হারানো সম্মান, চাকরি ও ক্ষতিপূরণ চান মুক্তিপ্রাপ্ত বিডিআর সদস্যরা
- মোহাম্মদ আলী ঝিলন, গাজীপুর
- ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮:৫৩
গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে ১২৭ জন বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) সদস্যকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। মুক্তির যাবতীয় কাগজপত্র কারাগারে আসার পর যাচাই-বাছাই শেষে অন্য কোনো মামলায় আটকাদেশ না থাকায় তাদের মুক্তি দেয়া হয়। এ সময় কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটকে এক হৃদয় বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) সকাল থেকে ধাপে ধাপে বিডিআর সদস্যদের মুক্তি দেয়া হয়।
এ সময় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ১৩ জন, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কারাগার-১ থেকে ২৫ জন এবং দুপুর দেড়টার দিকে কারাগার-২ থেকে ৮৯ জনকে কারামুক্তি দেয়া হয়েছে। কারাবন্দি বিডিআর সদস্যদের মুক্তির খবরে সকাল থেকেই তাদের স্বজনেরা কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটকের সামনে অপেক্ষা করতে থাকে।
কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কারাগারের ১২৮ জন বন্দি বিডিআর সদস্যদের মধ্যে ১৩ জনকে মুক্তি দেয়া হয়েছে।
কাশিমপুর কারাগার-১-এর জেল সুপার মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম বলেন, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কারাগারের ৮৪ জন বন্দি বিডিআর সদস্যদের মধ্যে ২৫ জনকে কারামুক্তি দেয়া হয়েছে।
কাশিমপুর কারাগার-২-এর সিনিয়র জেল সুপার আল মামুন বলেন, দুপুর দেড়টার দিকে কারাগারের ৩৭৮ জন বন্দি বিডিআর সদস্যদের মধ্যে ৮৯ জনকে কারামুক্তি দেয়া হয়েছে।
জামিনে মুক্তি পাওয়া ময়মনসিংহ-৪৫ ব্যাটেলিয়নের সিপাহি এনামুল বলেন, ‘আমাদেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল খাটিয়েছে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার। আমাদের নিরপরাধ সবাইকে পুনরায় চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে। সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা দিতে হবে। এ ঘটনায় প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিডিআর বিদ্রোহের বিষয়ে আমাদেরকে কোনো কিছু বলা হয়নি, শুধু বলেছে সাক্ষী দিতে হবে। কার নামে সাক্ষী দিতে হবে আমরা কিছুই জানি না। সাক্ষী দিতে অস্বীকৃতি জানালে আমাদেরকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে পাঠায় ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার।’
সদ্য মুক্তি পাওয়া ঢাকা সদর ব্যাটেলিয়ন সিপাহি আবু হাসান জানান, ‘বিডিআর বিদ্রোহের সময় আমার চাকরির বয়স ছয় মাস। পিলখানাতে পাঁচটি গেট আছে সেই পাঁচটি গেটও আমি চিনতাম না। অথচ আমাকে করা হয়েছে আসামি। যেসব সিনিয়র স্যারদের আমরা পিতৃ সমতুল্য সম্মান করতাম আজকে তাদেরকে হত্যার দায়ে আমাদেরকে ১৬টি বছর মিথ্যা মামলায় কারা ভোগ করতে হয়েছে। সরকারের কাছে আমাদের দাবি আমরা যেন আমাদের হারানো সম্মান ফিরে পাই।’
ঢাকা সদর ব্যাটলিয়নের আরেক সিপাহি জামাল উদ্দিন খানের মেয়ে জুয়েনা জামাল ঐশী বলেন, ‘আমার বাবাকে আমি চিনি না। বড় হয়ে শুনেছি আমার বয়স যখন এক বছর তখন আমার বাবাকে বিডিআর হত্যা মামলায় আসামি করে কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে। দীর্ঘ ১৭ বছর পর বাবার মুখ দেখতে পারব। এই অনুভূতির কথা বলে শেষ করা যাবে না। কোনোদিন বাবার আদর পায়নি। আজ মন ভরে বাবাকে দেখব। জুয়েনা জামাল ঐশী যখন কথা বলছিলেন তার চোখের পানি টলমল করে বেয়ে পড়ছিল।
উল্লেখ্য, গত ২০ জানুয়ারি রোববার পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা বিস্ফোরক মামলায় জামিন পেয়েছেন হত্যা মামলায় খালাসপ্রাপ্ত ও যাদের বিরুদ্ধে কোনো আপিল হয়নি এমন দু’শতাধিক আসামি। কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক ইব্রাহিম মিয়ার অস্থায়ী আদালত তাদের এই জামিন দেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা