ট্রেনের সুবিধা পাচ্ছেন না পদ্মা পাড়ের ৩ জেলার মানুষ
- শিবচর (মাদারীপুর) থেকে
- ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩০, আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪৯
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পদ্মা সেতু হয়ে স্বল্প দূরত্বে কম সময়ে সাশ্রয়ী ভাড়ায় ঢাকা থেকে খুলনা ও বেনাপোল রুটে দু’টি নতুন ট্রেন ‘জাহানাবাদ এক্সপ্রেস’ ও ‘রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস’ চালু হওয়ায় সাধারণ মানুষের মাঝে উচ্ছ্বাস দেখা গেলে ও মুন্সিগঞ্জ, শিবচর ও পদ্মাসেতু-সংলগ্ন পদ্মা স্টেশনে কোনো স্টপেজ না থাকায় বঞ্চিত হয়েছেন মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার প্রায় চার লাখ মানুষ ও শরীয়তপুর-মুন্সিগঞ্জ জেলার যাত্রীরা। অথচ পদ্মা সেতু ও রেলপথ নির্মাণে এই এলাকার মানুষের অবদান অনেক বেশি। দ্রুত এই অঞ্চলে রেলস্টশনে স্টপেজের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
তাদের দাবি, পদ্মা স্টেশন ও শিবচর স্টেশনে ট্রেন স্টপেজ দিলে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলার মানুষেরা এই স্টেশন থেকে স্বল্প দূরত্বে কম সময়ে সাশ্রয়ী ভাড়ায় সহজেই খুলনা ও বেনাপোল রুটে যাতায়াত করতে পারবে।
সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে কাশিয়ানী-নড়াইল দিয়ে খুলনা ও বেনাপোল রুটে নতুন দুই জোড়া যাত্রীবাহী ট্রেন ‘জাহানাবাদ এক্সপ্রেস’ ও ‘রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস’ চালু হয়েছে। এ ট্রেনটির সাপ্তাহিক বন্ধ সোমবার। এছাড়া বাকি ছয় দিন চলাচল করবে। এ দু’টি ট্রেন দিনে দু’বার খুলনা-ঢাকা এবং ঢাকা-বেনাপোল পথে চলাচল করবে। খুলনার ট্রেনটি নোয়াপাড়া, সিঙ্গিয়া জংশন, নড়াইল, লোহাগড়া, কাশিয়ানী জংশন, ভাঙ্গা জংশন বিরতি দেবে। আর বেনাপোলের ট্রেনটি যশোর জংশন, নড়াইল, কাশিয়ানী, ভাঙ্গা জংশন ষ্টেশনে বিরতি দেবে।
দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত নতুন এই রুটে ট্রেন চলাচলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ উচ্ছ্বসিত হলেও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে পদ্মা পাড়ের জেলাগুলোর মানুষের মাঝে। মাদারীপুরের শিবচর স্টেশন, পদ্মা সেতু-সংলগ্ন পদ্মা স্টেশন, মুন্সীগঞ্জের পাড়ের কোনো স্টেশনেই এ দু’টি ট্রেনের বিরতি না থাকায় এ ট্রেন সার্ভিস থেকে বঞ্চিত মাদারীপুর, শরীয়তপুর, মুন্সীগঞ্জ জেলার যাত্রীরা। এ ট্রেন সার্ভিস পেতে এই তিন জেলার মানুষকে ঢাকা অথবা ফরিদপুরের ভাঙ্গায় যেতে হবে। তাই রেলপথ বিভাগের দূরদর্শিতা নিয়ে জনমনে সংশয় দেখা দিয়েছে। নতুন রেল সার্ভিস বঞ্চিত হয়ে ক্ষুদ্ধ পদ্মা পাড়ের মানুষ।
পদ্মা স্টেশনে রোমান মিয়া নামের এক যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের দীর্ঘদিনের চাওয়া বা আশা ছিল যে আমরা ট্রেনে চড়ে বেনাপোল যাবো। সেই চাওয়াটা পূরণ হয়েছে কিন্তু যে দু’টি ট্রেন পদ্মা সেতু হয়ে খুলনা ও বেনাপোল যাবে সেই ট্রেনের স্টেপেজ এখানে না থাকায় আমাদের আশা ভঙ্গ হয়েছে। পদ্মা স্টেশনটা গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন এই স্টেশন থেকে আশপাশের দু’জেলার মানুষ এখান থেকে ট্রেনে ওঠা-নামা করে। সেজন্য আমাদের দাবি, এখানে যেন ট্রেন স্টপেজ দেয়।’
শিবচর স্টেশনে বাদশা মুন্সি নামের এক যাত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণ না হলে আজ রেল পথ নির্মাণ হওতো না। পদ্মা সেতু ও রেলপথ নির্মাণের জন্য মন্সিগঞ্জ, শরিয়াতপুর, মাদারীপুর জেলার মানুষের সবচেয়ে বড় ত্যাগ করতে হয়েছে। বিশেষ করে, পদ্মা সেতুর দক্ষিণ পাড়ে দু’টি স্টেশন রয়েছে অথচ একটিতে নতুন দু’টি ট্রেন থামছে না। আমাদের হয়তো ঢাকার কমলাপুর অথবা ফরিদপুরের ভাঙা স্টেশনে গিয়ে উঠতে হবে। আমরা প্রত্যাশা করছি, সরকার অতি দ্রুত এখানে ট্রেন থামার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
শিবচর রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো: সেলিম হোসেন জানান, ঢাকা থেকে খুলনা ও বেনাপোল রুটে নতুন দু’জোড়া যাত্রীবাহী ট্রেন ‘জাহানাবাদ এক্সপ্রেস’ ও ‘রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস’ চালু হয়েছে। এই ট্রেন দু’টি আপাতত পদ্মা স্টেশন বা শিবচর স্টেশন কোনোটাতেই থামছে না। এটি থামবে ভাঙ্গা জংশন স্টেশনে। যাত্রীদের ওই স্টেশনে গিয়েই উঠতে হবে। তবে যাত্রীদের চাপ বাড়লে পরবর্তীতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এখানে স্টপেজের বিবেচনা করবেন।
উল্লেখ্য, আগে ট্রেনে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল-ঈশ্বরদী হয়ে খুলনা যেতে সময় লাগতো ৯ ঘণ্টা ৩০ মিনিট এবং রাজবাড়ী হয়ে বেনাপোল যেতে ৭ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট অর্থাৎ নতুন চালুকৃত ট্রেনে ঢাকা-খুলনা ও বেনাপোল যাতায়াতে সময় সাশ্রয় হবে। ঢাকা-খুলনা ঢাকা রুটে একজন যাত্রীকে একক যাত্রায় ভাড়া দিতে হতো শোভন চেয়ারে ৬৩০ টাকা ও স্নিগ্ধা শ্রেণিতে ১২০৮ টাকা। বর্তমানে ওই একই গন্তব্যে যেতে একজন যাত্রীকে ভাড়া দিতে হবে শোভন চেয়ারে ৪৪৫ টাকা ও স্নিগ্ধা শ্রেণিতে ৮১৫ টাকা অর্থাৎ শ্রেণিভেদে একই গন্তব্যে ভাড়া কমছে যথাক্রমে ১৮৫ ও ৩৯৩ টাকা। অন্যান্য ক্যাটাগরির আসনেও অনুরুপভাবে খরচ সাশ্রয় হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা