১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

সপ্তাহজুড়ে ঘনকুয়াশা ও তীব্র শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত

- ছবি : নয়া দিগন্ত

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে সপ্তাহজুড়ে ঘনকুয়াশা ও শীতের তীব্রতায় রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ও এর আশপাশের উপজেলা ও জেলার জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। এতে করে কৃষিকাজ, যানবাহন চলাচল, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের কর্মস্থলে যাতায়াত ও কাজে বিঘ্ন ঘটায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

গত সোমবার থেকে আজ শুক্রবার পর্যন্ত প্রতি রাতেই ১০ থেকে ১১টার পর থেকে কুয়াশা পড়তে থাকে। রাত যত গভীর হয় কুয়াশার তীব্রতা তত বাড়তে থাকায় একটানা সকাল ৯ থেকে ১০টা পর্যন্ত চারদিকে কুয়াশাচ্ছন্ন থাকে। এ সময় নদীতে আরো বেশি থাকায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌ-রুটে দুর্ঘটনা এড়াতে ফেরি ও অন্য যানবাহন পারাপার বন্ধ রাখা হয়। ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে যানবাহন চলাচলও কম থাকে। এ সময়ে শীতের তীব্রতা বাড়তি থাকায় কৃষিশ্রমিক ও সাধারণ খেটে খাওয়া শ্রমিক ও মাছ ধরা জেলেদের ভয়াবহ দুর্ভোগ পোহাতে দেখা যায়।

দৌলতদিয়া ঘাট বিআইডব্লিউটিসির ম্যানেজার মো: সালাউদ্দিন ও সহকারী ম্যানেজার খোরশেদ আলম জানান, ঘনকুয়াশার কারণে দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া নৌ-রুটে দুর্ঘটনা এড়াতে চলতি সপ্তাহজুড়ে প্রায় প্রতি রাতেই কয়েক ঘণ্টা করে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখতে হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার ভোররাত ৩টা থেকে সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত এবং শুক্রবার ভোররাত আড়াইটা থেকে সকাল সোয়া ৭টা পর্যন্ত ফেরি বন্ধ রাখা হয়। দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে সড়ক-মহাসড়কগুলোতে দিনে দুপুরেও হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়। রাতের বেলা চলাচল করা দূরপাল্লার গাড়িগুলো ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে থাকে।

শীতের এ তীব্রতার প্রভাব পড়েছে কৃষকের সবজি ক্ষেতে। প্রতিদিন কুয়াশা থাকায় টমেটো, আলু, কপি, বেগুনসহ বিভিন্ন ক্ষেতে পচন ধরায় উৎপাদন কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

দেবগ্রাম ইউনিয়নের তেনাপচা এলাকার কৃষক আলামিন শেখ, মজিদ শেখ, খালেক খন্দকারসহ একাধিক কৃষক জানায়, গত কয়েক দিনের অতিরিক্ত কুয়াশা ও শীতে টমেটো, বেগুন ও অন্যান্য সবজি ক্ষেতে পচন ধরেছে। প্রচণ্ড শীত ও ঘনকুয়াশা উপেক্ষা করে ছোট ছোট শিশুদের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে দেখা যায়।

পৌরসভার নগর রায়েরপাড়ার কাঠমিস্ত্রী মন্টু ধর, ওলিমদ্দিনপাড়ার রিকশাচালক আব্দুস ছাত্তার, ভাটাশ্রমিক কাজল মিয়া শীতের তীব্রতায় কষ্টের কথা প্রকাশ করে বলেন, অতিরিক্ত শীতের কারণে সময় মতো কাজে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সময় মতো কাজে যেতে না পারলে ঠিকমতো পেটের ভাত জোটে না।

গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা: প্রদীপ কান্তি পাল জানান, প্রচণ্ড শীতের কারণে এ অঞ্চলে শীতজনিত রোগ-বালাই বেড়েছে। এতে করে বয়স্ক ও শিশুদের জ্বর-সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, চর্মরোগসহ নানা রকমের শীতজনিত রোগব্যাধির প্রকোপ বেড়েছে। নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশু ও বৃদ্ধরা চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। আমরা তাদের পর্যাপ্ত পরিমানে ওষুধ ও চিকিৎসা সেবা দিয়ে চলেছি।

আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, শীতের তীব্রতা আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ঘন কুয়াশার বিস্তার এবং সূর্যের তাপ কম পাওয়ায় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান বেশ কমে গেছে। এতেই শীতের তীব্রতা বেড়েছে। শীতের তীব্রতা আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement