৬০ বছরের সংসার, একই দিনে মৃত্যুর ইচ্ছা পূরণ হলো তাদের!
- এম মনিরুজ্জামান, রাজবাড়ী প্রতিনিধি
- ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১৮:২০
অনেক ভালোবাসা ছিল দম্পতির। ৬০ বছরের সংসার তাদের। ইচ্ছে ছিল, একই দিনে পৃথিবী থেকে বিদায় নেবেন তারা। আল্লাহ তায়ালা তাদের ইচ্ছে পূরণ করলেন। মাত্র ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন উভয়ে।
এমনই এক বিরল ঘটনা ঘটেছে রাজবাড়ী সদরের আলীপুর ইউনিয়নের আলাদিপুর এক নম্বর কলোনি গুচ্ছগ্রামে।
ওই দম্পতির ছেলে লতিফ শেখ বলেন, ৬০ বছরের সংসার জীবনে বাবা-মায়ের অনেক মিল ছিল। তাদের চাওয়া ছিল একইসাথে পৃথিবী থেকে বিদায় নেবেন। রাতে মায়ের মৃত্যুর খবর শুনে বাবা চিৎকার করে বলে ওঠেন, ‘তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেলে। আমিও তোমার কাছে আসতেছি।’ সকালে মায়ের লাশ দেখার আগেই বাবা পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন। সবাই আমার বাবা-মায়ের জন্য দোয়া করবেন।
জানাজায় অংশ নিয়ে আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু বক্কার ছিদ্দিক বলেন, ঘটনাটি বিস্ময়কর। স্বামী-স্ত্রীর একই দিনে স্বাভাবিক মৃত্যু তেমন দেখা যায় না।
এই গ্রামের ৬০ বছরের সংসার জীবনে সুখী দম্পতি আব্দুল কাদের শেখ (৮৫) ও জাহানারা বেগমের (৭৫) একই দিনে মৃত্যুর ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। তাদের পাশাপাশি দাফন হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে স্ত্রী জাহানারা বেগমের মৃত্যুর ১৩ ঘণ্টার ব্যবধানে বুধবার (২০ নভেম্বর) সকাল ৯টার দিকে মারা যান স্বামী আব্দুল কাদের শেখ।
আব্দুল কাদের শেখ আলাদিপুর এক নম্বর কলোনি গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। দুপুরে একসাথে জানাজা শেষে গুচ্ছগ্রামের পাশের কবরস্থানে পাশাপাশি দাফন করা হয় স্বামী-স্ত্রীকে।
স্বজনরা জানান, আব্দুল কাদের ও জাহানারা বেগম দম্পতির জীবদ্দশায় চাওয়া ছিল তাদের মৃত্যু যেনও একদিনেই হয়। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) বিকেলে আব্দুল কাদের ও তার স্ত্রী জাহানারা বেগমকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারা আলাদা অলাদা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
১৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জাহানারা বেগম। তার লাশ স্বামীর বাড়িতে না নিয়ে একই ইউনিয়নের ইন্দ্রনারায়ণপুর গ্রামে বাবার বাড়িতে নেয়া হয়। প্রথমে স্বামী আব্দুল কাদেরের কাছে গোপন রাখা হয় স্ত্রীর মৃত্যুর খবর। গভীর রাতে এ খবর জানতে পেরে ভেঙে পড়েন আব্দুল কাদের। রাতেই পরিবারের সদস্যদের অনুরোধ করে হাসপাতাল থেকে তিনি নিজ বাড়িতে চলে আসেন।
সকালে পরিবারের লোকজন আব্দুল কাদেরকে স্ত্রীর লাশ দেখানোর জন্য তার শ্বশুরবাড়ি ইন্দ্রনারায়ণপুর গ্রামে আনার প্রস্ততি নিচ্ছিলেন। এমন অবস্থায় স্ত্রীর লাশ দেখার আগেই সকাল ৯টার দিকে মারা যান আব্দুল কাদের। পরে তার লাশ স্ত্রীর কাছে নিয়ে আসা হয়। সেখানে স্বামী-স্ত্রীর গোসলসহ অন্যান্য ধর্মীয় কাজ শেষে দুপুরে তাদের লাশ আলাদিপুর এক নম্বর কলোনি হাফিজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানায় এনে জানাজা নামাজ পড়ানো হয়। এরপর আব্দুল কাদেরের বসতভিটা আলাদিপুর এক নম্বর কলোনি গুচ্ছগ্রামের পাশের কবরস্থানে পাশাপাশি কবরে দাফন করা হয়।
আব্দুল কাদেরের প্রতিবেশী খোরশেদ আলম বলেন, কাদের ভাই ও তার স্ত্রী বেঁচে থাকতে সব সময় কামনা করতেন একসাথেই যেন তাদের মৃত্যু হয়। তারা মরণেও পাশাপাশি কবরে থাকতে চেয়েছিলেন। অবশেষে অলৌকিকভাবে তাদের সেই ইচ্ছাই পূরণ হয়েছে। ১৩ ঘণ্টার ব্যবধানে তারা পৃথিবী ছেড়ে চিরবিদায় নিয়েছেন। আমি মনে করি যে এটা স্বামী-স্ত্রীর জন্য ভাগ্যের ব্যাপার। আল্লাহ তাদের বেহেশতবাসী করুন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা