিতে বলা হচ্ছে। কিন্তু আমরা বলছি ইজতেমা ময়দানে ইজতেমা করার অধিকার আমাদেরও আছে। আমরা টঙ্গীর ময়দানে পরবর্তীতে ইজতেমা না করার ব্যাপারে কোন লিখিত দেব না।