মুক্তিপণেও জীবিত পেলো না ৩ বছরের শিশু আবদুল্লাহকে
- আলি জামশেদ, নিকলী (কিশোরগঞ্জ)
- ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮:৫৯
মুক্তিপণের পরেও জীবিত ফেরত পেলেন না ৩ বছরের শিশু আবদুল্লাহকে তার মা-বাবা।
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার পূর্ব সীমান্ত ও নিকলী উপজেলা সংলগ্ন করগাঁও ইউনিয়নের কাটুরদিয়া গ্রামের এনার মিয়ার ৩ বছরের শিশু আবদুল্লাহকে গত ২৩ ডিসেম্বর দুপুর আড়াইটার দিকে খাওয়া শেষে বাড়ির সামনের রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করার সময় নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। পরদিন সকালে দুইবার আব্দুল্লাহর চাচা রোমানের ব্যক্তিগত নম্বরে ফোন করে মুক্তিপণ হিসেবে ৩০ হাজার টাকা দাবি করে। তবে ২৪ ডিসেম্বর সকাল ১১টা ২৭ মিনিটে একটানা ১০ মিনিট ২৭ সেকেন্ড কথা বলেন অপহরণকারীরা। এ সময়ে টাকা দিলেই ছেলেকে জীবিত ফেরত দিবে বলেও উল্লেখ করে তারা। কললিস্ট চেক করে দেখা যায়, ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ৩৮ বার মোবাইলে কথা বলেছে।
ছেলেকে ফেরত পাওয়ার নেশায় মা হেনা আক্তার দেবর নোমানকে নিয়ে ২৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় নিকটস্থ কটিয়াদী উপজেলার মানিক খালীর ভাট্রা নামক ফাঁড়ি থানায় যোগাযোগ করলেও পিতার অনুপস্থিতিতে নিখোঁজের অভিযোগ নেয়া হয়নি বলে পরিবার সূত্র জানায়। তবে পরদিন নিখোঁজ শিশু আবদুল্লাহর বাবা তার ঢাকা থেকে থানায় এসে নিখোঁজের সন্ধান চেয়ে একটি সাধারণ ডায়রি করেন।
আবদুল্লাহর পরিবারের সদস্যরা জানান, ছেলেকে অক্ষত ও জীবিত ফিরে পাওয়ার আশায় মুক্তিপণ হিসেবে ৬ ধাপে রোমানের ব্যক্তিগত নাম্বার থেকে অপহরণকারীদের দেয়া বিকাশ নম্বরে ৩৪ হাজার ৫০০ টাকা পাঠানো হয়। প্রথমে ২৪ ডিসেম্বর দুপুর ১২টা ৪৮ মিনিট ২ হাজার টাকা, পরে একই দিনে আবারো ২ হাজার, তৃতীয় ধাপে ৬ হাজার আর পরবর্তীতে ১০ হাজার করে দুইবার টাকা পাঠানো হয়। সবশেষে ২৬ ডিসেম্বর সকাল ১০টা ৭ মিনিটে আড়াই হাজার টাকা পাঠান ছেলেকে কষ্ট না দেয়া ও ভালো কিছু কিনে খাওয়ানোর জন্যে
তাদের অভিযোগ, ২৬ তারিখে কোনো একটি স্থানে ছেলেকে পৌঁছে দেয়ার কথা থাকলেও আর দেয়া হয়নি। দুপুর ২টার পর মোবাইল নাম্বারটিও বন্ধ করে দেয় অপহরণকারীরা। ২৬ তারিখ সবশেষ কথা হয় দুপুর ১২টা ২ মিনিটে দীর্ঘ ৯ মিনিট ৩৮ সেকেন্ড ব্যাপী। এ সময়ে উল্টো ভিন্ন কথা শুনান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কেন জানালেন এ কারণে।
ঘটনার ৫ দিন পরে ২৭ ডিসেম্বর সকাল ৮টার দিকে শিশুটিকে বকুল নামের অপর এক চাচা পানিতে ভাসতে দেখেন শিশুটিকে। বকুলের ভাষ্য নিখোঁজের সময়ে হাফপ্যান্ট ও গ্যাঞ্জিপরা মৃত আবদুল্লাহকে পানি থেকে তোলার সময়ে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা ও শরীর শক্ত মনে হয়েছে। কপালের সামনের অংশে একটুখানি ফুলা বলে জানান শিশুটির বাবা এনার।
এ ঘটনায় স্থানীয় থানা পুলিশকে খবর দেয়া হলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বলেও স্থানীয়রা জানান।
পরিবারের স্বজন ও স্থানীয় অভিভাবকরা মোবাইল ফোনে মুক্তিপণ হিসাবে টাকা নেয়া আর নিখোঁজের পাঁচদিন পরে পরিস্কার পানিতে লাশের সন্ধানকে রহস্যময় ঘটনা বলে মনে করছেন। এলাকাবাসী এই নিষ্পাপ ফুটফুটে শিশুটির মৃত্যুর রহস্য জানতে চেয়েছেন আইনিভাবে।
নিহত শিশু আবদুল্লাহর মা হেনা আক্তার কান্নারত অবস্থায় বলতে থাকেন, বাপের দেশ নেত্রকোনা ছেড়ে ১৭ বছরের সংসার জীবন। চার মেয়ের মধ্যে একমাত্র ছেলে আব্দুল্লাহকে ছাড়া কিভাবে থাকব। পিতা এনার ও ফুফু নার্গিস আক্তার আবদুল্লাহর মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান।
এ বিষয়ে ভাট্রা ফাড়ি থানার এ এস আই আমিনুল ইসলাম অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, লাশ উদ্ধারে পর পুলিশের এসআই ফকরুল ইসলামের হেফাজতে ময়না তদন্তের জন্যে পাঠানো হয়েছে।
কটিয়াদী উপজেলার দায়িত্বে থাকা হোসেনপুর সার্কেল এসপি মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন জানান, ময়নাতদন্তের উপর নির্ভর করবে পরবর্তী পদক্ষেপ। তবে প্রাথমিকভাবে শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলেও তিনি উল্লেখ করেন।