১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

জাতীয় ও ইউপি নির্বাচন একসাথে হলে বুথ দখল হবে না : আব্দুল মুয়ীদ

ফরিদপুরের জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্যদের মতবিনিময় সভায় অতিথিরা - ছবি : নয়া দিগন্ত

জাতীয় ও ইউপি নির্বাচন একসাথে হলে আর বুথ দখল সহজ হবে না মন্তব্য করে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী বলেছেন, ‘জাতীয় ও ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং ইউপি নির্বাচনের পদ্ধতি বদলে মেম্বারদের ভোটে চেয়ারম্যানদের নির্বাচিত করা যায় কিনা সেটি চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এছাড়া সরকার চালাতে এতো বেশি লোকের দরকারও নেই বলে মন্তুব্য করেন তিনি।’

বুধবার (১১ নভেম্বর) দুপুরের দিকে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্যদের এক মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন।

এ সময় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো: মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘বিগত আমলে প্রশাসনকে জনবিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা এই প্রশাসন শব্দটি বাদ দিয়ে অন্যকিছু বলা যায় কিনা সেটিও চিন্তা করছি।’

মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আব্দুল মূয়ীদ চৌধুরী বলেন, ‘জনপ্রশাসন সংস্কারের বিষয়টি অনেক কঠিন ও ব্যাপক বিষয়। আমরা এখনো চিন্তা করছি কিভাবে এটি করবো। হয়তো একাডেমিক কিছু করে দেয়া যাবে তবে তা বাস্তবসম্মত হবে না। এজন্য আমরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে এ বিষয়ে জনগণের মতামত নিচ্ছি। কিছু পরিকল্পনা আমরা দেবো যেগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, ‘যদিও নির্বাচনের জন্য একটা আলাদা কমিশন আছে, তবে আমাদের চিন্তা হলো একই দিনে ইউনিয়ন পরিষদ আর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কারণ ইউনিয়ন পরিষদে মেম্বার ওয়ার্ডভিত্তিক পাহারা দিবে। তাহলে সেন্ট্রালি আর কেউ বুথ দখল করতে পারবে না। এটি আমরা সুপারিশ করব। তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে এখন যে পদ্ধতিতে নির্বাচন হয় তাতে পলিটিক্যাল প্রভাবটা বেশি থাকে। আর এটিকে যদি আমরা মাল্টিপল ওয়ার্ডে করে দিতে পারি, মেম্বাররা চেয়ারম্যানদের নির্বাচিত করবে। তাহলে ওখান থেকেই গণতন্ত্রটা শুরু হবে। তাহলে কেউ পুরো জিনিসিটা দখল করে বসে থাকবে না।’

এ সময় তিনি সরকারি অফিস আদালতে জনবল প্রসঙ্গে বলেন, ‘এখন যেভাবে অনেক লোক নিয়োগ করা হয়, এতো লোক দরকার নাই। আরো কম লোকে সরকার চলতে পারে। পুলিশের সংখ্যা আরো দরকার। কারণ আজকে জটিলতার কারণে আইনশৃঙ্খলা অনেক বেশি কঠিন হয়ে পড়েছে। সেখানে পুলিশের সংখ্যা বাড়াতে হবে। তবে গত সরকার যেভাবে করেছিল সেভাবে না। জেনুইন অফ পিপল অরিয়েন্টেটড যাতে তৈরি করা যায় সেজন্য আমাদের সুপারিশ থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘ডিসির সাথে সাধারণ মানুষ দেখা করতে পারে না। এজন্য ভাবছি সপ্তাহে একদিন ডিসি অন্য কোন কাজ করবেন না। জনগণের সাথে থাকবেন। যেকোনো মানুষ এসে তার সাথে দেখা করতে পারবেন। ডিসি যদি কনফারেন্স হলে থাকেন ওই দিন অন্য বিভাগের অফিসার, এসপিরাও সাথে থাকবেন। তাহলে মানুষ এসে যেকোনো বিষয়ে সরাসরি সমাধান করতে পারবে। এটি একটি ভালো উদ্দ্যোগ হতে পারে।’

এ সময় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো: মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি। এখন কিন্তু অফিসে আর লাল ফিতা নাই। যারা রক্তের বিনিময়ে আমাদের এই পরিবর্তন এনে দিলো তাদেরকে প্রাপ্য সম্মানটা দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘জনপ্রশাসন সংস্কারে এ পর্যন্ত অনেক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে অনেক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। চাকরি আর চাকরির মতো থাকবে না। আমরা জনগণের সেবক। জনগণ আমাদের বেতন দেয়। আমাদের নতুন করে এটি ভাবতে হবে।’

এ সময় মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান মোল্যা। আরো বক্তব্য দেন ফরিদপুর মুসলিম মিশনের সম্পাদক অধ্যাপক এম এ সামাদ, সরকারি ইয়াছিন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফজলুল হক, বাকীগঞ্জ মাদরাসার অধ্যক্ষ মাহমুদুল হাসান, সনাক ও মহিলা পরিষদের প্রতিনিধি শিপ্রা রায়, ব্যবসায়ী নেতা আওলাদ হোসেন বাবর, সাংবাদিক মফিজ ইমাম মিলন, হারুন আনসারী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সামিয়া আক্তার, সোহেল শেখ, নিরব ইমতিয়াজ শান্ত, আনিসুর রহমান সজল, ফজলুল হাদি সাব্বির প্রমুখ।

সভায় সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এম এ হালিম, সারদা সুন্দরী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুলতান মাহমুদ হিরক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইয়াছীন কবির, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কালাম মো: লুৎফর রহমানসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement