১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ৪ পৌষ ১৪৩১, ১৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

আবু সাঈদকে নিয়ে কটূক্তি : পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেবে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসন

২০২৪-এর ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনে প্রাণ দেয়া আবু সাঈদের গ্রাফিতি - ছবি : সংগৃহীত

কিশোরগঞ্জে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ আবু সাঈদকে কটূক্তি করে বক্তব্য দেয়ায় মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে জেলা প্রশাসন।

বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) বেলা পৌনে ১টার দিকে জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খানের মেইল থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জেলা প্রশাসনকে হেয় প্রতিপন্ন ও বিতর্কিত করার জন্য একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা কিছু শব্দচয়ন করেছেন। বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।

এদিকে, আবু সাঈদকে কটূক্তির প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে গুরুদয়াল সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিশোরগঞ্জ জেলা শাখা।

জেলা প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস, ২০২৪ উদযাপন উপলক্ষে কিশোরগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান ও শ্রদ্ধা জানানোই ছিল এ আয়োজনের মুখ্য উদ্দেশ্য। জেলা প্রশাসনকে হেয় প্রতিপন্ন ও বিতর্কিত করার হীন উদ্দেশ্য থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী ভূঁইয়া কিছু শব্দচয়ন করেন, যা জেলা প্রশাসন, কিশোরগঞ্জ কোনোভাবেই সমর্থন করে না। এটি তার একান্তই নিজস্ব বক্তব্য এবং জেলা প্রশাসন, কিশোরগঞ্জ এই বক্তব্যের সম্পূর্ণ বিরোধিতা করছে। তার বক্তব্যের বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

জানা গেছে, গত ১৬ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জে শিল্পকলা একাডেমিতে বিজয় দিবসে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ডিসিকে মঞ্চে রেখে ইদ্রিস আলী ভূঁইয়া নামে এক মুক্তিযোদ্ধা প্রশ্ন তোলেন- ‘আবু সাঈদ কিসের শহীদ? আবু সাঈদ শহীদ হইছে? কার সাথে যুদ্ধ করে শহীদ হইছে? তারা আন্দোলন করছে, দেশটাকে এক হাত থেকে আরেক হাতে পরিবর্তন করছে। তারা এখন আমাদেরকে শাসন করবে?’ বক্তব্য শেষে তিনি ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে স্লোগান ধরেন।

এর প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন। তারা বলেন, ইদ্রিস আলী ভূঁইয়া আওয়ামী লীগের দোসর। তার ছেলে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক। ইদ্রিস আলী তার লোকজনকে নিয়ে জুলাই আন্দোলনের সময় শহরের আখড়াবাজারে সৈয়দ নজরুল চত্বরে আন্দোলনকারী ছাত্রদের গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন করেছিলেন। জেলা প্রশাসক তার সাথে সম্পর্ক রাখছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতেই ১৬ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসকের সামনে গণ–অভ্যুত্থানে শহীদ আবু সাঈদকে নিয়ে তিনি কটূক্তি করেছেন। এবং বক্তব্য শেষে ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দেন। এ সময় জেলা প্রশাসক শুনেও না শোনার ভান করেন। জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান কোনো প্রতিবাদ না করায় তাকে কিশোরগঞ্জ থেকে প্রত্যাহার করতে হবে এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইদ্রিস আলীকে গ্রেফতার করতে হবে। তা না হলে ছাত্রসমাজ এর বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।

এ পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের তার বাসভবনে দাওয়াত দেন। জেলা প্রশাসক ১৬ ডিসেম্বর ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং বিতর্কিত ওই মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। পরে এই প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেন।


আরো সংবাদ



premium cement