রাজনীতিতে আ’লীগের আর ফেরা সম্ভব না : ফজলুর রহমান
- কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
- ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০১
রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের আর ফেরা আর সম্ভব না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জের ইটনা সরকারি কলেজ মাঠে ইটনা উপজেলা বিএনপি আয়োজিত স্বাধীনতার ৫৪তম বিজয় উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান বলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এদেশে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। তিনি স্বাধীনতার ঘোষক। ১৯৭১ সালের ২৭ ডিসেম্বর তিনি নিজের নামে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। জিয়াউর রহমানকে যারা স্বাধীনতার ঘোষক মানে না, তারা স্বাধীনতা মানে কিনা- এই প্রশ্ন আছে। জিয়াউর রহমান শুধু স্বাধীনতার ঘোষকই ছিলেন না, তিনি রণাঙ্গণে থেকে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন।’
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত হওয়া শহীদ আবু সাঈদকে একবিংশ শতাব্দীর বীরশ্রেষ্ঠ উল্লেখ করে ফজলুর রহমান বলেন, ‘রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা আমাদের আবু সাঈদ। যে হাত উঁচু করে, বুক পেতে দিয়ে বলেছিল, কর গুলি। পুলিশ বুকে গুলি করেছে, পিঠ দিয়ে বের হয়ে গেছে। আবু সাঈদ দৌড় দেয়নি।’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘আবু সাঈদের এই স্পিরিটকে সবসময় আমাদের ধারণ করতে হবে। তাহলেই কোনো শকুন আমাদের দিকে আর দৃষ্টি দিতে পারবে না। এই বাংলায় কেউ কাউকে শোষণ করবে না। এই বাংলায় কেউ কাউকে অত্যাচার করবে না। কারো অধিকার হরণ করবে না। হরণ করার সাথে সাথে আবার মুক্তিযোদ্ধারা মাঠে নেমে পড়বে। আপনারা পূর্বের প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধাদের দেখেছেন। আর আজকের নতুন প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধাদেরও দেখেছেন। তাদের উদ্দেশ্য এক। দুই প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধাদেরই লড়াই ছিল মানুষের অধিকারের জন্য।’
তিনি বলেন, ‘এই দেশটা আমরা আগামীতে গড়ে তুলতে চাই সততার মধ্য দিয়ে, সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, শান্তি-শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে, শিক্ষা ত্যাগ ও মানবতার মধ্য দিয়ে। অসাম্প্রদায়িকতার মধ্য দিয়ে।’
আওয়ামী লীগের শাসনের সমালোচনা করে ফজলুর রহমান বলেন, ‘শেখ হাসিনা গত ১৫ বছরে দেশের সর্বনাশ করেছে। নিজের সর্বনাশ করেছে। তার বাপকে ডুবিয়েছে। তার দলকে ডুবিয়েছে। শেষপর্যন্ত দেশ থেকে নিজে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। পালিয়েছে কারণ, ১৫ বছর এদেশে কোনো মানুষের শাসন ছিল না। ফ্যাসিস্ট শাসন ছিল। আওয়ামী লীগ যদি ভালোই করত তাহলে তারা পালালো কেন? এত না বেটাগিরি করছিল। তাদের যে নেতা, দেশের নেতা, এই নেতার মাথার ওপরে প্রস্রাব করেছে জনগণ। কই, কেউ তো এগিয়ে এলো না।’
ফজলুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফেরা আর সম্ভব না। অন্তত আগামী ১০ বছর এদেশের মানুষ তাদেরকে রাজনীতি করতে দেবে না। আমি আওয়ামী লীগকে বলব, শেখ হাসিনাকে বলছি, মাফ চান। মানুষের কাছে হাতজোড় করে দাঁড়ান। বাঙালির মন অত্যন্ত নরম। ইচ্ছে করলে আপনাকে মাফ করতে পারে। মাফ চায়নি। এখনো চায়নি। আর হাসিনা যদি মাফ না চায়, মাথা নিচু করে বাঙালির কাছে মাফ না চায়, জীবনে সে কোনোদিন ক্ষমা পাবে না, আওয়ামী লীগ ক্ষমা পাবে না।’
দ্রুত নির্বাচন দেয়ার তাগিদ দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমরা নির্বাচন চাই। নির্বাচন দেন। যদি আপনারা নির্বাচন করতে চান, দল করেন, আপনাদের অভিনন্দন জানাবে। নির্বাচনের মাধ্যমে, জনগণের ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠন হবে। আমরা নির্বাচনের জন্য অনন্তকাল অপেক্ষা করবে না। তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফার ভিত্তিতে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে।’
এ সময় তিনি বলেন, ‘আপনারা তো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নির্বাচিত সরকারের আয়ু যদি পাঁচ বছর হয় তাইলে অনির্বাচিত সরকারের আয়ু তিন মাস, ছয় মাস হতে পারে। আপনারা এত দিন থাকতে চান কেন? এগুলো করেন কেন? ইলেকশনের কথা কইলেই মুখ কালা করেন কেন? ইলেকশন করবেন না? আমরা এমনেই মইরা যামু গা? ৭৭ বছর বয়স ফজলুর রহমানের। ১০ বছর আপনারা থাকলে আমার বয়স হইবো ৮৭। কবরে দূর্বা উঠবে। ইলেকশন করবেন না? বিএনপির মতো একটা রাজনৈতিক দল, তারেক রহমানের মতো ম্যাচিউরড লিডার এখনো আছে। আর আল্লাহর রহমতে আমার নেত্রী সুস্থ হয়ে আসবেনই। এই দেশে এখন ভোট হলে পরে ৯০ শতাংশ সিট পাবে বিএনপি।’
নিজ এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা কোনো অন্যায় কাজে জড়িত হবেন না। আমি আজকে হাজার হাজার নেতাকর্মীর সামনে বলছি, আমার ছেলে পলাশ রহমান বিএনপি করে। সেও যদি কোনো অন্যায় করে। আর আমার কানে যদি আসে, আমি আল্লাহর নামে কসম করে বলছি, সঠিক বিচার পাবেন। যদি দেখি পলাশ আপনাদের ওপর অবিচার করেছে, এক মিনিটের জন্য পলাশ বিএনপি করতে পারবে না। অন্যদের কথা বাদই দিলাম। সুতরাং সাবধান! সবাইকে সাবধান করে দিচ্ছি। তবে বিএনপি সম্পর্কে কেউ গুজব ছড়ায়েন না।’
সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের উদ্দেশে ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমি বলেছিলাম এই দিন দিন না আরো দিন আছে। কই এখন হামিদ সাব। হামিদ সাবের পুত কই। পালাইছে। আমি ফজলুর রহমান গিরস্তের পুত, কৃষকের ছেলে। তৃণমূল থেকে শুরু করে পৃথিবীর সমস্ত ইতিহাস ঘেঁটে ঘেঁটে রাজনীতি শিখেছি। শিখেছি বলেই এখনো আব্দুল হামিদের কিছুটা অস্তিত্ব আছে। নয়তো তার সমস্ত বাড়িঘর পুড়ে ছারখার হয়ে যেত। কই আমি তো বলি নাই একটা আওয়ামী লীগারকে ধরো। আমি বলি নাই। কারণ আমি আব্দুল হামিদ না। আমি ফজলুর রহমান, সাধারণ মানুষ। আমি রাজনীতি করি মানুষের জন্য। আমি প্রতিশোধের রাজনীতিতে বিশ্বাসী না।’
ইটনা উপজেলা বিএনপির সভাপতি এস এম কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে এতে আরো বক্তব্য দেন কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, সহ-সভাপতি উম্মে কুলসুম রেখা, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ ইসরাঈল মিঞা, আমিনুল ইসলাম আশফাক, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ সুমন, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মো: মারুফ মিয়া, সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ নেভিন প্রমুখ।
এর আগে তিন উপজেলা- ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামের ৭২ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা দেয়া হয় দলের পক্ষ থেকে। এ সময় ফুল ও ক্রেস্ট দিয়ে তাদের সম্মান জানানো হয়। বিজয় উৎসবে তিন উপজেলার সব মুক্তিযোদ্ধা যোগ দেন। উৎসবে লাখো মানুষের সমাগম হয়।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন ইটনা উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মো: মনির উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুজ্জামান ঠাকুর স্বপন ও সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পলাশ রহমান।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা