দেশের মাটিতে সব গণহত্যার বিচার করতে হবে : রফিকুল ইসলাম
- আমান উল্লাহ পাটওয়ারী, সাভার (ঢাকা)
- ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮:৩০
দেশের মাটিতে সব গণহত্যার বিচার করতে হবে মন্তব্য করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, ‘ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসানের পর বাংলাদেশের জনগণের প্রধান দাবি হলো এ সকল হত্যার বিচার করতে হবে। যে ট্রাইবুনাল গঠন করে জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীসহ নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় নাটক সাজিয়ে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছে, সেই ট্রাইবুনালে শেখ হাসিনাসহ ফ্যাসিবাদের দোসরদের ইতোমধ্যে গণহত্যার দায়ে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’
শনিবার (২৫ জানুয়ারি) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা জেলার ইউনিট সভাপতি ও সেক্রেটারিদের সম্মেলনে সাভার পৌর এলাকার রেডিও কলোনী স্কুল মাঠে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আহ্বান জানাতে চাই, অবিলম্বে গণহত্যাকারীদের বিচার করে ফাঁসি দিতে হবে। জনগণের দাবি, ফ্যাসিবাদের দোসর সরকারের ভেতরে বাইরে যারা আছে তাদের চিহ্নত করতে হবে। তাদেরকে গ্রেফতার করতে হবে। যারা খুনি ও ষড়যন্ত্রকারী তাদের কোনো ক্ষমা নেই। ১৫ বছর, সাত মাস, পাঁচ দিন ফ্যাসিবাদের শাসনের অবসান ঘটিয়ে এ দেশের মানুষ আবার মুক্তিলাভ করছে। ফ্যাসিবাদের শাসন এদেশে আর ফিরে আসবে না। এদেশের ১৮ কোটি মানুষকে হাজারো মানুষের জীবনের বিনিময়ে মুক্ত করে দিয়েছে। আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়েছে।’
এ সময় ইউনিট সভাপতি ও সেক্রেটারিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘রাসুল সা: বলেছেন, তোমরা জুলুম থেকে বিরত থাক। কেননা জুলুম কেয়ামতের দিন অন্ধকার হয়ে আসবে। আজ জালেমদের জন্য দুনিয়া অন্ধকার হয়ে গেছে।’
ঢাকা জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে জামায়াত নেতা রফিকুল খান ভোটার হালনাগাদের তালিকার বিষয়ে বলেন, ‘গোজামিলের একটা ভোটার তালিকা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের আমলে দু’কোটি ভুয়া ভোটার তালিকা করা হয়েছিল। এ ভোটার বাদ দেয়া হবে কিভাবে। যদি এদের বাদ না দিয়ে ভোটার তালিকা করা হয় তাহলে এ ভোটার তালিকা কি যথার্থ হবে। কাজেই প্রায় ২০ বছর হলো এ দেশের মানুষ নতুন করে ভোট দিতে পারে না, ভোটার তালিকায়ও যুক্ত হতে পারে না। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে যে ভোটার তালিকা হয়েছিল, ওই নির্বাচনে সে ভোটার তালিকা সঠিক ভোটার তালিকা হয়েছিল। এর পর থেকে আর কোনো সঠিক ভোটার তালিকা হয় নাই। ২০০৮ সালে যাদের জন্ম, এখন তাদের বয়স ১৬ থেকে ১৭ বছর হয়ে গেছে।’
তিনি প্রশ্ন করে বলেন, ‘তখন যাদের বছর হয়েছিল পাঁচ বছর, তারা ভোটার হয়েছিল। তাহলে গোজামিল দিয়ে ভোটার তালিকা করার তীব্র প্রতিবাদ জানান তিনি। আবার সঠিক ভোটার তালিকা করতে হবে। বাংলাদেশের সকল ভুয়া ভোটার তালিকা বাদ দিতে হবে। আর যারা ভোটার হওয়ার উপযুক্ত তাদের তালিকাভুক্ত করতে হবে।’
এ সময় তিনি নিত্যপণ্যের দাম কমিয়ে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনা এবং সেজন্য সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়ার আহ্বান জানান।
মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান আরো বলেন, ‘জামায়াতেরকর্মীকে কোরআন ও হাদীসের চর্চা বৃদ্ধি করতে হবে। তিন দফা দাওয়াত ও চার দফা কর্মসূচি মানুষের মাঝে পৌঁছাতে হবে। জেলার প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় সংগঠন কায়েম করতে হবে। ইসলামী আন্দোলনে অতীতে ষড়যন্ত্র ছিল, এখনো আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। তাই ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে হতাশ হওয়া যাবে না। আল্লাহ ভয় করতে হবে এবং তার উপরই ভরসা করতে হবে, মানুষের সাথে উত্তম ব্যবহার করতে হবে। জাতীয় স্বার্থে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। জনগণ একটি পরিবর্তনের জন্য রক্ত দিয়েছে। রক্ত কি বৃথা যাবে? তারা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য বৈষম্য দূর করার জন্য রক্ত দিয়েছে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন বলেন, ‘সমাজ থেকে সকল ধরনের অন্যায়-অবিচার বন্ধ করতে হবে। জনগণের সেবক হতে হবে, আল্লাহর দরবারে ধরনা দিতে হবে, আল্লাহর অনুগত বান্দা হলেই ন্যায়ভিত্তিক সমাজ কায়েম হবে। জামায়াত কোরআনের শাসন কায়েম করে এদেশের মানুষের মুক্তি নিশ্চিত করতে চায়।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট মশিউল আলম বলেন, ‘আমাদেরকে জনগণের সেবক হতে হবে। আমাদের ব্যবহার হবে সুন্দর। আমাদের কাছে মানুষ নিরাপদে থাকবে সেই নিশ্চয়তা দিতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা জেলা আমির মাওলানা মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন বলেন, ‘আমাদেরকে মাঠে ময়দানে বিগত সময়গুলোর চেয়ে অনেক বেশি কাজ করতে হবে। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সবসময় কাজ করতে হবে। আর ফ্যাসিবাদের ব্যাপারে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।’
ঢাকা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা আফজাল হোসাইনের সঞ্চালনায় এ সময় জেলা অর্থ সম্পাদক কবিরুজ্জামান, মানবসম্পদ সেক্রেটারি মীর আতাউর রহমান, যুব বিভাগের সেক্রেটারি আব্দুর রহমান, সাংস্কৃতিক সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মো: লুতফর রহমান, আইনবিষয়ক সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শহীদুল ইসলাম, রাজনৈতিক সেক্রেটারি হাসান মাহবুব মাস্টার, শিক্ষা সম্পাদক অধ্যক্ষ মো: তৌহিদ হোসেন, জেলা প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি আসাদুজ্জামান জীম, শ্রমিক কল্যাণ ঢাকা জেলা সভাপতি হারুনুর রশিদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা