৮০ বছরের আবদুল মান্নান এখনও সংসার চালান খেজুরের রস সংগ্রহ করে
- মো: আসাদুজ্জামান আসাদ, শিবপুর (নরসিংদী)
- ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৪৪
এলাকায় খেজুর গাছি নামে পরিচিত আ: মান্নানের বয়স এখন ৮০ ছুঁই ছুঁই। বাড়ির পাঁচ শতাংশ ভিটা জমি ছাড়া আর কোনো জমি নেই তার। শীতের কয়েক মাস খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে যে আয় হয় সেই টাকা দিয়েই চলে তার সংসার। এভাবেই ৮০ বছর জীবনের ৬০ বছর সময় পার করেছেন খেজুর রস বিক্রি করে।
আ: মান্নান নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়নের গড়বাড়ী গ্রামের বাসিন্দা।
সরেজমিনে স্থানীয় গড়বাড়ী বাজারে দেখা হয় তার সাথে। এ সময় তিনি খেজুর রস বিক্রি করছিলেন। ভোর ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে তিনি প্রতিদিন গড়বাড়ী বাজারে রস বিক্রি করেন। এরপরে কেউ এলে আর রস পায় না। তার খেজুর রসের চাহিদাও রয়েছে অনেক।
আ: মান্নান জানান, তার বর্তমান বয়স ৮০ ছুঁই ছুঁই। প্রতি বছর তিন থেকে চারটি খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে তিনি সংসার চালাচ্ছেন।
এই বয়সেও খেজুর গাছে উঠে রস সংগ্রহ করে সংসার চালানোর কারণ জানতে চাইলে তিনি আবেগতারিত হয়ে জানান, তার তিন ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু চেষ্টা থাকা সত্ত্বেও তা আর হয়নি। মেয়েরা বিবাহিত। দুই ছেলে মারা গেছেন। এক ছেলে বর্তমানে জীবিত আছেন। তাও আলাদা থাকেন।
আ: মান্নান ও তার স্ত্রী একসাথে থাকেন। তার স্ত্রীও মানসিক প্রতিবন্ধী। সব মিলিয়ে তিনি অতি কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। বাধ্য হয়েই জীবন নির্বাহের জন্য এই বয়সেও তিনি কনেকনে শীতে খেজুর গাছে উঠেন, রস সংগ্রহ করেন।
তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তা আর সম্ভব হয়নি। তিনি খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করে আসছেন প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ বছর ধরে।
প্রতি শীত মৌসুমের এই দুই থেকে আড়াই মাসে তিনি তিন থেকে চারটি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন। প্রতিদিন সব গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা যায় না। একেক দিন একেক গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন। একটি গাছ থেকে সর্বোচ্চ তিন থেকে চার লিটার রস সংগ্রহ করতে পারেন তিনি। গাছের মালিককে এক দিনের রস দিয়ে দিতে হয়। প্রতি লিটার রস ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি করেন। এই টাকা দিয়েই তিনি তার সংসার চালান।
শীত মৌসুম শেষে তিনি কলা কিনে পাকিয়ে বিক্রি করেন। আবার তালের মৌসুমে তালের শাঁস বিক্রি করে তার সংসার চালান। বয়স্ক ভাতা পান তিনি। মৌসুম অনুযায়ী খেজুর রস, তালের শাঁস, পাকা কলা বিক্রি করে যে টাকা আয় করেন, তার সাথে বয়স্ক ভাতা মিলিয়ে খুবই কষ্টে দিনাতিপাত করেন। বয়সের ভারে নুঁয়ে পড়লেও পরিশ্রম করে টাকা রোজগার করেন তিনি।
আ: মান্নানের প্রতিবেশী সবুজ মিয়া জানান, দাদার বয়স প্রায় ৮০-এর উপরে। এই বয়সে কনকনে শীতে খেজুর গাছে উঠে রস সংগ্রহ করছেন, যা খুবই দুঃখজনক। ছেলে থাকা সত্ত্বেও তাকে এ বয়সে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংসার চালাতে হচ্ছে। তবুও তিনি ভিক্ষা করছেন না।
শিবপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ বিন সাদেক জানান, উপজেলার ২৫০টি খেজুর গাছ থেকে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন গাছি রস সংগ্রহ করে বিক্রি করছেন। এই রস ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা লিটার প্রতি বিক্রি করা হয়। মৌসুমের দুই থেকে আড়াই মাস এ রস সংগ্রহ করা হয়। গাছিদের প্রতি আমাদের পরামর্শ, বাদুর যাতে খেজুর রসে মলত্যাগ করতে না পারে সেই ব্যবস্থা করে যেন রস সংগ্রহ করা হয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা