সাটুরিয়ার তাঁত পল্লী ফিরতে চায় সোনালী অতীতে
- মো: হুমায়ূন কবীর, সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ)
- ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫০
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার তাঁত পল্লী এক সময়ে তাঁতীদের তাঁত বানানোর খুটখাট আওয়াজে মুখরিত ছিল। বিভিন্ন উৎসবে কারিগরদের মধ্যে ছিল বাহারি ডিজাইনের শাড়ি ও লুঙ্গি বানানোর প্রতিযোগিতা। মহাজনরা সপ্তাহে পাইকারি হাটে শাড়ি, লুঙ্গি বিক্রি করে মিষ্টি হাতে নিয়ে বাড়ি ফিরতেন। কিন্তু এসব এখন কেবলই সোনালি অতীত। এখন সাটুরিয়ার তাঁত পল্লীর ব্যবসায় চলছে ভাটা। মূলধনের পুঁজি একমাত্র সম্বল তাঁত বিক্রি করে চলছে তাদের সংসার। উপজেলার কয়েক হাজার তাঁত মালিক ও কারিগর পুরনো পেশা বদলে চলে গেছেন ভিন্ন পেশায়, আবার অনেকে পাড়ি জমিয়েছেন দূর প্রবাসে।
একাধিক তাঁত মালিকের সাথে কথা বললে তারা জানান, এই এলাকায় ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্পকে কেন্দ্র করে ব্যবসার উদ্দেশে বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ ছুটে আসতো সাটুরিয়ার তাঁত পল্লীতে। এখন আর নেই তাদের আনাগোনা। বিগত দিনগুলোতে দফায় দফায় বেড়েছে সুতা, রঙ, কাপড়ের কাঁচামালের দাম। তাই কাপড় বিক্রি করেও উৎপাদন খরচ ঘরে আসছে না। অপরদিকে ভারতসহ অন্যান্য দেশ থেকে শাড়ি-কাপড় আমদানি হওয়ায় দেশে তৈরী কাপড়ের চাহিদা খুবই কম। ফলে বাধ্য হয়েই তাঁত বন্ধ করতে হচ্ছে। কাজ না থাকায় এবং দীর্ঘদিন তাঁত ব্যবহার না করায় তাঁত তৈরীর যন্ত্র ঘুণে ধরেছে, লোহায় পড়েছে মরিচা। অপরদিকে যারা এখনো টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তারা মৌসুমী ব্যবসাকে কেন্দ্র করে স্বল্প পুঁজি নিয়ে কোনো রকম টিকে আছেন।
উপজেলার হামজা এলাকার তাঁত মালিক আব্দুল মালেক বলেন, ১০ লাখ টাকার পুঁজির বিদ্যুৎ-চালিত চারটি তাঁত প্রায় দু’বছর ধরে বন্ধ। এখন কৃষিকাজ করে সংসার চালাতে হচ্ছে। তাঁতের বিভিন্ন কাঁচামালের দাম বাড়ায় কারিগরদের মজুরি দিয়ে একটা শাড়িতে যে খরচ হয় তার থেকেও কম দামে বিক্রি করতে পারলে কিছু টাকা ঘরে আসে। সুতাসহ বিভিন্ন কাঁচামালের দাম কমলে আবারো তাঁত ব্যবসায় ঝুঁকবেন তিনি।
উপজেলার নতুন ভোঁয়া গ্রামের জহিরুল ইসলাম বলেন, তাঁতের ব্যবসা না থাকায় লোকসান গুনতে হয়েছিল। তাই তাঁত বিক্রি করে এবং ঋণ পরিশোধ করে চটপটির ব্যবসা শুরু করেছি। তাঁতের ব্যবসায় ধস নামার অন্যতম কারণ হিসেবে তিনি জানান, ভারতীয় শাড়ি কম দামে পাওয়ায় আমাদের শাড়ি আর আগের মত ভালো দামে বিক্রি হয় না। তাই বাধ্য হয়েই পেশা পাল্টাতে হয়েছে।
এ বিষয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘তাঁতের ব্যবসায় নানা কারণে ভাটা পড়ায় তাঁত বিক্রি করে ইলেক্ট্রনিক্স ও মুদি দোকান দিয়েছি।’
সুতা, রঙ ও কাপড়ের কাঁচামালের দাম হাতের নাগালে রেখে, ভারতীয় কাপড় বিক্রি বন্ধ করে এবং দেশের উৎপাদিত কাপড় বিক্রির কোনো মাধ্যম তৈরি করলে তাদের ব্যবসার লোকসান ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলে আশা করেন তাঁত মালিকেরা।
এ বিষয়ে সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মো: আলতাফ হোসেন নয়া দিগন্তকে জানান, উপজেলায় প্রায় ৩৫ হাজার তাঁত মালিক ও শ্রমিক ছিল। ব্যবসায় লোকসানের কারণে বর্তমানে প্রায় ১২ থেকে ১৫ হাজার তাঁত শ্রমিক ও মালিক আছে। শাড়ি-কাপড়ের কাঁচামালের দাম কমিয়ে এবং ভারতসহ অন্য দেশের কাপড় যাতে দেশীয় কাপড়ের ওপর প্রভাব ফেলতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিলে ব্যবসায় লোকসান কাটিয়ে তাঁত ব্যবসায়ীরা লাভের মুখ দেখতে পারবেন। যারা তাঁত বন্ধ রেখেছে তারা পুনরায় তাঁত চালু করে ঐতিহ্যবাহী পেশায় ফিরতে পারবেন বলেও আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা