সাজানো ট্রাইব্যুনাল দিয়ে জামায়াত নেতাদের হত্যা করা হয়েছে : গোলাম পরোয়ার
- মোহাম্মদ আলী ঝিলন, আজীজুল হক (গাজীপুর)
- ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪:২৪, আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২০:০৫
সাজানো ট্রাইব্যুনাল দিয়ে জামায়াত নেতাদের হত্যা করা হয়েছে মন্তব্য করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘যে ট্রাইব্যুনাল দিয়েছিল আলেমদেরকে ফাঁসি দেয়ার জন্য। আল্লাহর কি বিচার এখন সেই ট্রাইব্যুনালেই তার বিচারের আয়োজন চলছে। ২০০ ওপর মামলা হয়ে গেছে ট্রাইবুনালে। রেড অ্যালার্ট জারি হয়েছে। ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে জাতীয় ঐক্যের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য আইনের যেসব সংস্কার করা প্রয়োজন তা যদি করা না হয় তাহলে অতীতের মতো নির্বাচন হবে।’
তিনি বলেন, ‘এতো রক্ত দেয়া হয়েছে কেন? আবার আগের মতো নির্বাচনের জন্য? আমরা তো রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানের সংস্কার চাই না। আর অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে সব সংস্কার করা সম্ভব না, এটাও আমরা জানি। তবে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন, পুলিশ, জনপ্রশাসনসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সংস্কার করতে হবে। সেখানে আগের ফ্যাসিবাদের দোসররা ঘাপটি মেরে বসে আছে। তাদের দিয়ে নির্বাচন করলে সকল শহীদের রক্ত বৃথা যাবে।’
শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) সকালে গাজীপুর সদর উপজেলার ভবানীপুর মুক্তিযোদ্ধা কলেজ মাঠে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী গাজীপুর জেলা শাখার কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
এ সময় গাজীপুর জেলা শাখার আমির ড. মো: জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ড. মো: সামিউল হক ফারুকী, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য মো: আবুল হাশেম খান, গাজীপুর মহানগর শাখার আমির অধ্যাপক মো: জামাল উদ্দিন, সিনিয়র নায়েবে আমির মোহাম্মদ আব্দুল হাকীমসহ জেলা উপজেলা ও মহানগর পর্যায়ের বিভিন্ন নেতারা বক্তব্য দেন। এছাড়াও জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আহত পোশাকশ্রমিক মুকুল কুমার দত্ত এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের গণআকাঙ্খাই সংস্কার ও পরিবর্তনের অধিকার রাখে। এই কাজে সকলকে সহযোগিতা করতে হবে। আমরা একটি কালো যুগ পার করেছি বিগত ১৮টি বছর। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টনে প্রকাশ্য দিবালোকে সমস্ত গুম, হত্যা, রিমান্ড, ক্রসফায়ারের মাস্টার মাইন্ড খুনি, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নির্দেশে পল্টনে লগিবৈঠা দিয়ে আমাদের সাতজন তরুণ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছ। তাদের লাশের ওপর ওঠে উল্লাস করেছিল। আমরা সেই ইতিহাস, ছবি ভুলে যাইনি।’
তিনি বলেন, ‘বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে অর্থনীতিতে চলেছিল লুটপাট, বিচার অঙ্গনে কোনো ন্যায়বিচার ছিল না। শেখ হাসিনার পরিবার এবং আওয়ামী পরিবার সিন্ডিকেট করে ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছু তছনছ করে দিয়েছিল। কত মানুষ শহীদ হয়েছে, কত মানুষ আহত হয়েছে, পঙ্গু হয়েছে, লাখ লাখ মানুষ কারাবরণ করেছে। শিশু ও বৃদ্ধ মা-বাবা আল্লাহর কাছে চোখের পানি ফেলে কান্না করেছে। অত্যাচারী শাসকের হাত থেকে এ জনপদকে রক্ষা করার জন্য দোয়া করেছে। আমরা জানি না, কোন শহীদ বা কার হাতকে আল্লাহ কবুল করেছেন। ৫ আগস্ট আসমান থেকে আল্লাহর রহমতের ধারা বর্ষিত হয়েছে।’
তিনি আওয়ামী লীগ আমলে জামায়াত নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমাদের বহু নেতা-কর্মীদেরকে গ্রেফতার করে বৃদ্ধ বয়সে কারাগারে নির্যাতন করেছে। তাদেরকে ফাঁসি দিয়েছে। মিথ্যা মামলা থেকে শুরু করে মিথ্যা বিচারক সাজিয়ে রায় দিয়ে ইতিহাসের বর্বরতম জুডিশিয়াল কিলিং করে আমাদের নেতাদেরকে হত্যা করা হয়েছে। বিদেশ থেকে রায় লিখে দেয়া হয়েছে। সেই হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড হচ্ছে শেখ হাসিনা। তিনি এখন ভারতে পালিয়ে গিয়েছেন। সেখান থেকেও তিনি ষড়যন্ত্র করছেন। একজন আন্তর্জাতিক খুনি ও সব খুনের মাস্টারমাইন্ডকে ভারত আশ্রয় দিয়ে জেনেভা কনভেনশন এবং সকল আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করেছে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ভারতকে চিঠি দেয়া হয়েছে শেখ হাসিনাকে ফেরত দেয়ার জন্য। তাকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
জুলাই বিপ্লবের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ আন্দোলনে দু’হাজার ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছে। ৪০ হাজার ছাত্র-জনতা আহত হয়েছে, পঙ্গু হয়েছে। এই যে ত্যাগ, রক্তদান, যারা চলে গেছে তারা তো বিজয় দেখে যেতে পারেনি। তাদের স্ত্রী, সন্তান, শিশুরা কাঁদছে, আহতরা হাসপাতালে, বিজয়ের স্বাদ তারা দেখতে পারছে না। আমরা সবাই তাদের রক্তের কাছে ঋণী। তাদের ঋণ শোধ করার একটাই উপায় আছে। তারা যে ইনসাফভিত্তিক একটি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য রক্ত দিয়েছিল সেই স্বাধীন, কল্যাণরাষ্ট্রের বাংলাদেশ আমাদের গড়তে হবে। একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা এই নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই।’
এ সময় সমাবেশে জেলা নায়েবে আমির মাওলানা শেফাউল হক, মহানগর নায়েবে আমির মো: খায়রুল হাসান, মহানগর শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি মো: হোসেন আলী, মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি আবু সাঈদ মুহাম্মদ ফারুক, জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মো: আনিসুর রহমান বিশ্বাস, অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান খান, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য মাস্টার মোখলেছুর রহমান খান, মোহাম্মদুল্যাহ, জেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি এ টি এম মুজাহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সালাহ উদ্দিন আইয়ুবী, কালিয়াকৈর পৌর জামায়াতের আমির মো: ইয়াসিন আলী মৃধা, কাপাসিয়া উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা ফরহাদ হোসেন মোল্লা, কালিগঞ্জ উপজেলা আমির মাওলানা মাহমুদুল হাসান, শ্রীপুর উপজেলা আমির মাওলানা নুরুল ইসলাম, গাজীপুর সদর উপজেলা আমির মো: আলাউদ্দিন, কালিয়াকৈর উপজেলা আমির মো: বেলাল হোসাইন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা