শিবচরে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য খেজুরের রস
- আহসান হাবীব, শিবচর (মাদারীপুর)
- ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩:১৫
খেজুর গাছের রস ও গুড় আমাদের সংস্কৃতির একটি বিশেষ অংশ। শীতের সকালে খেজুরের রস, রসের পিঠা, গুড়-মুড়ি আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্য।
মাদারীপুরের শিবচরে গত কয়েক বছর আগেও শত শত খেজুর গাছ ছিল। ওইসব গাছ থেকে শীতকালে যত খেজুরের রস সংগ্রহ হতো তা দিয়ে প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটিয়ে তৈরি হতো খেজুরের গুড়, যা এখন আর সম্ভব হচ্ছে না।
ফলে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে নকল গুড়ে। এখন এসব গুড়েই তৈরি হচ্ছে পিঠাপুলিসহ অন্যান্য মিষ্টান্ন। গাছি সঙ্কট, অবহেলা, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও নগরায়ণের প্রতিযোগিতায় ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ।
সরেজমিন দেখা গেছে, শেখপুর, বন্দরখোলা, সন্যাসীরচরসহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তায় ও অনেক বাড়িতেই কিছু খেজুরের গাছ রয়েছে। সারা বছর এসব গাছ অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকলেও শীতের মৌসুমে এদের কদর বেড়ে যায়।
গাছগুলোকে অবলম্বন করে সেলিম মিয়ার মতো অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। প্রতি বছর শীত এলেই তারা চলে আসেন ডেমরায়। কারণ এখান থেকে কম দামে রস কিনে বাজারে বিক্রি করে ভালো দাম পাওয়া যায়।
উপজেলা বহেরাতলা দক্ষিণ ইউনিয়নের আবুল মোল্লা বলেন, কাঁচা রসের পায়েস খাওয়ার কথা এখনো ভুলতে পারি না। আমাদের নাতি-নাতনিরা তো আর ওই দুধচিতই, পুলি-পায়েস তেমন খেতে পায় না। তাই যে কয়টি খেজুর গাছ আছে তা থেকেই রস, গুড়, পিঠাপুলির আয়োজন করা হয়।
গাছি নুর ইসলাম মাদবর জানান, খেজুরের গাছ কমে যাওয়ায় গাছিদের চাহিদাও কমে গেছে। আগে এই কাজ করে ভালোভাবেই সংসার চালাতেন। আগে যে আয়-রোজগার হতো তাতে সঞ্চয়ও থাকতো, যা দিয়ে বছরের আরো কয়েক মাস সংসার চলতো।
ঐতিহ্যবাহী এ খেজুর রসের উৎপাদন বাড়াতে হলে টিকিয়ে রাখতে হবে খেজুর গাছের অস্তিত্ব। আর সেজন্য যথাযথভাবে পরিবেশ আইন প্রয়োগের মাধ্যমে ইটভাটাসহ যেকোনো বৃক্ষ নিধনকারীদের হাত থেকে খেজুর গাছ রক্ষা করতে হবে।
শিবচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, শিবচরে নদী ভাঙন, জ্বালানি হিসেবে গাছের ব্যবহার, নতুন করে চারা রোপণ না করাসহ বিভিন্ন কারণে খেজুরের গাছ এখন অনেকটাই কমে গেছে। সাম্প্রতিককালে কিছু কিছু এলাকায় কৃষকদের খেজুর গাছ লাগানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বাড়ির আনাচে-কানাচে, রাস্তার পাশে অথবা পরিত্যক্ত স্থানে কৃষকেরা পর্যাপ্ত পরিমাণে খেজুর গাছ রোপন করলে ভবিষ্যত প্রজন্মকে খেজুরের রস ও গুড়ের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা