১২ জানুয়ারি ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১, ১১ রজব ১৪৪৬
`

জবির দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীকে দেয়ার দাবিতে গণঅনশন

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের গণঅনশন - ছবি : নয়া দিগন্ত

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) কেরানীগঞ্জে নতুন ক্যাম্পাস প্রকল্পের কাজ সেনাবাহিনীকে দেয়ার চুক্তি স্বাক্ষরসহ তিন দফা দাবিতে গণঅনশন কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা।

রোববার (১২ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

শিক্ষার্থীদের দাবি হলো পুরান ঢাকার বাণী ভবন ও ড. হাবিবুর রহমান হলের স্টিল বেইজড ভবনের কাজ দ্রুত শুরু এবং শেষ করতে হবে। যতদিন পর্যন্ত আবাসন ব্যবস্থা না হয় ততদিন পর্যন্ত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন ভাতা নিশ্চিত করতে হবে।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের একটি অবহেলিত বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার বুকে থাকার পরও বছরের পর বছর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের মৌলিক দাবি শিক্ষার পরিবেশ, জীবনের নিরাপত্তা ও বাসস্থান থেকে বঞ্চিত। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম, এবার হয়ত আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এখনো কোনো দৃশ্যমান কাজ না দেখে আমরা অনশনের মতো কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়েছি।’

গণঅনশনে থাকা ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, ‘দীর্ঘদিনের আন্দোলনের পরিক্রমায় ২০০ একরের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস পেয়েছি। কিন্তু সেই ক্যাম্পাস বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি নেই। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহীনীর হাতে হস্তান্তর করা। গতবছরের নভেম্বরে সচিবালয় ঘেরাও এর মতো কর্মসূচি দিলে সেখান থেকে স্পষ্ট বলা হয়, প্রশাসন চাইলে সেনাবাহিনীর হাতে দিতে পারবে। কিন্তু দু’মাস হয়ে গেলেও ক্যাম্পাসের কাজ হস্তান্তর করা হয়নি। আমরা আর আমলাতান্ত্রিক জটিলতা শুনতে চাই না। দাবি না মানা পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাব।’

ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফেরদৌস শেখ বলেন, ‘এই সরকার আমাদের রক্তের ওপর গঠিত সরকার। এই সরকার থাকতে যদি আমরা আমাদের মৌলিক দাবি দ্বিতীয় ক্যাম্পাস ও আবাসন সংকট সমাধান করতে না পারি আর কখনোই তা সম্ভব হবে না। এজন্য সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর না হওয়া পর্যন্ত আমরা অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাব।’

এদিকে এই গণঅনশন কর্মসূচি শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি উল্লেখ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন একাত্মতা প্রকাশ করেছে।

এ বিষয়ে জবি ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি এ কে এম আব্দুর রাকিব বলেন, ‘সেনাবাহিনীকে কাজ দেয়ার আন্দোলনের শুরু থেকে আমরা আছি। কিন্তু দু’মাস পার হলেও কাজ হচ্ছে, চিঠি দেয়া হচ্ছে এসব বলছেন। আমরা আর এটা দেখতে চাই না। সেনাবাহিনী, মন্ত্রণালয়, জবি প্রশাসন উপস্থিত হয়ে চুক্তি করে সেনাবাহিনীকে কাজ হস্তান্তর না করলে আমরা এ গণঅনশন চালিয়ে যাব।’

জবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো: আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই সংগঠন থেকে সেনাবাহিনীকে কাজ হস্তান্তর, অস্থায়ী আবাসনসহ বিভিন্ন দাবি জানিয়ে এসেছি। এরপর সেনাবাহিনীকে কাজ দেয়ার জন্য আন্দোলনও হয়। কিন্তু পরবর্তীতে সেনাবাহিনীকে কাজ দেয়ার বিষয়টি ধীরগতিতে আগায়। দু’মাসের বেশি হয়ে গেছে। এখনো কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা সেনাবাহিনীকে কাজ হস্তান্তরসহ তিন দফা দাবিতে গণঅনশন পালন করছে। আমরা ছাত্রশিবির থেকে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির প্রতি একাত্মতা পোষণ করছি। ভিসি স্যারকেও এই দাবি মেনে নেয়ার জন্য স্মারকলিপি দিয়েছি।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামি ছাত্র আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান আকাশ বলেন, ‘আমাদের বলা হচ্ছে সেনাবাহিনীকে কাজ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু দৃশ্যমান কোনো কাজই জবি প্রশাসন করতে পারেনি। এছাড়া যারা ক্যাম্পাস প্রকল্পে দুর্নীতিগ্রস্ত তাদের কোনো তালিকা করা হয়নি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়নি। যাকে সাময়িকভাবে পিডি নিয়োগ দেয়া হয়েছে সে দুর্নীতিগ্রস্ত। তার বিরুদ্ধে যথেষ্ট দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা আমাদের নিশ্চিত না করা পর্যন্ত আমাদের গণঅনশন চলবে। আমরা এক মন্ত্রণালয় থেকে আরেক মন্ত্রণালয় ঘুরতে চাই না। এর আগে শিক্ষা উপদেষ্টাসহ তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ আমাদের আশ্বাস দিয়েছে, কিন্তু ফলাফল পাইনি।’

সেনাবাহিনী কাজ হস্তান্তরের বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, ‘আমরা সেনাবাহিনীকে কাজ দিতে ইউজিসিকে চিঠি দিয়েছি। কাজ চলছে। আমাদের একটু সময় দিতে হবে। এ সময় সাংবাদিকরা কতটুকু সময় লাগবে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি কোনো সময় দিতে পারব না। আমরা এ বিষয়ে কাজ করছি।’

বিতর্কিত কর্মকর্তাকে নতুন করে পিডি দেয়ার বিষয়ে ভিসি বলেন, ‘আমিরুল ইসলামকে সাময়িকভাবে পিডি হিসেবে দেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত কমিটি দেখবে। আমরা ব্যবস্থা নিব। দ্রুতই ইউজিসি থেকে তদন্ত কমিটি করার জন্য আমরা কাজ করছি।’


আরো সংবাদ



premium cement