তেল উৎপাদনে টেকসই সমাধান হবে ‘সাউ পেরিলা’
- শেকৃবি প্রতিনিধি
- ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭:১২
বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা এবং তেল উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে সহায়ক হতে পারে সাউ পেরিলা। সাউ পেরিলা একটি পুষ্টিগুণসম্পন্ন এবং উচ্চমানের তৈলজাত ফসল।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এইচ এম এম তারিক হোসেনের তত্ত্বাবধানে ২০০৭ সাল থেকে এই ফসলের ওপর গবেষণা চলছে। এর ফলে ২০২০ সালে ‘সাউ পেরিলা-১’ নামে জাতটি নিবন্ধিত হয়, যা গোল্ডেন পেরিলা বা গোল্ডেন পূর্ণা নামেও পরিচিত।
গবেষকরা জানায়, সাউ পেরিলা তেল মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারি। এতে ৫০ থেকে ৫৫ ভাগ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এই তেলের ৯১ ভাগ ফ্যাটি অ্যাসিড অসম্পৃক্ত, যা উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, মস্তিষ্কের উন্নতি এবং ত্বকের জন্য উপকারি। সয়াবিন, সূর্যমুখী ও ভুট্টার তেলের তুলনায় পেরিলার তেলে ওমেগা-৬ মাত্রা অনেক কম, যা স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে সহায়ক হবে।
গবেষকরা আরো জানায়, সাউ পেরিলা চাষ খরিপ-২ মৌসুমে (বর্ষা মৌসুমে) করা সম্ভব এবং এটি ধানের আবাদে কোনো প্রভাব পড়ে না, ফলে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ বৃদ্ধি সম্ভব।
অধ্যাপক ড. তারিক হোসেন বলেন, প্রতি হেক্টর জমিতে এক দশমিক তিন থেকে এক দশমিক পাঁচ টন ফলন পাওয়া যায়। এই ফসল থেকে প্রায় ৪০ ভাগ তেল আহরণ করা যায়। যা সরিষা তেলের মতো স্থানীয় পদ্ধতিতে উৎপাদন করা সম্ভব। তাছাড়া এর খৈল গবাদি পশুর জন্য উপাদেয়, যা কৃষকদের জন্যও বাড়তি উপকারে আসে।
তবে সাউ পেরিলার চাষের জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন বলে মনে করেন ড. তারিক। তিনি জানান, বর্তমানে বিদেশ থেকে আমদানি করা পেরিলা তেল দেশের বাজারে লিটার প্রতি দু’হাজার টাকার ওপরে বিক্রি হয়। তাই মধ্যবিত্তের নাগালে আনতে সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া পেরিলা তেলের রফতানি সম্ভাবনাও রয়েছে। যা দেশের অর্থনীতির জন্য সুফল বয়ে আনবে।
বাংলাদেশে এই তেলের উৎপাদন বাড়াতে কৃষকরা বর্ষা মৌসুমে নিজেদের জমিতে সাউ পেরিলা চাষ করতে পারবেন, যা সরাসরি বাজারে বিক্রি করা যাবে এবং দেশের তেল আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে সাহায্য করবে। তাছাড়া বিদেশে এটি খাদ্য হিসেবে এবং তেল হিসেবে জনপ্রিয় হওয়ায় রফতানি ক্ষেত্রেও এই ফসলটি নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে।
ড. তারিক হোসেন আরো জানান, ২০২৩ সাল থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাউ পেরিলার চাষ শুরু হয়েছে এবং কৃষকরা ইতোমধ্যেই ভালো ফলাফল পেয়েছেন। আশা করছি, এই তেল দেশের খাদ্য নিরাপত্তা এবং কৃষির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, পাশাপাশি সয়াবিনসহ অন্য তেলের আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা কমাবে বলেও জানান তিনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা