পাকুন্দিয়ায় শীতকালীন সবজি চাষে লোকসানের মুখে কৃষকরা
- মুহিব্বুল্লাহ বচ্চন (পাকুন্দিয়া) কিশোরগঞ্জ
- ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১৮
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় স্থানীয় বাজারগুলোতে শীতকালীন শাঁক-সবজির উপস্থিতি বেড়েছে। চাহিদার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সবজির সরবরাহ। দামও মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে। তবে লোকসানের মুখে রয়েছেন কৃষকরা।
গত এক সপ্তাহের ব্যাবধানে আলু, পেয়াজ, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ সব ধরনের সবজির দাম আগের তুলনায় কয়েকগুন কমেছে। আর এতে সাধারণ মানুষ স্বস্তি প্রকাশ করলেও লোকসান গুনতে হচ্ছে সবজি চাষিদের।
কৃষকরা বলছেন, পাইকারি বাজারের সাথে খুচরা বাজারের সমন্বয় না থাকায় বাজারে এ অবস্থা চলছে। বড় ব্যাসায়ীদের সিন্ডিকেটের কবলে পরে কৃষকরা বারবার লোকসান দিচ্ছে। তাই বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন কৃষকরা।
জানা যায়, ব্রহ্মপুত্র নদের তীর ঘেষা এ উপজেলা সবজির জন্য বিখ্যাত একটি স্থান। এখানকার উৎপাদিত সবজি এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানি হয়ে থাকে। সারা বছর এ অঞ্চলে সবজির আবাদ হয়।
এ উপজেলা থেকে বছরে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার সবজি বিক্রি হয়। উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের তারাকান্দি বাজারেই প্রতিদিন কোটি টাকার সবজি বেচা-কেনা হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকাররা এ বাজার থেকে সবজি কেনেন। সবজি সংরক্ষণের জন্য এ অঞ্চলে সরকারি বেসরকারি তিনটি কোল্ড স্টোরও রয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার সবচেয়ে বড় সবজির বাজার তারাকান্দি বাজারসহ কয়েকটি বাজারে দেখা যায়, শীতকালীন সবধরনের সবজি প্রচুর রয়েছে। নতুন আলু, নতুন পেয়াজ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, সিম, টমেটো, গাজর, লাউ, মুলাসহ সব ধরনের সবজি রয়েছে বাজারে।
এছাড়াও লাউ শাঁক, পালং, লাল, সরিষাসহ বিভিন্ন শাকে বাজার সয়লাব হয়েছে। এক সপ্তাহে সকল শাক সবজির দাম অনেকটা কমেছে। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ক্রেতারা ব্যাগ ভর্তি করে শাক-সবজি কিনছেন।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাইকারি বাজারের সাথে খুচরা বাজারের কোনো মিল নেই। তাছাড়া কৃষক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ বছর বীজ, সার, কীটনাশকের দাম বাড়তি ছিল তাই কৃষির উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে সব ধরনের সবজির বাজার কমে যাওয়ায় কৃষক বিপাকে পড়েছেন। বিশেষ করে যারা এ বছর ফুলকপি চাষ করেছেন তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
প্রতি পিছ ফুলকপি চাষে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ টাকা খরচ হয় কিন্তু বাজারে বর্তমানে ফুলকপি পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ৮ টাকায়। তাছাড়া আলু এবং পেঁয়াজের বীজের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় এ বছর ফলনের খরচও বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পাইকারি পর্যায়ে সবজির দাম কমে যাওয়ায় সবজি চাষিরা হতাশায় ভুঁগছেন।
বর্তমানে পাইকারি বাজারে প্রতিটি ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ৮ টাকা করে, নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি, নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়, সিম বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকা কেজি করে, প্রতিটি বাঁধাকপি পাইকারি ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা বাজারে ফুলকপি প্রতিটি ২৫ থেকে ৩০ টাকা, নতুন আলু ৫০ থেকে ৬০ টাকা করে, পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, সিম ৪০ থেকে ৫০ করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতিটি বাঁধাকপি ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবজি চাষি বড় আজলদী গ্রামের মো: নাছির উদ্দিন জানান, এ বছর এক বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করেছি। জমিতে চার হাজার চারা রোপণ করতে সার, কীটনাশকসহ খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকার মতো। আমি আশা করেছিলাম এক লাখ টাকার বেশি বিক্রি করব, কিন্তু সবজির বাজার কমে যাওয়ায় এখন লোকসান হচ্ছে।
কৃষি অফিসের তথ্যমতে, উপজেলায় এ বছর ১৩৫০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে। এছাড়াও ১২০ হেক্টর জমিতে ফুলকপি আর ১২২৫ হেক্টর জমিতে অন্য সবজির চাষ হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নূর- ই-আলম জানান, ‘সবসময় আমরা কৃষককে সঠিক পরামর্শ দিয়ে থাকি। সবজি একটি পচনশীল পণ্য তাই একই সবজি অধিক পরিমাণে চাষ করলে আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। একই সবজি বেশি পরিমান চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। আর যারা এ বছর আগাম ফুলকপি চাষ করেছে তারা লাভবান হয়েছে।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা