আ’লীগ ১৯৭১ পুঁজি করে এই দেশকে শোষণ করেছে : অধ্যাপক মুজিবুর
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ২২:০৯
আওয়ামী লীগ ১৯৭১ পুঁজি করে এই দেশকে শোষণ করেছে মন্তব্য করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, ‘বাংলাদেশে ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী ১৯৭১-এর তকমা লাগিয়ে ৫৪ বছর জনগণের সাথে প্রতারণা করছে। জামায়াতে ইসলামীর দেশপ্রেমিক নেতাদের বিরুদ্ধে মানুষকে মিথ্যা গল্প শুনিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। গণতন্ত্রের সাথে ১৯৭১-এর পর তারাই বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। শেখ মুজিবুর রহমান গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করে এদেশে সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল কায়েম করেছিল। নিজ দলীয় গণমাধ্যম ব্যতীত সকল গণমাধ্যম বন্ধ করে দিয়েছিল।’
শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) বিকেলে ডেমরা থানা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘দুনিয়ার কল্যাণের সাথে আখেরাতের কল্যাণ নিশ্চিতে কাজ করছে জামায়াতে ইসলামী। এদেশের মানুষের সত্যিকার কল্যাণে ও মুক্তির জন্য ছাত্র-জনতার বিপ্লবে অর্জিত এই নতুন বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিতে অবশ্যই জামায়াতে ইসলামীকে বেছে নিতে হবে। দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলগুলো ৩০ বছর কেবল নিজেরা ভালো থাকার চিন্তা করেছে।’
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘ইসলামকে রাষ্ট্র থেকে বাদ দেয়ায় দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অশান্তি তৈরি হয়েছে। যা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও চলছে। মুসলমানদের এই বাংলাদেশে আল্লাহর আইন ছাড়া সুবিচার কখনোই আসবে না। মানুষ নিজের স্বার্থ দেখে, কিন্তু ইসলামী বিধান দেশের প্রতিটি নাগরিকের ভালো থাকার নিশ্চয়তা দেয়।’
তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে জাতীয় সংসদে কুরআনের আইনকে যারা বিজয়ী করতে চায় তাদেরকে পাঠাতে হবে। জনগণ যদি তা করতে ব্যর্থ হয় তাহলে আবারো দেশ পশ্চাতে অগ্রসর হবে। চরিত্র না থাকলে মানুষের কিছুই থাকে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা রাজনীতি করেন তাদের চরিত্রবান হতে হবে। রাজনৈতিক নেতারা চরিত্রহীন হলে দেশের জন্য ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনেন। সুতরাং অবশ্যই সচেতন থেকে মানুষের কল্যাণে এগিয়ে যেতে হবে।’
কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো: নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির আব্দুস সবুর ফকির, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি মো: কামাল হোসাইন, নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখা সেক্রেটারি মো: হাফিজুর রহমান।
এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিসে শূরা সদস্য ও ডেমরা মধ্য থানা আমির মোহাম্মদ আলী, ডেমরা দক্ষিণ থানা আমির মির্জা মো: হেলাল, ডেমরা উত্তর মাওলানা মো: মিজানুর রহমান, ডেমরা পূর্ব কে এম মোজাফফর হোসাইন, ডেমরা পশ্চিম মাওলানা মো: দেলোয়ার হোসাইন, সেক্রেটারি ডেমরা মধ্য হাসান মুহাম্মদ শিবলী, মাওলানা আবু-তালেব, মো: জসিম উদ্দিন সিকদার, হাফেজ ইসমাইল আদনান, ইঞ্জিনিয়ার তমিজ উদ্দিন, ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার কামারাম মুনীর ফুয়াদসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘স্বাধীনতার পরই দেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিবেশী দেশের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ থেকে চেতনার নামে ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করার চক্রান্ত করেছিল ষড়যন্ত্রকারী একটি গোষ্ঠী। যারা দেশে ব্যাংক লুট, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, গুম-খুন জনগণের জীবনকে দুর্বিষহ করে দিয়েছিল। চেতনার নামে আওয়ামী লীগ যা করেছে তা ১৯৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রকৃত চেতনা নয়। এজন্য ২০২৪ ছাত্র জনতা তাদেরকে বিদায় করেছে। বর্তমানে একটি দল আবারো দেশে চেতনার ব্যবসা করতে যাচ্ছে। তাদের খেয়াল রাখতে বলব চাঁদাবাজ, দখলবাজের তালিকা করা আছে। সাবধান হন, সেই তালিকায় নতুন করে আপনাদের নাম যেন যুক্ত না হয়। অযাচিত বক্তব্য বন্ধ করেন, না হলে তালিকা ছেড়ে দিলে বুঝবেন জনগণের ক্ষোভ। জনগণ জানে দেশে কারা দুর্নীতি, চাঁদাবাজিতে নিমজ্জিত। আমরা তাদের বলি, আপনাদের মুখে জামায়াতের সমালোচনা মানায় না। দেশে ন্যায়বিচার, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ এই নতুন প্রজন্মের চাওয়া। এর বিরুদ্ধে যারা যাবে তাদের খাওয়া নেই ভবিষ্যতের বাংলাদেশে।’
তিনি বলেন, ‘অবিলম্বে এটি এম আজহারুল ইসলামকে মুক্তি দিতে হবে। দেশের মানুষ ইতোমধ্যেই জামায়তের দীর্ঘ ১৭ বছরের কুরবানীর কারণে এ দলের প্রতি জনগণ আস্থা রাখছে। ন্যায়বিচার, বৈষম্যহীন ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে ছাত্রদের ও জামায়াতের চাওয়া এক হয়ে গেছে। তাই বন্ধু রাজনৈতিক দলের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। এখনো সময় আছে সোজা পথে চলুন।’
সবুর ফকির বলেন, ‘আল্লাহু আকবার স্লোগান কখনো থামায়নি জামায়াত। এই ডেমরা এলাকায় গুলি, জেল নিশ্চিত জেনেও মিছিলে গিয়েছে হাজারো জামায়াতের নেতা-কর্মীরা। দেশের প্রয়োজনে তারা সব সময় ভূমিকা পালন করবেন।’
এ সময় কর্মী সম্মেলনের বিশেষ অতিথি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ‘চাঁদাবাজ, দখলদার যে দলেরই হোক, আমরা জনগণকে সাথে নিয়ে তাদের মোকাবেলা করব। মনে রাখবেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা পালায় না। অন্যদিকে পালানো অভ্যাস আওয়ামী লীগের, সেই অভ্যাস আর কোনো দল বা গোষ্ঠীর মাঝে দেশবাসী দেখতে চায় না।’
প্রেস বিজ্ঞপ্তি