১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

‘টাকা ছাড়া তো কেউ আপনার সাথে কথাই বলবে না এখানে’

‘টাকা ছাড়া তো কেউ আপনার সাথে কথাই বলবে না এখানে’ - ছবি : সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ভূমি অফিস। হাতের ফাইলে একগাদা কাগজ নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন সুমন আহমেদ। এটি তার ছদ্মনাম।

খোঁজ নিতেই জানা গেলো, সুমন আহমেদ এসেছেন তার পাঁচ শতাংশ জমির ‘খারিজ’ করতে।

কতদিন ধরে ঘুরছেন এমন প্রশ্নে মুচকি হাসেন সুমন আহমেদ।

‘বেশি না মাত্র পাঁচ মাস হইছে। অনেকে তো পাঁচ বছর ধরে শুনানির জন্য ঘুরতেছে, ডেট পায় না। কিন্তু আমি ডেট পায়া গেছি। এক সপ্তাহের মধ্যে খারিজ হয়ে যাবে,’ সুমনের জবাব।

কিভাবে শুনানির তারিখ পেলেন এমন প্রশ্ন করতেই আবারো মুচকি হাসেন সুমন।

‘টাকা দিয়া করছি’, তার সরল স্বীকারোক্তি।

‘শুনেন, টাকা ছাড়া কি কাজ হয়? দালাল ধরলাম। ওদের ভেতরে যোগাযোগ আছে। ৬০ হাজার টাকায় চুক্তি করছে। দুই মাস আগে ৩০ হাজার টাকা দিছি। এখন কাজের গতি দ্রুত হইছে। আজকে শুনানি দিয়া দিছে। এক সপ্তাহের মধ্যে খারিজও কইরা দিবে। তখন বাকি টাকা দিয়া দিবো,’ বলছিলেন সুমন আহমেদ।

নারায়ণগঞ্জের ভূমি অফিসে আর্থিক দুর্নীতির যে অভিযোগ তিনি করছেন, সেটা অবশ্য বিরল কোনো ঘটনা নয়। বরং বাংলাদেশের সেবাখাতগুলোতে দুর্নীতি-অনিয়মের এমন অভিযোগ বহু পুরনো।

কিন্তু বাংলাদেশে একটি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর যখন নুতন গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তার ১০০তম দিন পার করেছে, তখন মাঠ পর্যায়ে দুর্নীতি যে বন্ধ হয়নি নারায়ণগঞ্জের ঘটনাই তার একটা দৃষ্টান্ত।

কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই ১০০ দিনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঠিক কী পদক্ষেপ নিয়েছে সেটা একটা বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে।

ভূক্তভোগীদের কী অভিযোগ?
নারায়ণগঞ্জের ভূমি অফিসে সুমন আহমেদ বলছেন, তার ভাষায়, দালাল আর ভূমি অফিসের কিছু লোক মিলে এমন একটা চক্র তৈরি করেছেন, ঘুষ না দিলে কাজ করানো অসম্ভব।

ভূমি অফিসের মূল ভবনে আরো কিছু ব্যক্তিকে পাওয়া গেলো যারা শুনানির জন্য এসেছেন।

আর্থিক দুর্নীতিসহ অনিয়মের নানা অভিযোগ আছে তাদের অনেকেরই।

আশিকুর রহমান নামে কিশোরগঞ্জ থেকে আসা একজন জানাচ্ছেন, পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি তার মিসকেসের মামলা শুনানির জন্য তুলেছেন।

‘টাকা ছাড়া তো কেউ আপনার সাথে কথাই বলবে না এখানে। সুতরাং আপনার কি আর কোনো উপায় আছে? ভেবেছিলাম নতুন সরকার আসার পর এগুলো বন্ধ হবে। এরা আর সাহস পাবে না। কিন্তু চক্রটা ঠিকই কাজ শুরু করে দিয়েছে। দেখার কেউ নেই।’

কিন্তু এমন দুর্নীতি অনিয়ম কেন হচ্ছে এমন প্রশ্নে অবশ্য সম্প্রতি নিয়োগ পাওয়া রূপগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো: তারিকুল আলম জানাচ্ছেন, তার দায়িত্ব নেয়ার আগের কোনো অভিযোগের বিষয়ে তিনি অবগত নন।

‘আমি এখানে নতুন জয়েন করেছি। আমার কাছে যারা সেবা নিতে আসছেন, আমি চেষ্টা করছি তাদের সকলকে সচেতন করতে, সেবা দিতে। কেউ যদি এখানে অনিয়ম করে বা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ দেয়। তাহলে অবশ্যই তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে,’ বিবিসি বাংলাকে বলেন তিনি।

‘ব্যক্তি বদলেছে, সিস্টেম বদলায় নাই’
বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের সময়েও দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ ছিল। কিন্তু ওই সরকারের পতনের পরেও দৃশ্যত কোনো পরিবর্তন আসেনি। সরকার পতনের পর ক্রমেই দেশের বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি, দখলের মধ্য দিয়ে দুর্নীতি নতুন করে শুরু হয়।

পরে ধীরে ধীরে সরকারের মাঠপর্যায়ে সেবাখাতেও দুর্নীতির চক্র সক্রিয় হতে থাকে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, দুর্নীতি বন্ধ হয়েছে সেটা মোটেও বলা যাবে না।

‘এখানে ব্যক্তি বদলেছে, কিন্তু সিস্টেম বদলায় নাই। এটার সুযোগ নিচ্ছে অনেকে।’

তবে সরকারের উচ্চপর্যায়ে যে ধরনের দুর্নীতি হতো, যে ধরনের চক্র সেখানে কাজ করে, সেটা ‘ব্যাকসিটে’ আছে বলেই মনে করেন তিনি।

‘সরকারের উচ্চ পর্যায়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে যে দুর্নীতি, যেখানে আমলাতন্ত্র, ব্যবসা ও রাজনীতি এই ত্রিপক্ষীয় যে চক্র সেটি একেবারে ধসে পড়ে নাই। কিন্তু ব্যাকসিটে চলে গেছে।’

বাংলাদেশে সর্বশেষ শেখ হাসিনার সরকারে দুর্নীতি ছিল ব্যাপকভাবে আলাচিত বিষয়। তবে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পর মাঠ পর্যায়ে দুর্নীতি রোধে বড় কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। সরকারও দৃশ্যমান কিছু করতে পারেনি। বরং দুর্নীতি রোধে দুদকের যে ভূমিকা রাখার কথা সেটা আরো দুর্বল হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে, দুদক পুনর্গঠনে দেরিতে হাত দেয়া।

দুই সপ্তাহ ধরে দুদকের চেয়ারম্যান এবং কমিশনারবিহীন থাকায় সংস্থাটির কার্যক্রমও এখন স্থবির।

তবে সরকার ইতোমধ্যেই দুদককে শক্তিশালী করতে একটি কমিশন গঠন করেছে। কিন্তু সেই কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান জোর দিচ্ছেন দুদককে রাজনীতিমুক্তভাবে দ্রুত পুনর্গঠনের উপর।

সরকারের কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময় দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাদের শক্ত অবস্থানের কথাই জানাচ্ছেন।

যদিও এটাও ঠিক সামগ্রিকভাবে দুর্নীতি থামাতে সময় লাগে। কিন্তু এই সরকার কতদিন থাকবে সেটাই স্পষ্ট নয়। আবার মাঠপর্যায়ে দুর্নীতি ঠেকাতে যে ধরনের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ এবং কর্মদক্ষতা দরকার, একের পর এক ইস্যু নিয়ে ব্যতিব্যস্ত সরকার সেটাও দেখাতে পারেনি।
সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সমৃদ্ধ দেশ গড়তে আমরা প্রতিজ্ঞবদ্ধ : পরওয়ার সামরিক সহযোগিতা জোরদার করছে অস্ট্রেলিয়া-যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান প্রধান উপদেষ্টার পক্ষে সাড়ে ১৯ লাখ টাকার অনুদানের চেক গ্রহণ করলেন ত্রাণ উপদেষ্টা হাসপাতাল থেকে লাশের চোখ গায়েব, ইঁদুরকে দোষারোপ কর্তৃপক্ষের আ’লীগের মন্ত্রী-উপদেষ্টাসহ ১৪ জনকে তোলা হচ্ছে আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে এনে তার বিচার করতে হবে : সাবেক ডিআইজি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ জানাল বাংলাদেশ ব্যাংক ভোলায় সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু নিহত অক্টোবরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩৭৭ ‘মওলানা ভাসানী সব সময় ত্যাগের রাজনীতি করেছেন’ ১০০ দিনে ৮৬২৭৭ জনের কর্মসংস্থান করেছে অন্তর্বর্তী সরকার

সকল