২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ভৈরবে ২ সন্তানসহ স্বামী-স্ত্রীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় হত্যা মামলা

- ছবি : প্রতীকী

ভৈরবে দু’সন্তানসহ স্বামী-স্ত্রীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় নিহত জনি চন্দ্র বিশ্বাসের মা শিখা রানী বিশ্বাস হত্যা মামলা করেছেন।

বুধবার (২৭ নভেম্বর) সকালে শিখা রানী বিশ্বাস এ মামলা করেন।

জানা গেছে, মঙ্গলবার বিকেলে এ ঘটনার খবর পেয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসান চৌধুরী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এছাড়া পুলিশের ক্রাইমসিন বিভাগ, পিবিআই ও সিআইডির কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। বুধবার সকালে নিহত চারজনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ পাঠিয়েছে পুলিশ।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভৈরবের রানীর বাজার শাহজাহান মিয়ার সাততলা ভবনের একটি বাসা থেকে স্বামী জনি চন্দ্র বিশ্বাস (৩০), তার স্ত্রী নিপা রানী বিশ্বাস (২৬), তাদের দু ধ্রুব চন্দ্র বিশ্বাস (৮), মেয়ে কথা চন্দ্র বিশ্বাসের (৬) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ সময় স্ত্রী ও দু’সন্তান মৃত অবস্থায় খাটে ছিল এবং স্বামী জনি রুমের পাখার সাথে গলায় কাপড় দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পুলিশ ধারণা করছে, সোমবার রাতের কোনো এক সময়ে স্বামী প্রথমে তার স্ত্রীকে হত্যা করার পর দু’সন্তানকে হত্যা করে সে নিজে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।

পরিবারের সদস্যরা জানায়, স্ত্রী নিপা পাঁচ মাসের গর্ভবতী ছিল। নিহত জনি বিশ্বাস দীর্ঘদিন ধরে ভৈরব বাজারের একটি ওয়ার্কশপে লেদ মিস্ত্রি হিসাবে কাজ করতেন।

ভবন মালিকের স্ত্রী রিনা বেগম জানান, গত তিন মাস আগে জনি তার পরিবার নিয়ে বাসাটি সাড়ে ছয় হাজার টাকা মাসে ভাড়া নেন। তার বাসায় কার্তিক বর্মন নামের এক শ্রমিক সাবলিজ হিসেবে অর্ধেক ভাড়ায় থাকতেন। তার (কার্তিকের) স্ত্রীর নাম সৃষ্টি বর্মন। তাদের একটি ছোট মেয়ে আছে। একই বাসায় এ দু’পরিবার বসবাস করতেন।

সাবলিজ নেয়া কার্তিকের স্ত্রী সৃষ্টি বলেন, গত রোববার জনি তার পরিবার নিয়ে বাবার বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরা থানার আনোয়ারাবাদ গ্রামে বেড়াতে যান। সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তারা বাসায় আসেন। এদিন রাতে আমি স্বামীকে নিয়ে মাজারে যাই। রাত সাড়ে ১১টার দিকে আমরা বাসায় ফিরে দেখি জনির রুমের দরজা বন্ধ। মনে করেছি, তারা ঘুমিয়ে পড়েছে। এরপর মঙ্গলবার সকালে আমরা ঘুম থেকে উঠলেও তাদের খবর নেইনি। দুপুর আড়াইটার দিকে ওয়ার্কশপ থেকে জনিকে খুঁজতে এলে আমরা তাদের রুমে লাশ দেখতে পাই। পরে খবর পেয়ে পুলিশ আসে।

ভৈরব বাজার বাগানবাড়ী এলাকার মায়ের দোয়া ওয়ার্কশপে জনি বর্মন চাকরি করতেন। এই ওয়ার্কশপের কর্মচারী জোটন প্রমানিক। জোটন বলেন, গত রোববার দুপুর পর্যন্ত দোকানে কাজ করে জনি বাড়ি যাওয়ার কথা বলে দেড় দিনের ছুটি নেন। মঙ্গলবার সকালে দোকানে আসবে বলেছিলেন। এদিন সকালে দোকানে না এলে মালিক আমাকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তার বাসায় পাঠায়। আমি বাসায় গিয়ে তার রুমে ডাকাডাকি করলে কেউ সাড়া দেয়নি। আমি মনে করেছি, তারা ঘুমিয়ে আছে। পরে দোকানে চলে আসি। দুপুরে মালিক আবারো তাকে ডেকে আনতে বাসায় পাঠায়। দুপুর আড়াইটার দিকে তার বাসায় গিয়ে রুম বন্ধ দেখে ডাকাডাকি করলে কারো সাড়া মেলেনি। তখন প্রতিবেশী রুমমেট সৃষ্টিকে ঘটনাটি বলে বাসার মালিককে খবর দেয়া হয়। এ সময় প্রতিবেশীরা জড়ো হয়ে রুমের ছিদ্র দিয়ে দেখি জনি পাখার সাথে ঝুলে আছে। পরে রুমের দরজা ভেঙে দেখি স্ত্রী ও দু’সন্তান খাটে মৃত ও জনি গলায় ফাঁস দিয়েছে।

মা শিখা রানী জানান, আমার ছেলে তার পরিবারসহ দেড় দিন আমার বাড়িতে বেড়ানোর পর সোমবার ভৈরব চলে আসে। তাদের পরিবারে কোনো কলহ ছিল না। সুন্দর সংসার ছিল। মঙ্গলবার তাদের মৃত্যুর ঘটনার খবর পেয়ে ভৈরবে এসে লাশ দেখলাম। আমার ধারণা, তাদের মৃত্যুর কোনো রহস্য আছে। তাই আমি থানায় হত্যা মামলা করেছি। ঘটনার রহস্য বের করে আইনিব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।

ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: শাহিন মিয়া জানান, ‘গতকাল লাশ উদ্ধার করে সকালে লাশের ময়নাতদন্ত করতে কিশোরগঞ্জ পাঠিয়েছি। এ ঘটনায় জনির মা অজ্ঞাত আসামি করে হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে আইনিব্যবস্থা নেয়া হবে।’

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসান চৌধুরী মোবাইলে জানান, ‘খবর পেয়ে আমি মঙ্গলবার রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্রতিবেশী ও স্থানীয়রা বলেছেন, জনি বর্মন নেশা করতেন গোপনে। তদন্তে সবকিছু বের হবে। ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে পুলিশ মাঠে নেমেছে। যত দ্রুত সম্ভব তাদের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন হবে।’


আরো সংবাদ



premium cement